মিয়ানমারের ভূমিকায় আমরা আশাহত: জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 8:44 am | September 28, 2018

কালের আলো ডেস্ক:

গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ফিরিয়ে নিতে বারবার আশ্বাস দিয়েও তা বাস্তবায়ন করছে না মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। তাদের এই ‘ছলচাতুরির’ কথা তুলে ধরে জাতিসংঘে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্ব সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের সঙ্গে মিয়ানমারের যে চুক্তি হয়েছে- আমরা তার আশু বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতা দেখতে চাই। আমরা দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।’

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকালে (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোর) নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা এখানে রয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ মিয়ানমার নাগরিকের চাপ সামলাচ্ছে বাংলাদেশ।

ইতোমধ্যে মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে বলে চুক্তিতে সই করলেও এর কোনো বাস্তবায়ন করছে না। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক চাপকেও উপেক্ষা করছে দেশটি।

জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় সবচেয়ে গুরুত্ব পায় রোহিঙ্গা ইস্যু। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমরা আশাহত হয়েছি, কেননা আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী ও টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হয়নি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিয়ানমার মৌখিকভাবে সব সময়ই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে বলে অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে তারা কোনো কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে না।’

মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন মানুষ হিসেবে রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশাকে আমরা যেমন অগ্রাহ্য করতে পারি না, তেমনি পারি না নিশ্চুপ থাকতে। মিয়ানমার প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় প্রথম থেকেই আমরা আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে আসছি। কিন্তু পরিস্থিতির দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন হয়নি।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ তাদের সাধ্যমত রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, নিরাপত্তা, শিশুদের যত্নের ব্যবস্থা করেছে। এই কাজে জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, ওআইসিসহ বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা যতদিন তাদের দেশে ফেরত যেতে না পারছে, ততদিন তাদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রেখে নতুন আবাসন নির্মাণের কাজে সরকার হাত দিয়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এ কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে রোহিঙ্গারা যাতে সেখানে যেতে পারেন তার জন্যও আমি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা চাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের যে বিবরণ জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, তাতে আমরা হতভম্ব। আমরা আশা করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের ওপর ঘটে যাওয়া অত্যাচার ও অবিচারের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবে।’

জাতিসংঘের ৭৩ বছরের ইতিহাসে চতুর্থ নারী হিসেবে সাধারণ পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় মারিয়া ফের্নান্দা এসপিনোসা গার্সেসকে বক্তব্যের শুরুতেই অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়ন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

কালের আলো/এমএইচ