কার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও আইজিপি’র কড়া বার্তা
প্রকাশিতঃ 11:23 am | August 06, 2018
অ্যাক্টিং এডিটর, কালের আলো :
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে দীর্ঘদিন রাজধানীর উত্তরায় থেকেছেন ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী (বিপিএম) বার। ওই সময়ই দেখেছেন ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জনমানসে সচেতনতার অভাবের বিষয়টি।
উদাহরণ দিতে গিয়ে পুলিশ প্রধান একবার কালের আলোকে বলেছিলেন, ‘অনেক বছর উত্তরায় ছিলাম। বিমানবন্দর ক্রসিং থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে একটি ফুট ওভারব্রিজ রয়েছে। উঠানামার জন্য সেখানে আছে চলন্ত সিঁড়িও।
দিনের পর দিন দেখেছি সেই ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত পথচারীরা। ট্রাফিক সিগনালেরও তোয়াক্কা না করে চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়েও পার হতে দেখা যায় অনেককে।’
কার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলতে সকলের আইন মানার মানসিকতার অধিকারী হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে পুলিশের এই সর্বোচ্চ কর্মকর্তার ভাষ্যে।
রোববার (০৫ আগষ্ট) ট্রাফিক সপ্তাহ শুরুর দিনেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের উপস্থিতিতে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের দেশে আইন না মানার সংস্কৃতি প্রবল। আমরা ফুটপাত দিয়ে চলি না। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করি না। কেউই আমরা আইন মানার চেষ্টা করি না। এসব নিয়ন্ত্রণ করতেই ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু করা হয়েছে। আইন মানলে দেশে এতো দুর্ঘটনা ঘটত না।’
কালের আলোকে সাক্ষাতকারে আইজিপি ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশে যে হারে প্রতিদিন রাস্তায় নতুন নতুন যানবাহন নামছে, সেই তুলনায় নতুন সড়ক গড়ে ওঠেনি। প্রতি এলাকার রাস্তার ধারণক্ষমতা রয়েছে।’
সাক্ষাতকারে উন্নত দেশের উদাহরণ টেনে তিনি বলেছিলেন, ‘সিঙ্গাপুর ও ভারতে একজনের কয়টি গাড়ি থাকতে পারবে সেটা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। সেখানে পুরাতন গাড়ি সরে গেলে নতুন গাড়ির রেজিষ্ট্রেশন এক্সেস পাচ্ছে। অথচ আমাদের এখানে প্রতিদিন বিআরটিএ থেকে শত শত গাড়ি রেজিষ্ট্রেশন নিচ্ছে।’
এই প্রসঙ্গে নিজের বক্তব্যের স্পষ্ট একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন পুলিশ প্রধান। ‘বাংলাদেশে চলাচলের জন্য যতটুকু রাস্তার প্রয়োজন ততটুকু রাস্তা নেই। একটি দেশের সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নির্ভর করে চারটি ‘ই’র ওপর।
ট্রাফিক এডুকেশন, ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ট্রাফিক এনভায়রনমেন্ট ও ট্রাফিক ইনফোর্সমেন্ট। যা আমাদের দেশে সঠিকভাবে নেই। সবাই পুলিশকে নিয়ে কথা বলে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় পুলিশ শুধু এনফোর্সমেন্ট করে থাকে।’
আইজিপি ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বুঝাতে চেয়েছেন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও সড়কের শৃঙ্খলা পুরোমাত্রায় ফিরিয়ে আনতে হলে এই ‘ফোর ই’র সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং’র দায়িত্বে রয়েছে সড়ক বিভাগ ও মন্ত্রণালয়। ষোল কোটির বাংলাদেশে এখনো এখনো ট্রাফিক এডুকেশনের অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ট্রাফিক এডুকেশন রয়েছে।
এই ‘ফোর ই’র কারণেই রাজধানীতে ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা বলেও ট্রাফিক সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন তিনি। আইন মেনে চলতে বাধ্য করার জন্য আইন তৈরি হয় না এমনটি জানিয়ে জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘আইন তৈরি হয়, সবাই মেনে চলবে।
আর দুই-একজন ভায়োলেন্ট করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু আমাদের দেশে বাধ্য করে সবাইকে আইন মানাতে হয়।’
সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ট্রাফিক আইন নিশ্চিত করার কথা জানিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক একটি কড়া বার্তাও দিয়েছেন।
‘লাইসেন্স ছাড়া কাউকে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় চলতে দেওয়া হবে না’ উল্লেখ করে বলেছেন, ‘পুলিশ এবার শক্ত অবস্থানে থাকবে। কাউকে ছাড় দেবে না। শুধু ঢাকাতেই নয় বরং সারাদেশে এটা কার্যকর করা হবে।’
সড়কে যাতে একটি সুশৃঙ্খল পরিবেশ ফিরতে পারে সেজন্য পুলিশকে সহযোগিতা করারও আহবান জানান তিনি।
আইন মানার মানসিকতা নিয়ে রাস্তায় বের হওয়ার আহবান জানিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেছেন, ‘আমরা যখন বিদেশ যাই তখন ঠিকই আইন মানছি। সেই আমরাই আবার যখন দেশে ফিরছি, তখন আবারও আইন অমান্য করছি। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
ফিটনেস, রুট পারমিট, রেজিস্ট্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত কোন গাড়ি রাস্তায় চলতে দেয়া হবে না। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে, যোগ করেন তিনি।
কালের আলো/এসটি/এএ