জুজুর ভয়েই কী নৌকা ঠেকাতে চান এমপি কিরণ?
প্রকাশিতঃ 10:50 pm | January 29, 2021

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
আর মাত্র একবার বিজয়ী হলেই ‘হ্যাট্টিক’ মেয়র হবেন আক্তার হোসেন ফয়সাল। আর এ ‘ল্যান্ডমার্ক’ স্পর্শ হলেই সামনে সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ‘হাতছাড়া’ হতে পারে সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণের। এমন সমীকরণ মিলিয়েই কীনা নিজের দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে রীতিমতো ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করে বসেছেন এ সংসদ সদস্য!
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত বড় ভাই খালেদ সাইফুল্লাহকে বিদ্রোহী প্রার্থী করেছেন। অন্তত ভাই না জিতলেও ‘নৌকা’ হারবে এবং ‘ধানের শীষ’ জিতবে। পথের কাঁটাও দূর হবে-সম্ভবত এমন হিসাব-নিকাশ কষেই নিজের স্ত্রীকেও বিদ্রোহী বড় ভাইয়ের পক্ষে প্রচারণায় নামিয়েছেন।
এমপি পত্নী জেসমিন আক্তার তার ভাশুর সাইফুল্লাহর পক্ষে মোবাইল ফোন প্রতীকে পক্ষে ভোট চাচ্ছেন-এমন ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেই প্রশ্নে জোরালো কোন উত্তর নেই এমপি মামুনুর রশীদ কিরণের।
দলের বর্ধিত সভায়, ‘নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে কেউ যাবেন না’ এমন দায়সারা বক্তব্যের যুক্তি টেনে গণমাধ্যমকর্মীদের ঝাঁঝালো প্রশ্নের উত্তর দিতে কী প্রাণান্তকর প্রচেষ্টাই না চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এ আহ্বান না মানার কারণে এবার বিচারের কাঠগড়ায় নিজের স্ত্রীকে এমপি কিরণ শেষ পর্যন্ত দাঁড় করাবেন কীনা এমন সব প্রশ্নও বড় দাগে উঠে এসেছে সচেতন মহলের কন্ঠে।
ভোট শুরুর মাত্র ১০ ঘন্টা আগে এমন জটিল বাস্তবতার মুখে দাঁড়িয়ে নোয়াখালীর চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র নির্বাচন। স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলটির নেতা-কর্মীদের এমন অভিযোগে আগামী শনিবারের (৩০ জানুয়ারি) সকালে ভোটের মূল স্পটলাইট থাকবে এ পৌরসভাই।
এ বিষয়ে বেগমগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর ছিদ্দিক টিপু বলেন, ‘তৃণমূল নেতা-কর্মীরা মনে করেন এমপি মামুনুর রশিদ কিরণ সাহেব আসলেই চান না নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিতুক। তিনি বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে এখানে পৌরসভা ভোটে তার ভাইকে সাহায্য করছেন। যা আওয়ামী লীগের জন্য বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।’
অবশ্য ভোট বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আক্তার হোসেন ফয়সালের টানা দু’বার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ডই জানান দিচ্ছে-ভোটের মাঠে তিনি নীরব ফ্যাক্টর। বছরের বারো মাস স্থানীয় চৌমুহনী পৌরবাসীর আপদে-বিপদে পাশে থাকার মানসিকতাই ভোটের মাঠে তাকে এগিয়ে রেখেছে যোজন যোজন।

তাকে হারাতে সব রকমের কূটকৌশলকে সমুচিত জবাব দিতেই মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের প্রতিটি সাধারণ মানুষ, সচেতন সাধারণ ভোটার ও আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা উন্মুখ হয়ে আছে। নীরব ভোট বিপ্লবের মাধ্যমেই ভোটারদের রায়ে শেষ হাসি হাসবেন শেখ হাসিনার মনোনীত আক্তার হোসেন ফয়সালই।
এসব বিষযে নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরণের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
নিজের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী চৌমুহনী পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী আক্তার হোসেন ফয়সাল কালের আলোকে বলেন, ‘এমপি সাহেব তার পরিবারের সদস্যের জন্য মনোনয়ন চেয়েছেন, কিন্তু সেটা না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে তার বড় ভাইকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করে প্রার্থী দেয়া ও তার পক্ষে উপজেলা মহিলা লীগ নেত্রী এমপি পত্নীর প্রচার চালানো আওয়ামী লীগের দলীয় শৃঙ্খলার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এতো কিছুর পরেও এমপি সাহেব আমার বিজয় ঠেকাতে পারবেন না। দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা নৌকার বিজয় নিশ্চিতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। স্থানীয় সাধারণ মানুষের ভালোবাসার শক্তিতেই আবারও জিতবে নৌকা।’
কালের আলো/ডিএস/এমএইচএ