চীন-রাশিয়ার ভ্যাকসিনে আস্থা আনার সময় এসেছে
প্রকাশিতঃ 4:40 pm | April 11, 2021
কালের আলো ডেস্ক:
বিশ্বের ধনী দেশগুলোতে যখন করোনাভাইরাসের টিকার স্বল্পতা দেখা দিয়েছে, তখন দরিদ্র দেশগুলো টিকা পাবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কায় আছে। তবে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব সম্প্রতি চীন, রাশিয়া এবং ভারতের তৈরি করোনার ভ্যাকসিন।
পশ্চিমা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম প্রথম দিকে চীন ও রাশিয়ার উদ্ভাবিত করোনার টিকাকে পাত্তা দিতে চায়নি। কারণ হলো, তাদের ধারণা ছিল মডার্না, ফাইজার-বায়োএনটেক অথবা অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকার তুলনায় ওই টিকাগুলো নিম্নমানের।
কিন্তু বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বলছে, এই দুই রাষ্ট্রের উদ্ভাবিত করোনার টিকাও বেশ কার্যকর। রাশিয়ার টিকা স্পুতনিক-ভি-এর মানবদেহে পরীক্ষার অন্তর্বর্তী ফলাফল প্রকাশ করেছে শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসা সাময়িকী দ্য ল্যানসেট। এতে দেখা গেছে, টিকাটি ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ কার্যকর। টিকাটির উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার গামালেয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়েই তাদের টিকার কার্যকারিতা নিয়ে এ রকম দাবি করেছিল।
তবে চীনের তৈরি সিনোফার্ম ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মিসর, জর্ডান, ইরাক, সার্বিয়া, মরক্কো, হাঙ্গেরি এবং পাকিস্তান। এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝিতে আমিরাতে এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে ১৮ লাখ মানুষ।
চীন এবং রাশিয়ার কাছ থেকে ভ্যাকনির নেয়ার সময় এসব দেশ অবশ্যই তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা যাচাই না করেই নিশ্চয় তারা ভ্যাকসিন নেয়নি। এসব তথ্যের বেশির ভাগই ল্যানসেট ও দ্য জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (জেএএমএ) মতো বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকীতে প্রকাশ হয়েছে।
বিশাল আকারে ভ্যাকসিনের স্বল্পতা এবং সরবরাহে বিলম্ব হওয়ার কারণে ফ্রান্স, স্পেন এবং জার্মানির মতো দেশগুলো এখন বিকল্প হিসেবে চীন এবং রাশিয়ার ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়ে কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভ্যাকসিন নিয়ে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তাতে আর কোনো উপায় না দেখে তারা পশ্চিমা দুনিয়ার প্রতি পক্ষপাতিত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে চীন এবং রাশিয়ার তৈরি ভ্যাকসিনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে উল্লেখযোগ্য তথ্য সামনে এসেছে। গত ডিসেম্বরের প্রথমদিকে এক ট্রায়ালের ফলাফলে দেখা গেছে, চীনের তৈরি সিনোফার্মের ভ্যাকসিন ৮৬ শতাংশ কার্যকর এবং অন্যগুলো ৭৯ শতাংশ কার্যকর।
উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে গড়ে প্রায় চারজনের মধ্যে একজন ভ্যাকসিন গ্রহণ পাচ্ছে। অপরদিকে, দরিদ্র দেশগুলোতে ৫শ জনের বেশি মানুষের মধ্যে একজন ভ্যাকসিন পাচ্ছে। এ থেকেই চরম বৈষম্য স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
কোভ্যাক্সের আওতায় মার্চের শেষ দিকে বিশ্বব্যাপী কমপক্ষে ১০ কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ বিতরণ করা হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র প্রায় চার কোটি ডোজ বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে।
চলতি বছর বিশ্বে ভ্যাকসিন বৈষম্যের ক্ষেত্রে ভয়াবহ নৈতিক ব্যর্থতার বিষয়ে সতর্ক করেন তেদ্রোস আধানম। তিনি বলেন, আমিই প্রথম এই নীতিই এর জন্য দায়ী। পশ্চিমা দেশগুলোর তৈরি করোনার ভ্যাকসিনের বেশিরভাগ ডোজই কিনে নিয়েছে ধনী দেশগুলো। তাই পশ্চিমা দেশগুলোর বাইরেও যারা ভ্যাকসিন তৈরি করছে এবার তাদেরও গুরুত্ব দেয়া উচিত। এতে করে ভ্যাকসিন সরবরাহে ধনী এবং দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে ভারসাম্য আসবে বলে আশা করা যায়।
কালের আলো/আরএস/এমএইচএস