প্রকৃতিতে মধুমাস, বাজারে আম-কাঁঠাল ও লিচুর সমাহার
প্রকাশিতঃ 6:05 pm | June 06, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো
ঋতু চক্রে প্রকৃতিতে এসেছে মধুমাস জ্যৈষ্ঠ। জ্যৈষ্ঠ মানেই আম, কাঁঠাল, জাম আর লিচুসহ নানা মৌসুমী ফলের সমাহার।
আম সে তো ফলের রাজা। বাজার ছেয়ে গেছে এই রসালো ও সুস্বাদু ফলে। শুরুতে অপরিপক্ক ফল খেলেও জ্যৈষ্ঠের শেষে বাজারে পুরোদমে মিলছে বাহারি আমসহ অন্যান্য ফল। এসব ফলের দাম নাগালের মধ্যে থাকায় খুশি ক্রেতারাও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জৈষ্ঠ্যের প্রথম সপ্তাহ থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে প্রবেশ করতে থাকে নানা জাতের সুস্বাদু ও রসালো ফল। আর এখন মাসের শেষভাগে এসে সরবরাহ বেড়েছে কয়েকগুণ। জমে ওঠেছে বেচাকেনাও।
খাওয়ার জন্য খাওয়ানোর জন্য ফলের যেন কোনো অভাব নেই। কাঁঠাল, কদবেল, জাম জামরুল, লটকন, আনারস, তাল, তরমুজ- আরও কত কী! সবই পাওয়া যাচ্ছে বাজারে!
বিক্রেতারা জানান, মধুমাসের সূচনা বরাবরের মতো লিচু দিয়ে হয়েছিল। মিষ্টি রসালো ফল চলে এসেছিল জৈষ্ঠ্যের আগে। ঢাকার বাজারে প্রথম আসে পার্শ্ববর্তী জেলা সোনারগাঁওয়ের লিচু।
এর পরপরই প্রবেশ করে ঈশ্বরদীতে উৎপাদিত লিচু। বর্তমানে এ লিচুও শেষ হওয়ার পথে। তবে মূল দৃষ্টি ছিল দিনাজপুরের লিচুর দিকে। এক সপ্তাহ আগে দিনাজপুরের লিচু বাজারে ঢুকেছে। পাওয়া যাচ্ছে রাজশাহীর লিচুও।
এখন আমের বাজার তুঙ্গে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ যেমন আছে, তেমনই দামও বেশ ভালো। এতে খুশি বিক্রেতা ও ক্রেতারা। তবে লিচু নিয়ে বিক্রেতাদের মধ্যে একটা আক্ষেপ রয়েছে।

কাওরান বাজারের মেসার্স কিরণ ট্রেডার্সের সহকাীর ব্যবস্থাপক আবদুস সালাম বলেন, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে লিচু পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। এখন পর্যন্ত প্রায় এক কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়েছে।
‘তবে গতবছর তিন কোটি টাকার লিচু বিক্রি করেছি। এবার সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় ফলন কম হয়েছে। তাই বাজারে লিচু দেখতে অনেক বেশি মনে হলেও, আসলে অন্য বছরের তুলনায় কম। তাই লিচু আসতে না আসতেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।’
সায়েদাবাদ কাঁচাবাজারের সামনে লিচুর খুচরা বিক্রেতা সালাউদ্দিন বলেন, শুরুতে স্থানীয় জাতের লিচু বিক্রি করেছি। একন আসছে চায়না থ্রি। এই জাতের লিচুতে স্বাদ বেশি বলে ক্রেতারা কিনতেও চান বেশি।
তাঁর সঙ্গে যোগ করেন, পাশের আরেক বিক্রেতা নাজিমুদ্দিন বলেন, চায়না থ্রি আকারে বেশ বড়। খেতেও খুব মিষ্টি। তাই দামও বেশি।
চায়না থ্রি জাতের ১০০ লিচু ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বোম্বাই লিচুর দাম ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা।
লিচুর সিজন শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন বাজারে শেষ মুহূর্তের বেচাকেনা চলছে বলে জানান নাজিমুদ্দিন।

এদিকে আমের সরবরাহ প্রচুর জানিয়ে কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা সুলেমান হাজারী বলেন, বাজারে এখন আমের চাহিদা বেড়েছে। প্রায় সব জাতের আমই পাওয়া যাচ্ছে। এখন প্রায় সব আমই খাওয়ার মতো। মৌসুমের শুরুতে গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে যুক্ত হয়েছে নানা জাতের আম। চাঁপাইনবাবগঞ্জের হিমসাগর ও ল্যাংড়ার চাহিদা এখন বেশি। গত প্রায় ১৫ দিন ধরে এ আম বাজারে আছে।
‘রূপালী ঢুকেছে কয়েকদিন হলো। আগামী সপ্তাহে হাড়িভাঙ্গা ও আম্রপালি বাজারে আসবে,’ বলেন তিনি।
কারওয়ান বাজারের একটি দোকান থেকে আম নিয়ে ফিরছিলেন বেসরকারি চাকুরে ফয়সাল আরেফিন। জানালেন, প্রতিদিনই আম কিনি। দামে সাশ্রয়ী, মানেও ভালো।
বাড্ডা এলাকার হোসেন মার্কেটের সামনে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত রাজশাহী আম ঘরের বিক্রয়কর্মী হাসিবুর রহমান জানান, তারা সরাসরি চাঁপাই নবাবগঞ্জের বাগান থেকে আম নিয়ে আসছেন। কোনো ধরনের কেমিক্যাল না থাকায় তাদের আমের চাহিদাও বেশি।
বাজার দর বিষয়ে তিনি জানান, বর্তমানে হিমসাগর বিক্রি করছেন ৬০ টাকা কেজি। ল্যাংড়া বিক্রি করছেন ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি।

হাসিব জানান, আষাঢ়ের শুরুতে ফজলি আম আসবে। একইসঙ্গে বাজারে ঢুকবে আশ্বিনী। এ দুই আম দিয়ে মৌসুম শেষ হবে।
ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম কালের আলোকে বলেন, এবার ফলন ভালো, ক্রেতারাও সস্তায় পাচ্ছেন। মানসম্মত ফল যাতে বাজারে সরবরাহ করা হয় সেজন্য আমরা সার্বিক খোঁজখবর নিচ্ছি।
এদিকে দোকানের মতো অনলাইনেও অনেকে আমসহ নানা ফল বিক্রি করছেন। দিন যত যাচ্ছে রাজধানীর বাজার, অলিগলি ও ফুটপাতের দোকান, ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা কিংবা ভ্যানে যেমন পসরা বাড়ছে, তেমনি মহামারীকালে অনলাইনেও বড় পরিসরে আম বিক্রি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
অসংখ্য ওয়েবসাইট ও ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে রাজধানী ও এলাকাভিত্তিক উদ্যোক্তারা বিভিন্ন জাতের আম বিক্রি করছেন। দামও দোকানে বিক্রি করা আমের কাছাকাছি কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।
উল্লেখ্য, মহামারী করোনায় কৃষকদের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকা রুটে সরাসরি আম পরিবহনের জন্য স্পেশাল ‘ম্যাংগো ট্রেনে’র ব্যবস্থা করেছে সরকার।
কালের আলো/এমএ/এমএম