৬৩ জেলায় ট্রেন যাবে, উন্নত হচ্ছে যাত্রীসেবা

প্রকাশিতঃ 10:17 am | June 14, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

রেলকে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গুরুত্বপূর্ণ এই খাতকে আধুনিক ও যুগোপযোগী যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশজুড়ে ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০৪৫ সাল পর্যন্ত ৬টি ধাপে এই নতুন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে রেলওয়ে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে রেলের সার্বিক চিত্র। এতে রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি যাত্রীসেবারও আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রেলের মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের সক্ষমতা বৃদ্ধি, ভ্রমণ সময় হ্রাস করা, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন রেলপথ নির্মাণ ও গুরুত্বপূর্ণ করিডোরগুলো ডাবল লাইনে উন্নীতকরণ করা হবে। এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ২০৪৫ সালের মধ্যেই ভোলা ছাড়া দেশের সব জেলায় ট্রেনে যাতায়াত সম্ভব হবে।

তবে ওই সময়ে যদি ব্রিজ বা সাগরের নিচ দিয়ে টানেল করা সম্ভব হয় তা হলে ভোলা জেলাকেও ট্রেন নেটওয়ার্কের আওতায় আনা যাবে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের ৪৪টি জেলা রেল নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত রয়েছে। ২০২২ সাল নাগাদ দেশের আরও ৯টি জেলা রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। রেলওয়ের বিদ্যমান মাস্টারপ্ল্যান সম্প্রতি হালনাগাদ করা হয়েছে, যার মেয়াদ ধরা হয়েছে ৩০ বছর (২০১৬-২০৪৫)।

সরকারের অষ্টম-পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রেলওয়ে মহাপরিকল্পনায় অন্তর্ভুুক্ত প্রকল্প পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ৮৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে।

সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ও পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ, সারা দেশে ডুয়েল গেজ রেলপথ স্থাপনের মাধ্যমে পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে পশ্চিমাঞ্চলের সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ, বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে রেল সেতু নির্মাণ, যমুনা নদীর ওপর বাহাদুরাবাদ-ফুলছড়ি এলাকায় আরেকটি রেল সেতু নির্মাণ এবং পদ্মা নদীর ওপর আরও একটি রেল সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে এই মহাপরিকল্পনায়।

এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল করিডোরকে সম্পূর্ণভাবে ডাবল লাইনে উন্নীত করা, ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ, ৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার নতুন ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ, ২ হাজার ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কাশিয়ানী-গোপালগঞ্জ-টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ, ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের নিকটবর্তী ঘুনদুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প।

ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেললাইনও নির্মিত হচ্ছে এই মহাপরিকল্পনা মোতাবেক। এ ছাড়া ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত হাইস্পিড ট্রেনও চালু করা হবে।

আখাউড়া-সিলেটের মধ্যে ৭ হাজার কোটি টাকায় ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, রাজধানীর চারপাশে এলিভেটেড সার্কুলার রেলপথ নির্মাণ, জয়দেবপুর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ডাবল লাইন রেলপথ, বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে ঈশ^রদী পর্যন্ত ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ করা হবে।

রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন কালের আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী মহিপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এরই আওতায় দেশের প্রতিটি জেলা রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

‘রেল খাতে সেবার মান বাড়িয়ে যুগোপযোগী করে মানুষের চাহিদার কাছাকাছি নিয়ে যাওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য,’ যোগ করেন তিনি।

রেলমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ১০টি মেগা প্রকল্পের মধ্যে রেলের দুটি প্রকল্প রয়েছে। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রেল।

ভবিষ্যতে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও চীনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ট্রান্স এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

কালের আলো/এমএ/ডিএসবি