নারী পাচারের নতুন ফাঁদ টিকটক মডেল
প্রকাশিতঃ 12:04 am | May 31, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো;
টিকটক ভিডিওয়ের মাধ্যমে রাতারাতি সেলিব্রিটি হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে উঠতি বয়সী তরুণীদের টার্গেট করতো একটি চক্র। পরে ভালো কাজের লোভ দেখিয়ে বিদেশে পাচার করে দেয়া হতো। টিকটক ভিডিও এর মডেল বানানোর ফাঁদ তৈরি করে অসহায় নারীদের সংগ্রহ করে এ অপকর্ম চালাতো চক্রটি।
সম্প্রতি ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি তরুণীকে যৌন নির্যাতনকারীরা গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য।
পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তাররা একটি আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের সদস্য। বাংলাদেশ, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে এ চক্রের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। ভারত ও বাংলাদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করা যৌন নির্যাতনের এ ঘটনায় বেঙ্গালুরুতে রিফাদুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২৬) নামের যে যুবক গ্রেপ্তার হবলে পুলিশের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
এ বিষয়ে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘রিফাদুল ইসলাম বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং ভারতের কয়েকটি রাজ্যের কিছু অপরাধীর সঙ্গে মিলে মানবপাচারের আন্তর্জাতিক চক্র গড়ে তুলেছে।
‘এ চক্রের সদস্যরা লেখাপড়ায় অমনোযোগী স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের টার্গেট করত। মেয়েদের ফাঁদে ফেলতে ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলে এ চক্র। আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরাই গ্রুপটি পরিচালনা করে।’
তিনি বলেন, রিফাদুল ওরফে টিকটক হৃদয় সেখানে একজন অ্যাডমিন হিসেবে রয়েছে। এ ফেসবুক গ্রুপে টিকটক ভিডিও তৈরির প্রলোভন দেখিয়ে মডেল হওয়ার ফাঁদে মেয়েদের আকৃষ্ট করা হতো।
জানা যায়, ২০২০ সালের শেষ দিকে এ গ্রুপের মাধ্যমে ঢাকার পাশের একটি জেলার রিসোর্টে কমপক্ষে ৮০০ তরুণ-তরুণীকে নিয়ে ‘পুল পার্টির’ আয়োজন করা হয়েছিল। ওই পার্টি আয়োজনে নেতৃত্ব দেয় রিফাদুল।
পুলিশ কর্মকর্তা মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘এ ফেসবুক গ্রুপে সুনির্দিষ্ট কিছু সদস্য আছেন, যারা গ্রুপের নারী সদস্যদের ভারতের বিভিন্ন মার্কেট, সুপারশপ, বিউটি পারলারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দিয়ে পাচার করে আসছিল। চক্রের মূল আস্তানা ভারতের বেঙ্গালুরুর আনন্দপুর এলাকায়।
‘চক্রটির ভারতের কয়েকটি রাজ্যের কিছু হোটেলের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে। সেই হোটেলগুলোতে চাহিদামতো বিভিন্ন বয়সের মেয়েদের পাঠিয়ে দেওয়া হতো,’ যোগ করেন তিনি।
মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ভারতে পাচার হওয়া মেয়েদের আনন্দপুরে নিয়ে যাওয়ার পর কৌশলে নেশাজাতীয় কিছু বা মাদকদ্রব্য সেবন করিয়ে বা জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে এসব নারীকে সব সময় হুমকি দেওয়া হয়, অবাধ্য হলে বা পালানোর চেষ্টা করলে এ ভিডিও তাদের স্বামীসহ পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
সম্প্রতি কয়েকজন মিলে এক বাংলাদেশি তরুণীকে বিবস্ত্র করে যৌন নির্যাতনের ভিডিও অনলাইন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় প্রথমে ভারতে এবং পরে বাংলাদেশেও ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে।
ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পরই নির্যাতনকারীদের ধরতে ভারত ও বাংলাদেশে তৎপরতা শুরু হয়। প্রথম পদক্ষেপ নেয় ভারতের আসাম পুলিশ। ওই ভিডিও থেকে পাঁচ নির্যাতনকারীর ছবি প্রকাশ করে তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য টুইটারে পুরস্কারের ঘোষণা দেয় তারা।
ভিডিওটি বেঙ্গালুরুর একটি মোবাইল থেকে ছড়িয়ে পড়েছে বলে নিশ্চিত হওয়ার পর তৎপর হয় সেখানকার পুলিশ। ২৭ মে বেঙ্গালুরু শহরের একটি ভাড়া বাসা থেকে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে এর আগেই বাংলাদেশ পুলিশ নির্যাতনকারীদের একজন হিসেবে রিফাদুল ওরফে টিকটক হৃদয়কে শনাক্ত করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নির্যাতনের শিকার মেয়েটির পরিবারের সন্ধান পায় পুলিশ।
এ ঘটনায় ২৭মে রাতেই রিফাদুলসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও চারজনকে আসামি করে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী মেয়েটির বাবা।
কালের আলো/এসকে/এমআরকে