বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী অর্পণা ভৌমিক অপু

প্রকাশিতঃ 10:02 am | August 29, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
ময়মনসিংহের গৌরীপুরের মেয়ে অর্পণা ভৌমিক অপু। বৈবাহিক সূত্রে থাকেন ভারতের শিলিগুড়িতে। নিজের দুরন্ত শৈশব কৈশোর কেটেছে মাতৃভূমি বাংলাদেশেই। প্রতিবাদী স্বভাবের অপু আদতে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। অর্থাৎ, ভার্সেটাইল জিনিয়াস বর্ন। নিজে যেমন নাটক রচনা ও পরিচালনা করতে পারেন তেমনি ইয়োগা কন্যা হিসেবেও স্বনামে খ্যাত তিনি। গান-কবিতাতেও তুলনাহীন। স্বাচ্ছন্দ্যে চালাতে পারেন বাইক। সম্ভবত শিলিগুড়িতে তিনিই প্রথম নারী বাইকার।

সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে কথা বলে দেশের জনপ্রিয় গণমাধ্যম কালের আলো। তাঁর সঙ্গে আলাপ তুলে ধরা হলো দুই কিস্তিতে। আজ প্রকাশিত হলো প্রথম কিস্তি।

অপর্ণা ভৌমিক অপু নিজের শৈশব জীবনের কাহিনী তুলে ধরে কালের আলোকে বলেন, ‘শৈশবে খুব দুরন্তপনায় মেতে থাকতাম আমি। আমার মা বলতেন, তুই মেয়ে হয়ে কেনো জন্মালি। সৃষ্টিকর্তা ভুল করে তোকে মেয়ে বানিয়েছেন। গাছে চড়া, ভর দুপুরে পুকুরে সাঁতরে বেড়ানো, বড়শিতে মাছ ধরা, মাঠে ফুটবল খেলা, পুকুরের ধারের আম গাছটার মগডাল থেকে পুকুরে ঝাঁপ দেওয়া এসব ছিলো আমার ভীষণ প্রিয়। এখনো বাংলাদেশে গেলেই দলবল (বাচ্চাদের) নিয়ে নেমে পরি’ বলতে থাকেন অপু।

এই লাস্যময়ী বলেন, ‘আমার মা যখনি বলতেন এসব মেয়েদের করতে হয়না। তখনই আমার অবচেতন মন বলে উঠত কেনো নয়? ওদের (ছেলেদের) জন্য এক নিয়ম আমাদের (মেয়ে) জন্য অন্য নিয়ম কেনো হবে? সেই থেকেই শুরু হয় নীরব প্রতিবাদ। রাস্তাঘাটে ছেলেদের ইভটিজিং’র প্রতিবাদ করতাম চোখে চোখ রেখে। বুঝাতামও অনেক ছেলেকে। প্রপোজ করলে বলতাম, নিজে তৈরি হও, আমার মা বাবাই তোমাকে খুঁজে বের করে আমাকে বিয়ে দেবে তোমার সাথে।’

স্বামী-সংসারের কারণে নিজের মাতৃভূমি থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করলেও তাঁর হৃদয়তন্ত্রিতে গাঁথা জন্মভূমি’র কথা। অপু নিজেই বলেন, ‘বাংলা মা আমাকে খুব টানে। তাই মাঝে মাঝেই চলে আসি গৌরিপুর। এ যেন দায়িত্ববোধ। মা কে দেখতে আসা, তাঁর খোঁজ খবর নেওয়া। আমার বাংলা মা আর আমার শৈশবকাল, কৈশোর আর যৌবনকাল।’

‘ইয়োগা কন্যা’ হিসেবে শিলিগুড়িতে সবাই অপু ভৌমিককে এক নামেই চিনেন। অপু বলেন, ‘আমার সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো যোগ সাধনা। শিলিগুড়িতে আমার চারটি যোগ সেন্টার রয়েছে। আমি এই কাজটিকে খুব গুরুত্ব দেই। সুস্থ দেহ, সুস্থ জীবনের কোন বিকল্প নেই, হতেও পারেনা। অসুস্থ মায়েরা, শিশুরা যখন যোগ সাধনার মাধ্যমে সুস্থতা অনুভব করে আমার মধ্যে এক প্রশান্তি কাজ করে।

যোগ সাধনার শুরুর গল্প বলতে গিয়ে অপু বলেন, আমার ছেলের চারবার অপারেশন হয়েছিল। জন্মগতভাবেই তাঁর লিভারের সমস্যা। বাংলাদেশে ভুল চিকিৎসায় যে কিনা মরতে বসেছিলো। মেডিকেল ট্রিটমেন্টেও ও কোন কাজ হচ্ছিলো না। তখন আমি ওকে ইয়োগা করতে অভ্যস্ত করে তুলি। আস্তে আস্তে ও সুস্থ হয়ে ওঠে।’

সম্প্রতি অপু’র রচনা ও পরিচালনায় শিলিগুড়িতে জনপ্রিয়তা পেয়েছে নাটক ‘দায়বদ্ধতা’। উচ্ছ্বসিত অপু বলেন, শিলিগুড়িতে প্রথম কোন নারী হিসেবে আমি নাটক পরিচালনা করেছি। নাটকের পর পরই অন্যান্য নাট্য দল থেকে কমপক্ষে ৫০ জন ফোন করে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তাদের ভালোবাসায় আমি অভিভূত।’

কালের আলো/এএম/এএ