কেমন কাটলো চসিক মেয়র রেজাউল চৌধুরীর ১০০ দিন?
প্রকাশিতঃ 12:36 pm | June 02, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:
নগর পিতার দায়িত্ব নিয়েছেন ১০০ দিন পেরুলো। এরই মাঝে পরিচ্ছন্ননগরী হিসেবে চট্টগ্রামের পুরানো তকমা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রাণান্তকর প্রয়াস নিয়েছেন। উন্নয়ন করেছেন রাস্তা-ঘাটসহ অন্যান্য খাতেও।
এভাবে নগরবাসীর নাগরিক অধিকার রক্ষার মাধ্যমে দায়িত্বগ্রহণের একশ দিনের মাঝেই চট্টগ্রামের নাগরিকদের মনে শক্তপোক্ত একটি জায়গা করে নিয়েছেন সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
সম্প্রতি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে গত তিন মাসে নিজের সাফল্যের কথা তিনি যেমন ব্যক্ত করেছেন, তেমনই তুলে ধরেছেন চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে যেসব উন্নয়নমূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছি তার সবগুলোই এখন দৃশ্যমান। আমরা শতভাগ বলব না। সেটা সম্ভবও না।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে সফলতার কথা জানিয়ে এই জনপ্রতিনিধি বলেন, নাগরিকদের পরিচ্ছন্ন নগর উপহার দিতে পেরেছি। শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাটের অবস্থা খুব বেশি ভালো ছিল না, খানা-খন্দ ছিল। সেগুলো প্যাচওয়ার্কের মাধ্যমে সংস্কার করেছি। সবগুলো সড়ক গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত করেছি।
অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে মেয়র বলেন, এ বিষয়ে কঠোর ছিলাম, এখনও আছি। ফুটপাত ও নালার উপর স্থাপনা করেও বিভিন্নভাবে দখল করা হয়েছে। সেগুলোর বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নিয়েছি।
তবে নগরবাসীকে মশার যন্ত্রণা থেকে এখনও রেহাই দিতে না পারার মনোঃকষ্ট রয়েছে তার। তবে বলেছে, এ সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছি। আশা করছি খুউব দ্রুত মশার উৎপাত থেকে রক্ষা পাবেন নগরবাসী।
একই সঙ্গে বন্দরনগরীর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন তথা চট্টগ্রামকে ‘মডেল শহর’ গড়ার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
একাত্তরের বীর সেনানী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, মেয়রের দায়িত্ব নিয়েছি ১০০ দিন পেরিয়েছে। আমি পাঁচ বছরের মধ্যে চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের মডেল শহর হিসেবে দাঁড় করাতে চাই, এটা পারব বলে বিশ্বাসও রাখি। সেই সততা এবং বিশ্বাস আমার আছে।
‘বিগত অর্ধ শতাব্দীর রাজনৈতিক জীবনে অর্থবিত্ত আমাকে নীতিচ্যুত করতে পারেনি। কোনো অর্থবিত্তের লোভ মোহ আমাকে লক্ষ্যচ্যুত করতে পারবে না। লক্ষ্যে এগিয়ে যাবই। শতভাগ সততা নিয়ে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বাস ও আস্থাকে ধারণ করে চট্টগ্রামকে মনের মতো সাজিয়ে তুলব।’
এতে আবারো সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, সেবা সংস্থার প্রধান, সাবেক মেয়র, মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রগতিশীল চেতনার লোকজনসব নাগরিকদের অব্যাহত সহযোগিতা চেয়েছেন সিটি মেয়র।
রেজাউল চৌধুরীর ভাষ্য, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। কারণ এ নগরীর মাধ্যমে দেশের মোট রপ্তানির ৮০ এবং আমদানির প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়। ফলে চট্টগ্রামের উন্নয়নের মাধ্যমে সামগ্রিক অর্থনৈতিক সুফল বয়ে আনা সম্ভব।
‘চট্টগ্রাম থেকে সবচেয়ে বেশি আমদানি শুল্ক আসে। এর একটি অংশ নগরীর উন্নয়নে ব্যয় করার সিদ্ধান্তও অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। এর সুফল ভোগ করবে পুরো দেশবাসী। তাই চট্টগ্রামের সমস্যাকে আঞ্চলিক সমস্যা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই।’
রেজাউল চৌধুরী মনে করেন, দেশের ছোট ছোট সিটি করপোরেশন যেটুকু অর্থ বরাদ্দ পেয়েছে, অর্থনীতিতে বড় অবদান রেখেও চট্টগ্রাম অনেক সময় তা পায়নি। আমরা লক্ষ্য করছি, চট্টগ্রামের উন্নয়নে দৃষ্টি না দিয়ে মোংলা বা পায়রা বন্দরকে এর বিকল্প হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টাও চলছে। আমরা অন্য বন্দর তৈরির বিরোধী নই, কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরের প্রয়োজনীয়তাকে খর্ব করে নয়। কেননা চট্টগ্রাম বন্দরের প্রয়োজন হবে আরো অনেক দিন।
‘সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দরের কারণে এ অঞ্চলের সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। তাই চট্টগ্রামের উন্নয়নে সবার দৃষ্টি দেওয়া আবশ্যক। এতে দেশের অর্থনীতির বিকাশ আরো ত্বরান্বিত হবে। চট্টগ্রামের অনেক সমস্যার মধ্যে যানজট ও জলজট সমস্যা প্রকট। এর সমাধান করা হলে তার সুফল গোটা বাংলাদেশ পাবে,’ যোগ করেন তিনি।
তার মত, সাফল্য যেমন আরও সাফল্য ডেকে নিয়ে আসে, তেমনি চট্টগ্রামের উন্নয়নও পুরো দেশের আরও উন্নয়ন ডেকে আনবে- এই মুহূর্তে দেশের অর্থনীতির জন্য এটা সবচেয়ে বড় সত্য। চট্টগ্রামের উন্নয়ন তাই কোন আঞ্চলিক দাবি নয়। এটি এখন জাতীয় দাবি।
‘চট্টগ্রামকে ঘিরে নেওয়া প্রকল্পগুলোর অধিকাংশই অল্প কয়েক বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যায়। আর এসব প্রকল্প যথাসময়ে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম এক অনন্য আধুনিক নগরীর পূর্ণতা লাভ করবে। পাল্টে যাবে চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনৈতিক চিত্র, যা সরকারের ভিশনকে পূর্ণতায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সরাসরি ভূমিকা রাখবে, বলেন তিনি।
কালের আলো/এসআরকে/এমএইচএ