আগামী ১০ বছরে ২৫ শতাংশ বৃক্ষাচ্ছাদিত ভূমির পরিকল্পনা

প্রকাশিতঃ 10:11 am | June 28, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা, সবুজায়ন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশগত মানোন্নয়ন করে আগামী ১০ বছরে ২৫ শতাংশ বনায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্ভাব্য প্রভাব নিরসনে ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ নামে একশ বছরের কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে। এ কর্মকৌশলকে সামনে রেখে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের দক্ষ নেতৃত্বে কাজ করছে মন্ত্রণালয়ের সকল বিভাগ।

তথ্য মতে, পরিবেশ বিপর্যয় ঘটিয়ে পৃথিবীতে মানব বসতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন। যার কারণে পরিবেশ রক্ষায় বিশ্বব্যাপী সচেতনতামূলক কর্মসূচি চলছে। পরিবেশ বিপর্যয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০ লাখ প্রজাতি বিলুপ্ত হতে পারে।

২০৭০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রতি তিনটির মধ্যে একটি প্রজাতি বিলুপ্ত হতে পারে। গত ৫০ বছরে গড়ে ৬০ শতাংশের বেশি বন্যপ্রাণী হ্রাস পেয়েছে। সে হিসাবে গত ১০ মিলিয়ন বছরের তুলনায় বর্তমানে প্রজাতি বিলুপ্তির গড় হার ১০ থেকে ১০০ গুণ বেশি। পৃথিবীব্যাপী বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভগুলো মনুষ্য কর্মকাণ্ডে অস্বাভাবিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পৃথিবীর ৭৫ শতাংশ ভূ-ভাগে মানুষ ভূমি ব্যবহার পরিবর্তন করেছে। বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ সামুদ্রিক প্রতিবেশ পরিবেশগত হুমকির সম্মুখীন। ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ৩২ মিলিয়ন হেক্টর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয় রোধ এবং পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে।

এতে একদিকে যেমন সচেতনতা বাড়াতে কাজ চলছে, উল্টো দিকে ধ্বংসের কাজ চলছে। গত ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান-২০২১ এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন চত্বরে ডুমুর ও সোনালু প্রজাতির বৃক্ষরোপণ করে এই কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষেও নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি।

সূত্র জানায়, মুজিববর্ষের কর্মসূচিসহ গত এক বছরে বনবিভাগের মাধ্যমে দেশে মোট আট কোটি ৬১ লাখ ৬২ হাজার বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। এক কোটি চারা রোপণের পাশাপাশি চলতি বছরে বন অধিদপ্তর কর্তৃক বিভিন্ন প্রকল্প ও রাজস্ব বাজেটের আওতায় ১৪ হাজার ৬৬৯ হেক্টর ব্লক বাগান, ১৬১০ কিলোমিটার স্ট্রিপ বাগান এবং উপকূলীয় এলাকায় ১০ হাজার ৭৭ হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগান সৃজনের মাধ্যমে সাত কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার চারা রোপণ করা হয়েছে।

এছাড়াও জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে মোট ১৪ লাখ ৮০ হাজারটি বিভিন্ন প্রজাতির বনজ, ফলদ ও ঔষধি বৃক্ষের চারা সারা দেশে রোপণের জন্য বিতরণ করা হয়েছে। বৃক্ষ জলবায়ু পরিবর্তন রোধ, কার্বন নিঃসরণ প্রশমণ, অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি, খাদ্য-পুষ্টিসহ দেশের বৃক্ষাচ্ছাদন বৃদ্ধিসহ দেশের পরিবেশ ও প্রতিবেশ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য রক্ষা অর্ডিন্যান্স ১৯৭৩ জারি করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় নামে পৃথক একটি মন্ত্রণালয় গঠন করে এবং পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নাম পরিবর্তন করে পরিবেশ অধিদপ্তর করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হয়।

পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অধ্যায়ের ১৮(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন।’

তাই, জীববৈচিত্র্য ও প্রতিবেশ সংরক্ষণ এখন আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরিবেশ অধিদপ্তর এ বাধ্যবাধকতা বাস্তবায়নে নির্মোহভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার পরিবেশ সংরক্ষণ কার্যক্রমকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের জনবল বৃদ্ধি করে এক হাজার ৮৭ জনে উন্নীত করেছে এবং দেশের প্রতিটি জেলায় অফিস চালু করার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়  বলছে, ১৯৯২ সালে প্রথম পরিবেশ নীতি, ১৯৯৫ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৭ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা এবং ২০১০ সালে পরিবেশ আদালত আইন বলবৎ করে। জীববৈচিত্র্য এবং প্রতিবেশ সংরক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে লাল শ্রেণিভুক্ত সকল শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ ও পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক করা হয়।

প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে সরকার দেশের ১৩টি এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে। প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় প্রতিবেশ সংকটাপন্ন হওয়ার সম্ভাব্য সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১৬-এর নিষিদ্ধ কার্যক্রমসমূহ দণ্ডনীয় অপরাধ। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশ সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় ‘প্রতিবেশগত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্যের উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় সমাজভিত্তিক অভিযোজন কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। টাঙুয়ার হাওরের প্রতিবেশ সুরক্ষায় আগে বাস্তবায়িত প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় নতুন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সমুদ্র প্রতিবেশ সংরক্ষণ, সমুদ্রদূষণ রোধ, সমুদ্র সম্পদ আহরণে ও সমুদ্র সম্পদের পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ, সামুদ্রিক ও উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে উন্নয়নের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর ব্লু-ইকোনমি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সমুদ্র জীববৈচিত্র্য এবং প্রতিবেশসম্পদ জরিপ সম্পাদনের লক্ষ্যে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। পাহাড় কর্তন রোধকল্পে  প্রজ্ঞাপন জারি করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা কালের আলোকে বলেন, নতুন প্রজন্মের জন্য টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে কাজ করছে সরকার। এ লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ ভূমি বৃক্ষাচ্ছাদিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

কালের আলো/ডিআরবি/এমএ