কবরস্থানে বাড়ছে চাপ, কবর খুঁড়তে খুঁড়তে ক্লান্ত কর্মীরা
প্রকাশিতঃ 5:50 pm | April 14, 2021
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
শুধু হাসপাতাল নয় করোনার চাপ বেড়েছে কবরস্থানেও। কবর খুঁড়ে কুল পাচ্ছেন না রায়ের বাজার কবরস্থানের কর্মীরা। কার প্রিয়জন এই কবরে শায়িত হবেন তা তারা জানেন না। শুধু জানেন, করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাদের আবারও আগের মতো কবর খুঁড়তে হবে।
চাপ সামলাতে তাই মেশিন দিয়ে চলছে কবর খুঁড়ার কাজ। গোরখোদকরা বলছেন, মৃত্যুর এমন দীর্ঘ মিছিল তাঁরা সহসা দেখেননি।
শতাধিক কবর আগে থেকেই তৈরি করে রেখেছেন তারা। দূরে দাঁড়িয়ে আছে অ্যাম্বুলেন্স। পাশে আরো একাধিক অ্যাম্বুলেন্স। স্বজনরা একটু দূরে দাঁড়িয়ে আহাজারি করছেন। কিন্তু কাছে যেতে পারছেন না। অ্যাম্বুলেন্সের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। পিপিই পরিহিত স্বেচ্ছসেবীরা একটু পর পর লাশ নামাচ্ছেন কবরে। বাঁশের চাটাই দিয়ে ঢেকে মাটি দেওয়া হচ্ছে। এরপরই সবাই স্যানিটাইজার স্প্রে করে প্রিয়জনকে রেখে কবরস্থান ত্যাগ করছেন।
এম পরিস্থিতিই বলে দিচ্ছে মৃত্যুর তালিকা কতটা দীর্ঘ হচ্ছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষকে দাফন করা হচ্ছে রায়ের বাজারের এই কবরস্থানে। কবরস্থানের সারি সারি কবর দেখে মনে হতে পারে যুদ্ধে নিহতদের কবর দিতেই এ আয়োজন।
কিন্তু করোনা এক অন্যরকম এক যুদ্ধের অভিজ্ঞতা দিচ্ছে কবরস্থানের গোরখোদকদের।
তারা বলছেন, প্রতিদিন যত মরদেহ আসছে তাতে এখন আর শাবল, কোদালের সনাতনি পদ্ধতিতে কোলাচ্ছে না। তাই আশ্রয় নিতে হচ্ছে যন্ত্রের। নিয়মিত যতগুলো কবর খনন করতে হয় তার থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ টি বেশি কবর প্রস্তুত রাখতে হচ্ছে কেবল রায়ের বাজারের এই একটি কবরস্থানে।
রায়েরবাজার কবরস্থানের সিনিয়র মোহরার আব্দুল আজিজ বলেন, ২৭ এপ্রিল থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করোনায় মৃত ৮৪২ জনের লাশ দাফন হয়। প্রতিদিনই পাঁচ থেকে ৮/১০ জন করে দাফন করা হয়। এরপর থেকে দাফনের সংখ্যা কমতে থাকে। নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সপ্তাহে একটি লাশের দাফন হয়। কিন্তু মার্চ মাস থেকে এই দাফনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রতিদিন দুই/তিন টির পর মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন গড়ে পাঁচটি করে লাশ দাফন করা হয়। তবে ১ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন গড়ে আট থেকে ১০টি লাশ দাফন করা হচ্ছে। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত পাঁচটি নিয়ে এ পর্যন্ত এই কবরস্থানে করোনায় মৃত ১০৮১টি লাশ দাফন করা হয়েছে।
মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় প্রতিদিনই বাড়ছে হারানো স্বজনদের নামের তালিকা। এক একটি কবর যেন কেবলি এক একটি সংখ্যা। কদিন পর হয়তো নাম পলকও মুছে যাবে, শুধু স্বজনদের বুকে রয়ে যাবে প্রিয়জনদের হারানোর ব্যাথা। করোনার এই মহামারি হয়তো একদিন চলে যাবে থেমে যাবে মৃত্যুর মিছিলও কিন্তু, এই মহামারি যাদের কেরে নিলো সেই স্বজনদের শূন্যতা কাঁদাবে আজীবন।
কালের আলো/এসআইএল/এমএইচএ