উচ্ছ্বসিত তারকা শ্যুটাররা, নতুন সভাপতি আতাউল হাকিমের তিন ‘চ্যালেঞ্জ’

প্রকাশিতঃ 9:50 am | September 23, 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
সময়োপযোগী একটি সিদ্ধান্তেই অস্থির শ্যুটিং অঙ্গণে প্রাণ ফিরিয়ে এনেছে সরকার। শ্যুটিং ফেডারেশনের নতুন সভাপতি মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসানের ছোঁয়ায় নতুনভাবে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছেন জাতীয় তারকা শ্যুটাররাও। উৎফুল্ল-উচ্ছ্বসিত শ্যুটাররা ফুলের ভালোবাসায় বরণ করেছেন নিজেদের এ অভিভাবককে।

তাদের থেকে শুরু করে সবার মুখেই দীর্ঘদিনের অদেখা প্রাণখোলা হাসি। সব জীর্ণতা-শীর্ণতা মুছে নতুন উদ্যম আর ছন্দে উদ্ভাসিত হওয়ার ‘স্বপ্ন’ দেখাচ্ছেন এ সামরিক কর্মকর্তা। দায়িত্ব নিয়েই পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার করণীয় ঠিক করতে সহকর্মীদের সঙ্গে তিনি বিস্তারিত আলোচনা সেরেছেন।

আরও পড়ুনঃ শুটিং’র নতুন সভাপতি মেজর জেনারেল আতাউল হাকিমের ‘টার্গেট’ টোকিও অলিম্পিক

শ্যুটিংয়ে সুদিন ফেরানো, সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক অনতিবিলম্বে নির্বাচন আয়োজন ও শ্যুটারদের অস্ত্র জটিলতার নিরসন-এমন গুরুত্বপূর্ণ তিন ‘চ্যালেঞ্জ’ নিয়েছেন শ্যুটিং ফেডারেশনের নতুন অ্যাডহক কমিটির এ সভাপতি।

দেশের শ্যুটিং অঙ্গণকে প্রাণময় স্পন্দনে জাগিয়ে তোলার পথ প্রশস্ত করতে মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান তিন স্তরের উন্নয়ন পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছেন। ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে সাফল্য নিশ্চিত করতেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

আরও পড়ুনঃ শুটিংকে ঘুরে দাঁড় করাতে মেজর জেনারেল আতাউল হাকিমের কাঁধে দায়িত্ব

স্থবিরতা কাটিয়ে স্বর্ণালী ভবিষ্যতের হাতছানি
নানা কারণে চরম স্থরিবতা বিরাজ করছিল দেশের শ্যুটিং ফেডারেশনে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এবং অতীতের ব্যর্থতা ভুলে শ্যুটিংয়ের স্বর্ণালী সময় ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ নির্বাচিত কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে, শ্যুটিং ফেডারেশনের নতুন অ্যাডহক কমিটি গঠন করে। গত রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করে এনএসসি।

শ্যুটিং ফেডারেশনের টালমাটাল অবস্থা কাটিয়ে সম্ভাবনাময় খেলাটির উজ্জ্বল ভবিষ্যত বিনির্মাণে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফশনালস ( বিইউপি)-এর ভাইস চ্যান্সেলর মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসানের কাঁধে। এরপর তিনি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালেই দেশের শ্যুটিংকে এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার করেন শ্যুটিং ফেডারেশনের নতুন অ্যাডহক কমিটির এ সভাপতি। নিজের দায়িত্ব গ্রহণের দ্বিতীয় দিনেই মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) শ্যুটিং ফেডারেশনে বসেন নির্বাহী কমিটির সভায়।

শ্যুটিং রেঞ্জে নতুন সভাপতির প্রথম আগমনে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন শ্যুটাররা। নতুন সভাপতি ঘুরে দেখেন শ্যুটারদের অনুশীলন ও আবাসনের ব্যবস্থা। করেন সংবাদ সম্মেলনও। সেখানেই নিজের বড় রকমের স্বপ্নের কথা জানান চির স্বপ্নবাজ এ মানুষটি।

বলেন, ‘দেখুন, শ্যুটিং আমাদের জন্য একটা গর্বের জায়গা। এই ইভেন্ট থেকে বিদেশ থেকে সর্বোচ্চ সাফল্য এসেছে। এ অবস্থায় আমাদের শর্ট টার্ম প্ল্যান, অলিম্পিকের জন্য শ্যুটারদের তৈরি করতে যা যা প্রয়োজন, করবো।’

শাকিল-বাকি-অর্নব-রাব্বী ও দিশাদের রেঞ্জে ফেরাতে সভাপতি মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান আরও বলেন, ‘অস্ত্র নিয়ে যে সমস্যা ছিল, সেটা দ্রুততার মধ্যে সমাধান করব। শ্যুটিং মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। আন্তর্জাতিক মানে যেতে হলে প্রথাগত ধ্যান ধারণার বাইরে গিয়ে ভাবতে হবে।

ট্যালেন্ট হান্ট করতে চাই আমরা। ক্লাবগুলোর উন্নতির এবং শ্যুটারদের জন্য উন্নত অস্ত্র আনার চেষ্টা করবো। সরকারের সহায়তা পেলে শ্যুটিং নিয়ে আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবো।’

শুটারদের নতুন অভিভাবক আরও বলেন, ‘শুটিং খেলা থেকেই এসেছে দেশের সর্বোচ্চ সাফল্য। ইতিপূর্বে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের অবদানের জন্যই আমরা এখানে আসতে পেরেছিলাম। প্রথম সভায় আমরা তিনরকম পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছি। এর মধ্যে আমাদের প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে টোকিও অলিম্পিকের জন্য শ্যুটারদের প্রস্তুত করা।’

অলিম্পিক প্রস্তুতিতে দ্রুতই বিদেশী কোচ নিয়োগ দিতে চান শ্যুটিং ফেডারেশনের নতুন অ্যাডহক কমিটির সভাপতি। একই সঙ্গে দেশে-বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণের কার্যকারিতা নিয়েও আলোচনা করেছেন তিনি। এ সভাতে স্থানীয় ক্লাব ও বিকেএসপি’র শ্যুটিং সুবিধার উন্নয়ন নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

নতুন সভাপতিতে উচ্ছ্বসিত শ্যুটাররা
বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে এখন পর্যন্ত অন্যতম সেরা সাফল্য এসেছে শ্যুটিং ইভেন্টের হাত ধরে। ১৯৯০, ৯৭, ২০০২ এবং ২০১০ কমনওয়েলথ গেমসে, এই ইভেন্টেই স্বর্ণ জেতেন লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।

শ্যুটিংয়ের হাত ধরেই ২০১০ এসএ গেমসেও এসেছে স্বর্ণ পদক। এবারের মিশন ২০২০ টোকিও অলিম্পিক-এ লক্ষ্যেই শুরু থেকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন শ্যুটিং ফেডারেশন সভাপতি।

নতুন সভাপতি পেয়ে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন কমনওয়েলথ গেমসে রুপা জয়ী শ্যুটার আব্দুল্লাহ হেল বাকী। উচ্ছ্বসিত এ শ্যুটার বলেন, ‘আমরা এখন চাপমুক্ত হয়ে অনুশীলন করতে পারবো। খেলতে পারবো। এতেই অনেক ভালো লাগছে।

এছাড়া আমরা যখন শ্যুটিংয়ে ছিলাম তখন সভাপতি আমাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছেন। বলেছেন, ইতোমধ্যেই তিনি লোক পাঠিয়েছেন, আজ-কালকের মধ্যে অস্ত্রগুলো ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া যাবে বলেও আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’

শিগগির এয়ার রাইফেল ও পিস্তলে বিদেশী কোচ আনছে ফেডারেশন। বাকীর ভাষ্য হচ্ছে, ‘নতুন নেতৃত্ব আমাদের সঙ্গে বসেছিলেন। বিদেশি কোচের ৪-৫ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে থেকে সম্ভবত দু’জনকে বেছে নেওয়া হবে। এই শর্টলিস্ট করার পেছনে সাবেক কোচ ক্লাভস ও কিম সহায়তা করেছেন।’

আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আগের ফর্মে ফেরার লক্ষ্য স্থির করা বাকী আরও বলেন, ‘অনেক ভালো সম্ভাবনা আছে ঘুরে দাঁড়ানোর। কারণ এ মুহূর্তে শুটারদের ওপর কোনও রকম মানসিক চাপ নেই। অনেকদিনের একটা বিরতি গেছে। এ কারণে মানিয়ে নেওয়া সমস্যা। তবে আগের রাইফেলটা দিয়ে যদি আমরা শুরু করতে পারি, তাহলে আশা করি ৫-৬ মাসের মধ্যে মানিয়ে নিতে পারবো।’

উল্লসিত আরেক শ্যুটার শারমিন আক্তার রত্না বলেন, ‘নতুন সভাপতি আমাদের সহজেই আপন করে নিয়েছেন। এমনই একজন অভিভাবক খুঁজছিলাম আমরা। সরকার আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করেছে। এটি আমাদের হতাশার বৃত্ত থেকে বের করে এনেছে।

আমরা জেনেছি বিকেএসপি থেকে শুটারদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। অলিম্পিকের ছয়জন এখন থেকে ফেডারেশনের রেঞ্জেই অনুশীলন করবে।’

কালের আলো/এআরএফ/এমএ