সরকারি নিয়োগের দুয়ার খুলছে, ছাড় থাকছে বয়সসীমায়
প্রকাশিতঃ 10:30 am | June 07, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
গত বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে বিভিন্ন নিয়োগপ্রক্রিয়া স্থগিত করে দেয় সরকার। এ ঘটনার এক বছর পর ফের স্থবির হয়ে থাকা নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর মধ্যে দিয়ে সরকারি চাকরির দুয়ার খুলতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে করোনার নির্দিষ্ট সময়ে আবেদনের ক্ষেত্রে বয়সসীমায়ও ছাড় দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতোমধ্যে ৩৮তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডার প্রথম শ্রেণি (নবম গ্রেড) পদে ৭৮০ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন-পিএসসি। পুলিশে ১০ হাজার কনস্টেবল নিয়োগ করা হচ্ছে, যার বিজ্ঞপ্তি চলতি মাসেই প্রকাশিত হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫৪ হাজার ৩০৪ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়াও চলছে।
সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক বছর সরকারি নিয়োগ কার্যক্রম স্থবির থাকার পর বর্তমানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছোট আকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করতে সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে সেগুলোও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু করা হচ্ছে। বেশি আকারে আবেদনকারী হলে ধাপ ধাপে পরীক্ষা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি সব স্তরের নিয়োগ কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা হবে।
এর অংশ হিসেবে নতুনভাবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করেছে সরকারি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ পিএসসি।
পিএসসির কর্মকর্তারা বলছেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে যে চাহিদা পাঠানো হয়েছে তার ভিত্তিতে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করে যোগ্যদের তালিকা তৈরি করে ইতোমধ্যেই পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে নতুন করে বেশ কয়েকটি সরকারি দপ্তর-সংস্থায় জনবল নিয়োগের চাহিদা এসেছে। ইতোমধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
জানা গেছে, করোনার কারণে সিদ্ধান্ত হয়েও আটকে থাকা সরকারি নিয়োগে প্রার্থীদের বয়স সীমায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে বিসিএসের বেলায় এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না। যেসব মন্ত্রণালয় বা অধীন প্রতিষ্ঠান সরাসরি নিয়োগে গত বছরের ২৫ মার্চের আগে নিয়োগের জন্য ছাড়পত্রসহ প্রস্তুতি নিয়েও করোনার কারণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারেনি, এখন সেসব বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে গত বছরের ২৫ মার্চ তারিখ ধরতে বলেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে প্রবেশে সাধারণত বয়সসীমা ৩০ বছর। এখন যাদের বয়স গত বছরের ২৫ মার্চ ৩০ বছর হয়ে গেছে, তারাও এখন প্রকাশিত ও প্রকাশিতব্য ওইসব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদন করতে পারবেন।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম বলেন, সরকারি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে বিপুল পরিমাণে প্রার্থী আবেদন করে থাকেন। করোনার কারণে তাদের একসঙ্গে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে অনেক দপ্তর-সংস্থার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেও তা স্থগিত রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছোট আকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করতে সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে সেগুলোও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শুরু করা হচ্ছে। বেশি আকারে আবেদনকারী হলে ধাপ ধাপে পরীক্ষা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
‘আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি সব স্তরের নিয়োগ কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা হবে,’ যোগ করেন সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর বিভিন্ন ধাপে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। ধাপে ধাপে লকডাউন ও সরকারি বিধিনিষেধ জারি করা হয়। মাঝে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হলেও এ বছর নতুন করে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে এই বিধিনিষেধ আবারো জারি করা হয়। নতুন করে এ নিষেধাজ্ঞা ১৬ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এ অবস্থায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সরকারি নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ দুই শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগও রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানেই লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হওয়ার পরও নিয়োগ কার্যক্রম ঝুলে আছে। কোনো কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও নেওয়া হচ্ছে না পরীক্ষা।
এদিকে গত বছরের মার্চে করোনা পরিস্থিতি শুরু হলেও তার আগের মাসে (ফেব্রুয়ারি) প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে ২০টি মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও সংস্থায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।
পরে মার্চে ১৫টি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও সে বছরে নার্স ছাড়া আর তেমন উল্লেখযোগ্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। চলতি বছরের শুরুতে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে জানুয়ারি থেকে আবারো নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করে পিএসসি।
কিন্তু গত দুই মাস ধরে করোনার প্রকোপ আবারও বেড়ে যাওয়ায় নিয়োগ কার্যক্রমে অনেকটা স্থবিরতা তৈরি হয়েছে।
তবে চাহিদা মোতাবেক সরকারি জনবল নিয়োগে পরীক্ষার আয়োজন করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (নন ক্যাডার) নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকারি নিয়োগের চাহিদা কমে গেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে যে চাহিদা পাঠানো হয়েছে তার ভিত্তিতে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করে যোগ্যদের তালিকা তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে নতুন করে বেশ কয়েকটি সরকারি দপ্তর-সংস্থায় জনবল নিয়োগের চাহিদা এসেছে। ইতোমধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষ করে চূড়ান্তভাবে পাস করা প্রার্থীদের তালিকা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হবে।
আসছে পুলিশের বিশাল নিয়োগ
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নতুন করে আরো ১০ হাজার পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ দেওয়া হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
এই বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ বিভাগের এআইজি মো. সোহেল রানা বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আধুনিক ও ত্রুটিমুক্ত করতে কাজ চলছে। এটা শেষ হলেই এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এগিয়েছে ৫৪ হাজার বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া
দেশজুড়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫৪ হাজার ৩০৪ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। গত ৪ এপ্রিল থেকে আবেদন শুরু হয়ে ৩০ এপ্রিল শেষ হয়েছে।
অচিরেই এ নিয়োগে চূড়ান্ত কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা।
কালের আলো/এসআরকে/এমএম