কর বহির্ভূত রাজস্ব আহরণে দৃষ্টি সরকারের
প্রকাশিতঃ 11:59 am | May 30, 2021

জ্যেষ্ঠ সংবাদদাতা, কালের আলো:
গেল বছর অতিমারী করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে দেশে দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। কল-কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি জীবন-যাপনেও নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও।
২০২০ সালের শুরুতে প্রথম ধাক্কায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কয়েকটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানুষের কল্যাণে এ ধরনের অর্থনৈতিক কর্মসূচি ২০২১-২২ অর্থ-বছরের বাজেটেও চলমান থাকবে।
সূত্র জানায়, করোনার ধাক্কায় দেশে সব ধরনের উৎপাদন ব্যবস্থাই হুমকির মুখে পড়েছে। আয় কমেছে সরকারের ও বেশিরভাগ কর্মজীবী মানুষেরও। অথচ ব্যয় বেড়েছে। এজন্য প্রথমবারের মতো বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা নতুন বাজেটে বাড়ছে না; বরং চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় জিডিপির বিপরীতে ২০২১-২২ অর্থবছরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা কম।
এ জন্য অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব বোর্ডের নতুন কর আরোপের দরকার পড়বে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, অর্থপ্রবাহ বাড়িয়ে সাধারণ নাগরিকদের মনোবল বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন ব্যয়সহ সামগ্রিক সরকারি ব্যয় বাড়াবে সরকার। পাশাপাশি করবহির্ভূত রাজস্ব আহরণের দিকে জোর দেওয়া হবে।
জানা যায়, করোনাভাইরাস মহামারীজনিত অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারকে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন এবং সম্প্রসারণমূলক রাজস্ব সংক্রান্ত সহায়তা কর্মসূচি নিতে হচ্ছে।
অন্যদিকে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব বাড়াতে সরকারের নজর নন-ট্যাক্স রেভিনিউ (এনটিআর) এর ওপর। এখাত থেকে বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় করতে চায় সরকার।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত তহবিল থেকে অর্থ নিয়ে আসার মাধ্যমে এই কাজটি করা হবে। এ খাত থেকে আগামী অর্থবছরে ৭ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে এনটিআর থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে যা ছিল ৩৩ হাজার কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে আগামী অর্থবছরে এনটিআর খাত থেকে ২১ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে এনটিআর বা কর ব্যতীত প্রাপ্তি ধরা হবে ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর আওতায় লভ্যাংশ ও মুনাফা, সুদ, প্রশাসনিক ফি, জরিমানা, দণ্ড ও বাজেয়াপ্তকরণ, সেবা বাবদ প্রাপ্তি, ভাড়া ও ইজারা, টোল, অবাণিজ্যিক বিক্রয়, কর ব্যতীত অন্যান্য রাজস্ব ও প্রাপ্তি এবং মূলধন রাজস্ব থাকবে।
এনবিআর এর কর্মকর্তারা বলছেন, কর ব্যতীত রাজস্ব ও প্রাপ্তি খাতে আগামী অর্থবছরে ১২ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে প্রাথমিকভাবে ধরা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এ খাতে প্রাপ্তির লক্ষ্য নির্ধারণ করা রয়েছে ৬ হাজার ৩৮ কোটি টাকা।
২০১৯ সালে জাতীয় সংসদে ‘স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান সংক্রান্ত আইনটি পাস হয়।
এই আইনের অধীনে সরকার এসব সংস্থার কাছে রক্ষিত অর্থের ৭৫ শতাংশ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নিয়ে আসতে পারে।
উল্লেখ্য, গত দুই অর্থবছরে দেশের বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা হয়েছে।
কালের আলো/ডিএস/এমএম