পাহাড়ে উন্নয়নের বার্তা, বদলে যাচ্ছে জনজীবন

প্রকাশিতঃ 10:23 am | June 04, 2021

কালের আলো সংবাদদাতা:

নীলচে পাহাড়ে স্বঘোষিত আঞ্চলিক দুটি দলের রেষারেষি স্বত্ত্বেও প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছে সরকার। পাহাড়ে এ ধরনের উন্নয়নের বার্তায় পাল্টে যাচ্ছে সেখানকার আর্থ-সামাজিক চিত্র।

বর্তমানে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ির গভীর সীমান্ত এলাকা সংলগ্ন প্রায় ৮০০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে। যা ভারতের মিজোরাম, মিয়ানমার এবং ত্রিপুরার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ছাড়াও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থার যৌথ কর্মকাণ্ডে এগিয়ে চলছে এসব উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ। উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে সেনাবাহিনীর ব্যাপক কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, এসব প্রকল্পের সরাসরি দেখভাল করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দীর্ঘদিনের সংঘাতময় পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে এক ঐতিহাসিক চুক্তি সই হয়। এটি বিশ্ব ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। তবে ওই চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ায় এখনও প্রায়ই পাহাড়ে অস্থিরতার খবর পাওয়া যায়। যা খুবই অনিভিপ্রেত।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার শান্তি চুক্তির আলোকে পার্বত্য অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলকে ঢেলে সাজাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারের পদক্ষেপের ফলে আজ পার্বত্য জেলাসমূহ কোনো পিছিয়ে পড়া জনপদ নয়। দেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এ অঞ্চলের জনগণ সম-অংশীদার। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সর্বত্র শান্তি বজায় রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে সব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, পাহাড়ের তিন জেলায় ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে গত ২২ বছরে ৬০০-এরও বেশি তাজা প্রাণ ঝরে গেছে। এখনও আঞ্চলিক দলগুলোর আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রায়ই হত্যাকাণ্ড ও অপহরণের ঘটনা ঘটে। এতে চরম আতঙ্ক বিরাজ করে পাহাড়ে।

স্থানীয় লোকজন বলেছেন, পার্বত্য অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারে অবৈধ অস্ত্র মজুদ করে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে সন্ত্রাসীরা। এতে ভয় আর ক্ষতি যা হয় তা সবই সাধারণ মানুষের। এ ধরনের অবস্থা সৃষ্টি হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তিন পার্বত্য জেলার পর্যটন খাতেও।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, এক শ্রেণীর মানুষ আছে যারা পাহাড়ের উন্নয়ন চায় না। তারা সব সময় সহিংসতার মাধ্যমে পাহাড়ের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে। অতীতে কোনো সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ভাবেনি, যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে পিছিয়ে ছিল।

‘বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় যেসব উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে, তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে এবং এ উন্নয়ন প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করবে পার্বত্যবাসী,’ যোগ করেন তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক বোর্ড সূত্রে জানা যায়, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের সীমান্তবর্তী এলাকায় নতুন একশ বিওপি (বর্ডার আউট পোস্ট) প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।

এছাড়া ৮০০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ হচ্ছে, যা তিন পার্বত্য জেলার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের পাশাপাশি মিয়ানমার, ভারতের মিজোরাম এবং ত্রিপুরার সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নব অধ্যায়ের সূচনা ঘটাবে।

এছাড়াও প্রতিটি জেলার গহীন অরণ্যের উপজেলাগুলোয় উন্নয়নের ফলে পাল্টে গেছে পাহাড়ের চেহারা। নতুন সড়ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যোগাযোগ ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে মাইলফলক। অপরদিকে মেডিক্যাল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ফলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবনে শিক্ষালাভে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।

বীর বাহাদুর উ শৈসিং বলেন, বর্তমান সরকার উন্নয়নবান্ধব, এ সরকারের সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগসহ সব খাতে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।

সরকারের এত বিশাল কর্মযজ্ঞের পরও এসব স্বঘোষিত আঞ্চলিক দলগুলো কেন তাদের ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত থেকে সরে আসছে না- এ জিজ্ঞাসা এখন সাধারণ অধিবাসীর মনেও!

কালের আলো/এসকে/আরবিএ