স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে অবিস্মরণীয় এক মাইলফলক ‘স্বাধীনতা সড়ক’
প্রকাশিতঃ 9:50 pm | March 20, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
ঠিক ৫০ বছর আগে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরের আম্রকাননে রচিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন ইতিহাস। পাকিদের হাতে বন্দি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক করে গঠিত হয়েছিল প্রবাসী বিপ্লবী সরকার। বিশ্ব মানচিত্রে ঠাঁই করে নিয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের নাম।
কিন্তু ভারতের কলকাতা থেকে নদীয়া হয়ে সেদিন যে সড়ক দিয়ে মেহেরপুর মুজিবনগরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে এসেছিলেন দেশের প্রথম সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতা, মন্ত্রীপরিষদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্টজন এবং দেশী বিদেশী অসংখ্য সংবাদকর্মী। অবশেষে সেই স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণে এবার নেওয়া হয়েছে কার্যকর এক উদ্যোগ।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় স্বাধীন বাঙালি জাতির ঐতিহাসিক অধ্যায়কে নবপ্রজন্মের মাঝে চির জাগরূক করে রাখতে নির্মাণ করছে ‘স্বাধীনতা সড়ক।’ বিবর্ণ-মলিন চেহারা মুছে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মেহেরপুরের মুজিবনগরে ঐতিহাসিক স্বাধীনতা সড়ক নির্মাণ কাজও শেষ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। নির্মিত এই সড়কের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনার স্থানীয় মানুষজনও হয়ে উঠেছেন আবেগ উদ্দীপ্ত।
ঝড়ের ভেতরে বিকশিত অটল বৃক্ষের মতোই মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের এই জীবন্ত প্রতীক স্বাধীনতা নামের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ প্রচন্ডভাবে যেন ঝাঁকি দিয়েছে নিজেদের রক্তে, শাণিত করেছে নবতর এক চেতনায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মুজিবনগরের স্মৃতি রক্ষার্থে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করতে ঐতিহাসিক স্বাধীনতা সড়কটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার। একই সঙ্গে নিজেদের আত্নপরিচয়কে ইতিহাসের আলোকেই খুঁজে বের করার ব্রত নিয়ে বিস্মৃতির মহাকাব্যকে নতুন করে রাঙাতেই পরিকল্পিতভাবেই এই উদ্যোগের বাস্তবায়ন করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো.তাজুল ইসলাম এমপি।
মেহেরপুরের মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত নির্মিত এই স্বাধীনতা সড়কটিকে বাংলাদেশ এবং ভারতের মাঝে সম্পর্কের ‘সেতুবন্ধন’ হিসেবে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। শনিবার (২০ মার্চ) সকালে তিনি মেহেরপুরে মুজিবনগরে নির্মিত ‘স্বাধীনতা সড়ক’ পরিদর্শনে শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এমন মন্তব্য করেছেন।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের দুঃসময়ে ভারত বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে সাহায্য এবং সহযোগিতা করায় দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ দুর্বার গতিতে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আগামী শুক্রবার (২৬ মার্চ) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সফরে আসবেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ সময় সড়কটির উদ্বোধন করবেন বলেও জানিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
বাঙালি জাতির স্মৃতি ও আবেগের এই সড়কটির নির্মাণ কাজ বেশ কয়েক দফা পরিদর্শন করেছেন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি এই সড়কের নির্মাণ কাজ শুরুর কথা জানিয়ে পরিদর্শনে এসে মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে তারা স্বাধীনতার অনেক স্মৃতিবিজড়িত স্থানকে সমর্থন করেনি।
তেমনিভাবে এটাও অবহেলিত ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যেমনিভাবে সম্মান করা হচ্ছে তেমনিভাবে যুদ্ধকালীন স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোকেও সংরক্ষণ করা হচ্ছে।’

পরের মাসের ১৪ ফেব্রুয়ারি সড়কটি পুনরায় পরিদর্শন করে এর কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেয়ার কথা উল্লেখ করেছিলেন মন্ত্রী। এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যেই এই সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ করায় শনিবার (২০ মার্চ) সকালে একই সড়ক পরিদর্শন করে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান।
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলী মো.আব্দুর রশীদ খান কালের আলোকে বলেন, ‘মাননীয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো.তাজুল ইসলামের সার্বিক দিক নির্দেশনায় দিন-রাত একাকার করে আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই এই সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ করেছি। এই সড়কটি দুই দেশের বন্ধুত্বকে আরও সুদৃঢ় করার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতেও নিয়ামকের ভূমিকা পালন করবে।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ কালের আলোকে বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। বাঙালীর হাজার বছরের লালিত স্বপ্নের স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভিত্তিমূল রচিত হয়েছিল এই সড়ক হয়েই।
মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় এই ইতিহাসকে তুলে ধরতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। মাননীয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী একাধিকবার সড়কটির নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেছেন। বিজয়ের গৌরবের ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন হয়ে থাকবে এই সড়ক।’

মেহেরপুরের পুণ্যভূমিতেই বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন বর্তমান সরকারের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের বাবা ছহিউদ্দীন বিশ্বাস। ইতিহাসের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন তিনি। একই সঙ্গে মুজিবনগর সরকারের জাতীয় পরিষদ সদস্যও হয়েছিলেন তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছহিউদ্দীন বিশ্বাস।
প্রভাতী সূর্যের আলোয় ঝিকমিকিয়ে উঠা শনিবারের (২০ মার্চ) সকালটি যারপরেনাই আনন্দ-বেদনায় একাকার করেছে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে। মেহেরপুরে মুজিবনগরে নির্মিত ‘স্বাধীনতা সড়ক’ পরিদর্শনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তিনিও। গৌরবের বাঁধভাঙ্গা আনন্দের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই মাসটিতে বাঙালির আত্নপরিচয়ের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত এই সড়কটির মাধ্যমে রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্ব নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে বলেও মনে করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি।
কালের আলো/এমএএএমকে