লকডাউনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ ডিজির
প্রকাশিতঃ 2:06 pm | December 23, 2020
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
করোনার সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হওয়ায় উদ্বিগ্ন গণমাধ্যমকর্মীদের মাঝে লকডাউনের কানাঘুষা চলছিল। চ্যানেল টোয়েন্টিফোর’র সাংবাদিক জিনিয়া কবির সূচনা এ বিষয়ে সোজা সাপ্টা প্রশ্ন করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেককে। কিন্তু মন্ত্রী লকডাউনের সম্ভাবনার বিষয়টি উড়িয়ে দিলেন। বললেন, দেশে লকডাউনের কোন পরিবেশ হয়নি।
তিনি বলেন, আমাদের অক্সিজেন সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই, তবে আমাদের একটা অক্সিজেন কারখানা বন্ধ থাকায় ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি অব্যাহত রেখেছি। পুনরায় কারখানা চালু না হওয়া পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
বুধবার(২৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে ‘জিন এক্সপার্ট মেশিন ও মোবাইল ল্যাবরেটরি’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত বেড রয়েছে, তবে যদি তা বাড়ানোর প্রয়োজন হয় তাহলে আমরা সংখ্যা আরও বাড়াবো। তবে এখন পর্যন্ত দেশের পরিস্থিতি দেখে বলা যায় করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে বলেই দেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থায় রয়েছে। পোশাক খাত চালু আছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুন্দর আছে।’
দেশের নানা উন্নয়ন সংস্থা, বেসরকারি সংস্থাসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতার করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সবার সহযোগিতা নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি এবং চিকিৎসায় এগিয়ে যাচ্ছি। নতুন নতুন উন্নয়ন হচ্ছে চিকিৎসা খাতে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড চিকিৎসায় প্রথমেই টেস্ট করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুরুর দিকে দেশে মাত্র একটি আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরি ছিল। সেখান থেকে বর্তমানে ১১০টির বেশি ল্যাব রয়েছে। পাশাপাশি আরও আধুনিক টেস্টের জন্য অ্যান্টিজেন এবং জিন এক্সপার্টের মাধ্যমে শুরু করা হয়েছে কয়েকটি জেলায়। অ্যান্টিজেন টেস্ট সব জেলাতেই করা হবে। একইসঙ্গে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় জিন এক্সপার্ট মেশিন রয়েছে, যেটা টিবি (যক্ষ্মা) শনাক্তের কাজে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে ৩৩টি জিন এক্সপার্ট মেশিন করোনা শনাক্তের কাজে ব্যবহার হচ্ছে। ভবিষ্যতে যদি প্রয়োজন হয় আরও বাড়ানো হবে।’
পরীক্ষা পদ্ধতির তালিকাতে আরেকটি সংযোজন হলো জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজ ভ্রাম্যমাণ আরটি-পিসিআর মোবাইল ল্যাব উদ্বোধন করা হলো। আপাতত হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টিনে থাকা যাত্রীদের জন্যই এই ভ্রাম্যমাণ ল্যাব কাজ করবে। তবে যেখানে ল্যাব নেই সেখানেও এটি নিয়ে যাওয়া যাবে এবং দ্রুত পরীক্ষা সম্ভব হবে।’
তিনি জানান, নমুনা দেওয়া ব্যক্তি পরীক্ষার ফলাফল অনলাইনে জানতে পারবেন। জরুরি প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পাঞ্চলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করবে এই ল্যাব। এখানে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার পরীক্ষা করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি। এই ভ্রাম্যমাণ ল্যাব বায়ো সেইফটি লেভেল-২ মানসম্পন্ন।
আশকোনা হজ ক্যাম্পে স্থাপন করা জিন এক্সপার্ট ল্যাবে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের কোভিড-১৯ আছে কিনা তা জানতে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হবে বলেও বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। কিন্তু সব হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ছিল না। বর্তমানে ৭৮টি নতুন সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করা হয়েছে।’
বাংলাদেশে করোনা এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গত মাসে মৃত্যুর হার একটু বেড়েছে। তবে এখন মৃত্যুর হার, সংক্রমণ হার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সুস্থতার হার বেড়েছে। নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে সামাজিক দূর। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আর কেউ অসুস্থবোধ করলে টেস্ট করে তাকে চিকিৎসা নিতে হবে।’
দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়াদের মধ্যে অধিকাংশই ষাটোর্ধ্ব মন্তব্য করে তিনি বলেন, ষাটোর্ধ্বদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে এবং অসুস্থ হলেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
সেনাবাহিনীকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির ধন্যবাদ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘আমাদের এই হজক্যাম্প এবং দিয়াবাড়ি এ দু’টি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে এখন পর্যন্ত ৬০০ থেকে ৬৫০ যাত্রী কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এই যে একটা বড় বার্ডেন যেটা সরকারের পক্ষ থেকে আমরা খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছু করছি সেটা কমানোর জন্যই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় আমাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন সেজন্যে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। তখন তার নির্দেশেই আমরা এই জিনিসটা শুরু করেছিলাম।
তিনি বলেন, ‘আমরা টেস্ট করে সেই কোয়ারেন্টাইনে থাকা যাত্রীদের সংখ্যা কমিয়ে এনেছিলাম। এবং আমরা আজ সক্ষমতার সাথেই কোয়ারেন্টাইনে থাকা যাত্রীদের সংখ্যা কমিয়ে আনতে পেরেছি।’
সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘সেনাবাহিনীর টিম অকুণ্ঠভাবে আমাদেরকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন এবং তাদের সহযোগিতা ছাড়া আমরা এই যে শৃঙ্খলা এবং নিয়মানুবর্তিতা সেটা মেইনটেইন করতে পারতাম না। আজকে যে টেস্টগুলোর উদ্বোধন হলো সেগুলো দিয়ে আমরা আশা করছি বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে নির্দেশ অপচয় রোধ করা, এর মধ্য দিয়ে আমরা কিন্তু সে অপচয় অনেকটাই রোধ করতে পারব। আমরা তার নেতৃত্বেই করোনার প্রথম থেকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম এবং আশা করছি বাকি দিনগুলোতেও আমরা সফল হবো। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে আমরা এই কাজগুলোই যদি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে পারি সেটাই হবে দেশের জন্য বড় প্রতিদান এবং দেশপ্রেমের বড় পরিচয়।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আর্মি কোয়ারেন্টাইন ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফ, হজ ক্যাম্প কোয়ারেন্টাইন ইনচার্জ মেজর মোস্তফা, ডিএমআর ল্যাব প্রধান ফয়জুর রহমান প্রমুখ।
কালের আলো/এসবি/এমআরকে