সবার আগে করোনা দুর্যোগে নাগরিকের পাশে মেয়র আতিকুল ইসলাম

প্রকাশিতঃ 10:40 pm | May 06, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

হালের বিজ্ঞাপনী সংস্কৃতির প্রধান হাতিয়ার বিলবোর্ডে তাঁর মন নেই। বরাবরই গুরুত্ব দিয়েছেন দিলবোর্ডে। অর্থাৎ, নগরীর বাসিন্দাদের মনে স্থায়ীভাবে ঠাঁই করে নেওয়ার প্রথাবিরোধী প্রবণতাকেই হৃদয়ঙ্গম করেছেন। ভোটের আগে কথা দিয়েছিলেন নগরবাসীর পাশে থাকার। তখন অনেকেই হয়তো বা ভেবেছিলেন তাঁর এই বক্তব্য ভোট টানারই একটি চিরচেনা কৌশল মাত্র!

আরও পড়ুন: মেয়রের ‘চিকেন বিরিয়ানি’, অতৃপ্তি ঘুচিয়ে দিচ্ছে স্বস্তি!

কিন্তু নগর পিতা নিজের নিত্যকার কর্মযজ্ঞের মাধ্যমেই কথার সঙ্গে কাজের মিলের প্রমাণ রেখেছেন। নিরন্তর পথ হাঁটছেন ‘সবাই মিলে সবার ঢাকা; সুস্থ, সচল, আধুনিক ঢাকা’ স্লোগানের কার্যকর বাস্তবায়নে। বয়স ভুলে মিশেছেন উদ্যমী তারুণ্যের সঙ্গে। হৃদয়ের উষ্ণতায় বুকে টেনে নিয়েছেন সামান্য পরিচ্ছন্নতা কর্মীকেও।

সততা, নিষ্ঠা এবং একাগ্রতার ফল হিসেবেই কেউই দাবিয়ে রাখতে পারেনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো.আতিকুল ইসলামকে। একজন তীব্র আবেগ অনুভূতিপ্রবণ এবং মানবিকবোধ সম্পন্ন এই নগর সেবক ‘মানবতার জননী’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশিত পথেই নিজেকে পরিচালিত করেছেন ‘রাউন্ড দ্যা ক্লক’।

‘মনুষ্যত্ববোধের পরিচয় বিপদেই দিতে হয়’ প্রধানমন্ত্রীর সেই ঐতিহাসিক উক্তি মন-মানসে গভীরভাবে লালন করেই চলতি করোনা দুর্যোগেও সবার আগে নগরীর অসহায় ও খেটে খাওয়া বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতার পঙক্তিমালার অনুরণন না ঘটিয়ে কথা রাখার জ্বলজ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে স্বমহিমায় নিজেকে বিকশিত করেছেন দিনের পর দিন।

করোনার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলমান যুদ্ধে ফ্রন্টলাইনে অবস্থান করে নিজে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা জয় করে আবারও নগরীর অসহায়, বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দিন-রাত সমর্পণ করেছেন নিজেকে। মহানুভবতার মাধ্যমে সৌভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যরে অনুকরণীয় এক উদাহরণ তৈরি করেছেন ডিএনসিসির টানা দু’বার নির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম।

আরও পড়ুন: মেয়র আতিকুলের সঙ্গে কচি সূর্য সন্তানদের ‘জয় বাংলা’ স্লোগান! (ভিডিও)

ডিএনসিসির উদ্যোগে দেশের সর্ববৃহৎ কোভিড হাসপাতাল করে দিয়েছেন আরও আগেই। ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালকে রোগীর সেবা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যেই উপহার দিয়েছেন দুটি অ্যাম্বুলেন্স ও একটি লাশবাহী গাড়ি। নিজের সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে অব্যাহত রেখেছেন জনকল্যাণমূলক নানামুখী কর্মপ্রয়াস। শুক্রবার(০৭ মে) থেকে নিজের উদ্যোগে প্রতিদিন রাজধানীর উত্তরায় ২ হাজার ৪’শ অসহায় ও দরিদ্র মানুষের হাতে ইফতার সামগ্রী তুলে দিবেন।

চলমান লকডাউনেও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে না থেকে নগরীর ব্যবসায়ীদের সচেতন করেছেন, অ্যাকশনেও গেছেন। ক’দিন আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন লকডাউন চলাকালেও মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা-বাণিজ্য না করলে বন্ধ করে দেওয়া হবে দোকান। যে কথা সেই কাজ করে দেখিয়েছেন।

গত বুধবার (০৫ মে) রাজধানীর গুলশান এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাস্ক না পরায় এক ক্রেতাকে জরিমানা এবং দুটি দোকান সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।

পরের দিন বৃহস্পতিবার (০৬ মে) রাজধানীর আসাদগেট এলাকায় আড়ংয়ের আউটলেটে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ১ লাখ টাকা জরিমানা করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

এদিন বিকেলে শপিংমলগুলো পরিদর্শনে বের হন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম। এ সময় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ক্রেতা থাকায় মেয়রের উপস্থিতিতেই আড়ংকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

ডিএনসিসি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সঙ্কটকালের প্রকৃত এই নেতা চলতি করোনা দুর্যোগে দুঃস্থ ও অসহায় মানুষদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের জন্য ৭২ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরের প্রত্যেককে এক লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ প্রদান করেছেন। ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে খাদ্যশস্যও বিতরণ কর্মসূচি।

আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ওয়ার্ড প্রতি ৫০০ জন অসহায়-হতদরিদ্র মানুষকে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণের জন্য ৭২ জন কাউন্সিলরের প্রত্যেককে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা করে মোট ১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা করেছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।

দিন কয়েক আগে বিদ্যমান কোভিড-১৯ ও লকডাউন পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত এক জরুরি ভার্চুয়াল সভায় ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম জানান, ডিএনসিসি এলাকার ১ হাজার ৯ শত ৭ টি মসজিদের প্রত্যেক ইমামকে ২ হাজার টাকা ও প্রত্যেক মুয়াজ্জিনকে ১ হাজার টাকা করে মোট ৫৭ লক্ষ ২১ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৩৩৩ ও হটলাইনের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তার জন্য ফোন করা অসহায় ও দুঃস্থ মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণের জন্য ১০ জন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সেই সভায় নগর পিতা আতিকুল ইসলাম আরও জানান, খাদ্য সহায়তা বাবদ দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া ৭ লক্ষ টাকা ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। শিশু খাদ্য ক্রয়পূর্বক বিতরণের জন্য একই মন্ত্রণালয় থেকে ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ মিলেছে।

ক্রয় প্রক্রিয়া শেষে এটি বিতরণের প্রক্রিয়া চলছে। ডিএনসিসির বিভিন্ন এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক, ফুটপাত, ফুটওভারব্রিজ, গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল ও উন্মুক্ত স্থানে এখন পর্যন্ত মোট ৩৯ লক্ষ লিটার ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত তরল জীবাণুনাশক ছিটানো হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরশনের ৭২ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরের মাধ্যমে ১০ লক্ষ টি মাস্ক, ১ লক্ষ বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ১ লক্ষ ৫০ হাজার টি সাবান, ৫০ হাজার টি তিন স্তর বিশিষ্ট কাপড়ের মাস্ক, ২ হাজার বোতল লিকুইড হ্যান্ডওয়াশ বিতরণ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় নগরবাসীকে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে তথ্য ও চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষে ডিএনসিসির আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিস ডেলিভারি প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত ৫টি নগর মাতৃসদনে চলতি বছরের ৯ এপ্রিল থেকে টেলিমেডিসিন সেবা প্রদান করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক বার্তা সম্বলিত ৫০ হাজার স্টিকার বিতরণ করা হয়েছে। জনসচেতনতামূলক বার্তা মাইকিং প্রচার করা হয়েছে প্রতি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে।

করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও লকডাউন বাস্তবায়নে এবং কালোবাজারি, মজুদদারী ও অহেতুক দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ করার জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে ডিএনসিসি এলাকার কয়েকটি কাঁচাবাজার পার্শ্ববর্তী সুবিধাজনক মাঠ বা উন্মুক্ত জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

কালের আলো/এসআর/এমএ