প্রধানমন্ত্রীর প্রাজ্ঞ নেতৃত্বেই দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বে অনুকরণীয়
প্রকাশিতঃ 8:05 pm | May 07, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
দুর্যোগ মোকাবেলা এবং সক্ষমতা অর্জনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে মডেল। দুর্যোগ সহনশীলতাকে আরও টেকসই ও সমন্বিত করার মাধ্যমে মানব ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষেও কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় দেশটির সক্ষমতার কথা উচ্চারিত হচ্ছে বৈশ্বিক পরিমন্ডলেও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ নেতৃত্বেই দুর্যোগ মোকাবেলায় দেশটির এই অর্জন ও সাফল্য সারা বিশ্বে অনুকরণীয় বলেও মন্তব্য করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সংক্রান্ত সংস্থার দায়িত্বশীলরা।
বৃহস্পতিবার (০৬ মে) বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘বাংলাদেশ টুয়ার্ডস সাইক্লোন রেসিলিয়েন্স থ্রো দি লিগ্যাসি অফ বঙ্গবন্ধু অ্যান্ড শেখ হাসিনা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে তাঁরা এসব কথা বলেন।
এই সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো.এনামুর রহমান। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবি তাজুল ইসলাম। প্রধান আলোচক ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
এছাড়া সেমিনারে অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন ইউএন ওমেন বাংলাদেশের অফিস ইনচার্জ দিলরুবা হায়দার, বাংলাদেশ ডিজাস্টার প্রিপেয়ার্ডনেস সেন্টারের (বিডিপিসি) পরিচালক সাইদুর রহমান, আইএফআরসির কান্ট্রি অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান সঞ্জীব কুমার কাফলে, বাংলাদেশ ও আমেরিকান রেডক্রসের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ আচালা নাভারত্নে, নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাউল পি লিজানো, এশিয়া প্যাসেফিকের অ্যাডভাইজর ফরহাদ রেজা, এশিয়া প্যাসিফিকের রিজিওনাল ডিরেক্টর আলেকজেন্ডার মাথিও, ইউএনডিপির বাংলাদেশের রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টিটিভ সুদীপ্ত মুখার্জি, ব্যাংককের এশিয়ান ডিজাস্টার প্রিপেয়ার্ডনেস সেন্টারের (এডিপিসি) নির্বাহী পরিচালক মি.হ্যানস গৌতম প্রমুখ।
প্রাণবন্ত ও যুক্তিনির্ভর আলোচনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সংক্রান্ত সংস্থার দায়িত্বশীলরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগের এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ স্থানীয় প্রশাসন এবং স্থানীয় প্রতিনিধিদের গৃহীত ব্যবস্থা বিশ্বের অনেক দেশের জন্য অনুকরণীয় বলেও মত দেন।
সেমিনারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৯ সালে দু’টি বড় সাইক্লোন হয়েছিল বাংলাদেশে। ওই সময় ১৮ লাখ এবং ২৩ লাখ মানুষকে নিরাপদে সাইক্লোন সেন্টারে নিয়ে আসতে সক্ষমতা দেখিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। সাইক্লোন সেন্টারে তাদের খাবার ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা হয়। দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষকে বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সহযোগিতা দেওয়া এবং তাদের জন্য দুর্যোগ সহনশীল ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার বিষয়টিও সবাই উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।

ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড, নদী ভাঙন, খরার মত দুর্যোগ মোকাবেলা করেই বাংলাদেশ টিকে রয়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুর্যোগ মোকাবোয় শক্তিশালী প্রস্তুতি গ্রহণ করে। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এরই ফলশ্রুতিতে যে কোনো দুর্যোগ মোবেলায় সারা বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।
৪৮টি দেশ নিয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক ফোরাম সিভিএফ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবেলায় কাজ করার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা দ্বিতীয়বারের মতো জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর জোট ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম-সিভিএফ এবং ‘ভালনারেবল টোয়েন্টি’ বা ভি-২০ গ্রুপের সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
দুর্যোগ মোকাবেলায় তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে কৃত্রিম উপায়ে ম্যানগ্রোভ বন এবং সবুজ বেষ্টনী তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা করেছে। এর মাধ্যমে জলোচ্ছ্বাস থেকে দেশকে রক্ষার পাশাপাশি রক্ষা পাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্যও।
গত এক দশকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৭০ কোটি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই চক্র ভাঙতে দক্ষিণ এশিয়াকে দুর্যোগে টিকে থাকার সক্ষমতা বাড়াতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ২০০৯ সালের বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেইঞ্জ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যানের আওতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে নানা পদক্ষেপ এবং অভিযোজন কর্মসূচি নিয়েছে সরকার।
২০০৯ সালে জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিল প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এই পর্যন্ত ৪৩ কোটি ডলার নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দও দিয়েছে। অভিযোজন বিষয়ক কর্মকান্ডে শেখ হাসিনার সরকার ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর জিডিপির এক শতাংশ, অর্থাৎ ২০০ কোটি ডলার করে ব্যয় করছে।
কেবল এসবই নয় দুর্যোগ মোকাবেলায় ধারাবাহিক সাফল্যের দৌলতে সম্প্রতি এশিয়া দুর্যোগ প্রস্তুতি কেন্দ্রের (এডিপিসি) মর্যাদাপূর্ণ নেতৃত্বও পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ এই পদটিতে সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.মোহসীন। চীন, ভারত, পাকিস্তানসহ ২৪ টি দেশের মধ্যে থেকে এশিয়া দুর্যোগ প্রস্তুতি কেন্দ্রের গুরুদায়িত্বে বাংলাদেশের এই সচিবের দায়িত্বভার গ্রহণকেও বড় এক অর্জন হিসেবেই উল্লেখ করেন বক্তারা।
গুরুত্বপূর্ণ এই সেমিনারে কে কী বলেছেন?
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ হলেও বাংলাদেশকে এখন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ‘রোল মডেল’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন ১৯৭৫ সালে তার মর্মান্তিক মৃত্যুর পর স্তিমিত হয়ে যায়।
‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করার পর দুর্যোগ প্রস্তুতি ও প্রশমনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু নেওয়া পদক্ষেপগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়। তার সুদৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ হয়েও আজ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ‘রোল মডেল’ হিসেবে গণ্য।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবি তাজুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার পর উপকূলীয় অধিবাসীদের জান-মাল ও সার্বিক ক্ষয়ক্ষতি লাঘব করতে ১৯৭২ সালে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) প্রতিষ্ঠিত হয়।
‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সিপিপিকে সরকারি কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করেন। এভাবেই ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) পরিপূর্ণভাবে যাত্রা শুরু করে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এক নতুন মাত্রা লাভ করে। দুর্যোগ প্রস্তুতি, প্রশমন ও ব্যবস্থাপনার সাথে সাথে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বিকশিত হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জন্মের পর থেকে বিপন্ন মানবতার কল্যাণে যে রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি ও নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের এই ধারাবাহিক প্রচেষ্টা বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশকে একটি দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষম দেশে পরিণত করেছে। বাংলাদেশের এই সাফল্যের কৌশল জানতে বিশ্ব মহলও উন্মুখ।’
সভাপতির বক্তৃতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহাসীন বলেন, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৭৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে আগাম দুর্যোগ সতর্ক বার্তা প্রচার, অপসারণ ও উদ্ধার, বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, মুজিব কিল্লা সংস্কার ও নির্মাণ, দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি, নদী এবং উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ, মহামারী করোনা মোকাবিলা প্রভৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ প্রস্তুতি ও প্রশমনের এই প্রয়াস বিশ্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।
কালের আলো/জিকেএম/এমএ