প্রেমিকার স্বামীকে টুকরো টুকরো করে ট্যাংকে ফেলেন মসজিদের ইমাম
প্রকাশিতঃ 10:04 am | May 26, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:
একই সঙ্গে রাতের খাবার খান মো. আজাহার (৩০) এবং মাওলানা আব্দুর রহমান। এরপর কথা কাটাকাটি হয় তাদের। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলা হয় আজাহারকে। এরপর তার নিথর দেহ বড় ছুরি দিয়ে ছয় টুকরা করেন আব্দুর রহমান। সেপটিক ট্যাঙ্কে টুকরাগুলো ঢুকিয়ে সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করেন। কক্ষের রক্ত পরিষ্কার করে গোসল করেন। ওজু করে মসজিদে ফজরের নামাজও পড়ান তিনি। এরপরও তিনি টানা ছয় দিন একেবারে স্বাভাবিক জীবনযাপন করেন।
কোনো সিনেমার গল্প বা হাল আমলের মেগা সিরিয়ালের কাহিনি নয়। গত ১৯ মে রাতে রাজধানীর দক্ষিণখানে স্থানীয় সরদারবাড়ি জামে মসজিদে ইমামের কক্ষে এভাবেই খুন ও গুম হন আজাহার। খুনে জড়িত মাওলানা আব্দুর রহমান (৫৪) ওই মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে ৩৩ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
সোমবার (২৪ মে) রাতে তাকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার সকালে মসজিদের সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে আজাহারের লাশের টুকরাগুলো উদ্ধার করে র্যাব। পেশায় গার্মেন্টকর্মী আজাহার ১৯ মে থেকে নিখোঁজ ছিলেন।
মঙ্গলবার (২৫ মে) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আব্দুল মোত্তাকিম বলেন, তারা গোপন খবরের ভিত্তিতে জানতে পারেন, সরদার বাড়ি জামে মসজিদের সিঁড়িতে রক্তের দাগ রয়েছে এবং সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। এরপর তারা ছায়া তদন্ত শুরু করলে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানতে পারেন, মো. আজাহার ১৯ মে বিকেল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তদন্তের একপর্যায়ে মসজিদটির ইমাম আব্দুর রহমানকে গ্রেপ্তার করলে তিনি আজাহারকে খুন ও টুকরা করে লাশ গুমের কথা স্বীকার করেন। তার দেখানো মতে লাশের ছয়টি টুকরা উদ্ধার করা হয়।
এই নৃশংস খুনের কারণ সম্পর্কে র্যাব অধিনায়ক বলেন, নিহত আজাহারের ৪ বছর বয়সী ছেলে ওই ইমামের কাছে মক্তবে পড়ত। আজাহার নিজেও তার কাছে কোরআন শিক্ষা নিয়েছেন। এভাবে ইমামের সঙ্গে আজাহারের পরিবারের ঘনিষ্ঠতা হওয়ায় তিনি মাঝেমধ্যে ওই বাসায় যেতেন। ঈদের ছুটিতে আজাহার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে টাঙ্গাইলে গ্রামের বাড়ি যান। স্ত্রী-সন্তানকে বাড়ি রেখে ১৯ মে ঢাকায় ফিরে আজাহার মসজিদে পূর্বপরিচিত ইমামের কাছে যান। সেখানে তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হত্যাকাণ্ড ঘটে। হত্যায় ব্যবহৃত তিনটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার সময় মসজিদে ইমাম আব্দুর রহমান ছাড়া আর কেউ ছিলেন না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে লে. কর্নেল মুত্তাকিম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, স্ত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে বলে আজাহার তাকে সন্দেহ করতেন। যদিও তাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল না। এটা নিয়ে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি খুন করেন। বিষয়টি জানতে নিহত আজাহারের স্ত্রীর বক্তব্যও নেওয়া হবে।
র্যাবের অপর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খুনের পর দেহ ছয় টুকরো করে তা গুমের পর আব্দুর রহমান যখন ফজরের নামাজ পড়ান, তখন তার ভুল হচ্ছিল। মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. জুবায়েরকে উদ্বৃত করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ইমাম সাধারণত নামাজে ভুল করেন না। ২০ মে ফজর নামাজের সময় দুইবার ভুল করেন। এর পর শুদ্ধভাবে নামাজ পড়ান। তাকে তখন বেশ অস্থির মনে হচ্ছিল। তবে বিষয়টি কেউই বুঝতে পারেননি।
র্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, নিহত আজাহারের স্ত্রীর সঙ্গে আব্দুর রহমানের অনৈতিক সম্পর্ক ছিল বলে আজাহার সন্দেহ করতেন। বিষয়টি ‘মীমাংসা’ করতে ওই রাতে তিনি আব্দুর রহমানের কাছে যান। দু’জন রাতে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করলেও ঘটনাটি নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে আবদুর রহমান তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যা ও লাশ গুমের কথা স্বীকার করলেও অনৈতিক সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন তিনি।
কালের আলো/ডিএসকে/এমআরবি