ইউএনও ওয়াহিদাকে বিদেশ পাঠানোর প্রয়োজন নেই: স্বাস্থ্য ডিজি

প্রকাশিতঃ 3:42 pm | September 05, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলোঃ

জীবাণুর সংক্রমণ না ঘটলে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানম দ্রুত ভালো হয়ে উঠবেন বলে আশা করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

তিনি বলেছেন, তার রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়েছে। জ্ঞান ফিরেছে। একজন স্বাভাবিক মানুষের গ্লাসগো কোমা স্কেল (জিসিএস) ১৪-১৫ থাকে। জিসিএস ৮ এ নেমে এলে তাকে ক্রিটিক্যাল বলে ধরা হয়। কিন্তু ওয়াহিদার স্কোর ১৫ এর কাছাকাছি। আর ১৫ হচ্ছে একজন সাধারণ মানুষের নরমাল সিচুয়েশন। আশা করছি, জীবাণুর সংক্রমণ না হলে তিনি দ্রুত ভালো হয়ে উঠবেন।

‘তাকে এই মুহূর্তে বিদেশ পাঠানোর কোনো প্রয়োজন নেই। তবে তার মাথায় লোহার আঘাতের কারণে অপারেশন-পরবর্তী ইনফেকশনের ঝুঁকি রয়েছে। সেই ঝুঁকি বিবেচনায় সতর্ক রয়েছে চিকিৎসকরা।’

শনিবার(০৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে দশটার দিকে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্স হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ইউএনও ওয়াহিদার সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং তার চিকিৎসা সংক্রান্ত খোঁজখবর নেওয়ার পর সাংবাদিকদের এসব বলেন তিনি।

অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ওয়াহিদা খানমের স্বাস্থ্যগত উন্নতি ঘটছে তবে সতর্কতার সঙ্গে তাকে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্স হাসপাতালের নিউরো ট্রমা বিভাগের প্রধান নিউরো সার্জন ও গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন বলেন, সফলভাবে ওয়াহিদা খানমের অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে তবে রয়েছে সংক্রমণের ঝুঁকি সেজন্য নিয়োজিত বোর্ডের চিকিৎসকরা তাকে অবজারভেশনে রেখেছেন।

আগামীকাল রাতে তার অপারেশনের ৭২ ঘণ্টা অতিবাহিত হবে। পরশুদিন সকালে তার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে তাকে আইসিইউতে রেখে অবজারভেশনে থাকবেন নাকি বেডে স্থানান্তর করা হবে। এটা বলতে পারি যে তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।

তিনি বলেন, তার মাথার বাঁ দিকটা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডানপাশের কিছু অংশ প্যারালাইজড অবস্থায় আছে। তবে তিনি তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলেছেন। পরিচিতদের তিনি চিনতে পারছেন।

নিউরো ট্রমা বিভাগের প্রধান ও ওয়াহিদার মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান ডা. মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের পর্যবেক্ষণের জন্য ৭২ ঘণ্টা সময় লাগবে। ৭২ ঘণ্টা শেষ হলো আমাদের মেডিক্যাল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে। এছাড়া তাকে যে ধরনের অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে সেটা জীবাণুমুক্ত ছিল কিনা তা তো আমরা জানি না। এই মুহূর্তে বিষয়টি বলা কঠিন, ৭২ ঘণ্টা শেষ হলে বোঝা যাবে সেখানে ইনফেকশন হবে কিনা। যেহেতু তার শরীরে এখনও কোনও ইনফেকশনের নেই। তার মানে এই না যে আগামীতে হবে না।’

প্রসঙ্গত, বুধবার রাত আড়াইটার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনও’র সরকারি বাসভবনে ঢুকে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। প্রথমে গেটে দারোয়ানকে বেঁধে ফেলে তারা। পরে বাসার পেছনে গিয়ে মই দিয়ে উঠে ভেনটিলেটর ভেঙে বাসায় প্রবেশ করে হামলাকারীরা। ভেতরে ঢুকে ভারী ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং আঘাত করে ইউএনও ওয়াহিদাকে গুরুতর আহত করে তারা। এ সময় মেয়েকে বাঁচাতে এলে বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকে (৭০) জখম করে দুর্বৃত্তরা। পরে তারা অচেতন হয়ে পড়লে মৃত ভেবে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ভোরে স্থানীয়রা টের পেয়ে তাদের উদ্ধার করেন।

ওয়াহিদাকে প্রথমে রংপুরে ও পরে রংপুর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকায় আনা হয়। বর্তমান তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ইউএনও ওয়াহিদার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে তার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।

কালের আলো/বিএম/এসএম