মুক্তবাজারে সিন্ডিকেট বলতে কিছু নেই : এফবিসিসিআই সভাপতি

প্রকাশিতঃ 10:29 am | June 03, 2021

বাণিজ্য সংবাদদাতা, কালের আলো:

করোনায় শুধু বাংলাদেশ-ই নয়, বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব অর্থনীতি। এ অবস্থায় দেশীয় শিল্প রক্ষার জন্য সাপ্লিমেন্টারি ট্যাক্স উঠিয়ে দেওয়ার মত দিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর সভাপতি জসিম উদ্দিন।

আরও পড়ুন: সাপ্লিমেন্টারি ট্যাক্স উঠিয়ে দেশীয় শিল্প রক্ষা করা প্রয়োজন : এফবিসিসিআই সভাপতি

বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন ২০২১-২৩ মেয়াদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি নির্বাচিত হন। ব্যবসায়ীদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় এরই মধ্যে পুরোদমে কাজ শুরু করে দিয়েছেন এই উদ্যোক্তা।

আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেছেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন। দুইপর্বের ধারাবাহিক সাক্ষাৎকারের এবার পড়ুন দ্বিতীয় পর্ব।

করোনা পরিস্থিতিতে বেশ কয়েক দফা পণ্যের দাম বেড়েছে। এক্ষেত্রে কোনো সিন্ডিকেট জড়িত কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে জসিম উদ্দিন বলেন, আমি জানি না আমরা কেন সিন্ডিকেট বলছি। মুক্তবাজারে সিন্ডিকেট বলতে কিছু থাকে না। পণ্যের দাম ওঠানামা করে চাহিদা এবং সরবরাহের ওপর। আমার কোনো জিনিস যখন কম থাকবে তখন দাম বেড়ে যাবে। তারপরও যদি এমন পরিস্থিতি হয়, তা হলে সরকারের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং সেলগুলো রয়েছে, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর ও ব্যবসায়ীদের যে সংগঠনগুলো রয়েছে, সেগুলো মিলেমিশে কাজ করতে পারে।

‘আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সৎ। দুই-একজনের কারণে পুরো ব্যবসায়ী সমাজের ওপর দোষ আসবে- এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সিন্ডিকেটের বিষয়ে আগে শুনেছি; কিন্তু বর্তমানে খুবই কঠিন। তারপরও সরকার যদি উদ্যোগ নেয়, তা হলে সরকারের সঙ্গে অবশ্যই থাকবো,’ যোগ করেন তিনি।

ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষায় এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ব্যবসায়ীদের স্বার্থ মানেই দেশের স্বার্থ। সরকারের যেসব উদ্যোগ বা লক্ষ্য আছে, বাস্তবায়ন কিন্তু ব্যবসায়ীরাই করেন। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রায় ৮৫ শতাংশই হয় বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে।
‘সরকারের সংস্থাগুলোর সঙ্গে পলিসি লেভেলে কাজ করে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করাই আমার অন্যতম লক্ষ্য। সরকারের উচিত পলিসি লেভেলে কাজ করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা। এ কাজগুলো করতে পারলে সবার স্বার্থ রক্ষা হবে ।’

জসিম উদ্দিন বলেন, গত দুই-তিন বছরে বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে তেমন বিনিয়োগ হয়নি। কিন্তু এরপরও রাজস্ব কিন্তু কম হয়নি। এর কারণ হচ্ছে- সরকার বড় বড় প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। এ কারণে জিডিপির প্রবৃদ্ধিও বেড়েছে। এর অর্থ হচ্ছে- সরকার বড় বড় প্রকল্প নিয়ে আসছে, আর এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশের বেসরকারি খাত অর্থাৎ বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের পণ্য দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, উৎপাদন বাড়ছে।

করোনা মহামারীর প্রবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা- এ বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক স্থাপন করেছে। প্রবাসীদের সুরক্ষায় এ ব্যাংক প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করতে পারে। শ্রমিকদের সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ দিয়ে পুঁজির ব্যবস্থা করলে তারা অর্থনীতিতে অনেক অবদান রাখতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকও লাভবান হলো, শ্রমিকরাও উপকৃত হলেন।

এছাড়া জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়অ উচিত বলে মনে করেন জসিম উদ্দিন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ৬৫ শতাংশ জনসংখ্যা কর্মক্ষম। পৃথিবীতে কম দেশ আছে যে, এত মানুষ কর্মক্ষম। উন্নত দেশে সরকারের অনেক কর্মসূচি আছে। সেসব জায়গায় কিন্তু কর্মসংস্থান হচ্ছে। বেসরকারি খাতেও অনেক কর্মসংস্থান হচ্ছে। গ্রামেগঞ্জে অনেক কর্মসংস্থান হচ্ছে, যা আমাদের চোখে পড়ে না। অনেকে অনানুষ্ঠানিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

‘অনেক শিক্ষিত যুবক এখন মাছ চাষ করছেন, কৃষিকাজ করছেন, ফলের চাষ করছেন। যেটি আগে ছিল না। তাদের প্রশিক্ষিত করা দরকার। বিদেশে বাংলাদেশের ৭০ থেকে ৭৫ লাখ কর্মী কাজ করে ২২ থেকে ২৩ বিলিয়ন ডলার পাঠান। অথচ অল্পসংখ্যক বিদেশি আমাদের দেশে কাজ করে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছেন। তা হচ্ছে শুধু দক্ষ হওয়ার কারণে।’

ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমাদের যে জনগোষ্ঠী রয়েছে, তাদের দক্ষ করে তুলতে পারলে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। পাশাপাশি দেশের টাকা দেশেই রাখা সম্ভব হবে। দক্ষতার উন্নয়নে সরকার বেশকিছু কাজ করছে; কিন্তু সমস্যা হচ্ছে- প্রয়োজন অনুযায়ী দক্ষ হচ্ছে কিনা। তাদের কোন বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দিলে কাজ বেশি হতে পারে। কেবল দক্ষ কর্মী নয়, দক্ষ ম্যানেজার দরকার। সাপ্লাই চেইনে দক্ষ লোক দরকার। এসব জায়গায় কাজ করতে পারলে কর্মসংস্থান হতে পারে।

‘সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করছে। সেখানে শিল্প-কারখানার পাশাপাশি আবাসিক এলাকা থাকবে; স্কুল কলেজ, হাসপাতালসহ একটি শহরের যেসব সুবিধা থাকে সবকিছুই থাকবে। একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল একেকটি জেলার সমপরিমাণ। তখন বিকেন্দ্রীকরণ হবে। বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে,’ বলেন তিনি।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান করোনার দ্বিতীয় ধাপ মোকাবেলার বিষয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, মহামারী করোনা একটি সংক্রামক ব্যাধি। সবাইকে সতর্কতার সঙ্গে নিজেদের রক্ষা করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

নারী উদ্যোক্তাদের এসএমই ঋণ পাওয়ার বিষয়ে করণীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী এসএমইর জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন; কিন্তু বণ্টনের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা আছে। এর কারণ হচ্ছে- কোনো ব্যাংক ঝুঁকি নিতে চায় না, বাড়তি ঝামেলায় পড়তে চায় না। আবার অনেক ব্যাংকের প্রান্তিক পর্যায়ে গিয়ে ঋণ দেওয়ার সক্ষমতাও নেই। এছাড়া ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব শর্ত দেওয়া হয়, তা নারী উদ্যোক্তাদের অনেকেই পূরণ করতে পারেন না। এক্ষেত্রে এফবিসিসিআই ব্যাংকগুলোর সঙ্গে মিলে কাজ করবে, যেন সহজে নারী উদ্যোক্তারা ঋণ পান।

বর্তমানে অনলাইন প্লাটফর্মে ব্যবসা সম্প্রসারণে সীমাবদ্ধতা নিয়েও কথা বলেন তিনি। জসিম উদ্দিন বলেন, করোনার মধ্যে দেশের অনেক মানুষ ঘরে বসেই কেনাকাটা করছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছু বাধার সৃষ্টি হয়েছে। যেমন- চোখে দেখে কেনার মধ্যে আলাদা শান্তি আছে। কারণ সে দেখে বুঝে-শুনে পণ্যটি ক্রয় করেছে; কিন্তু অনলাইনে কেনার ক্ষেত্রে ছবি দেখে অর্ডার দিতে হয়। এক্ষেত্রে অভিযোগ উঠে, অনেক ক্রেতা পণ্য কিনে ঠকেছেন।

‘পণ্যের মান ভালো না হওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতারণার শিকার হয়েছেন অনেকে। ফলে কিছু অসাধুর কারণে এখন অনেক ভালো ব্যবসায়ীও মার খাচ্ছেন। আরেকটা বিষয় হচ্ছে- অনেক অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে কোনো রেজিস্ট্রেশন না থাকায় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে এফবিসিসিআই কাজ করবে,’ যোগ করেন তিনি।

কালের আলো/এডিবি/এমআরকে