অন্ধকার গলি থেকে আলোর পথযাত্রী হতে চায় এই শিশুরা
প্রকাশিতঃ 7:42 pm | September 30, 2018
উবায়দুল হক, আউটপুট এডিটর:
নাম বন্যা, বয়স সাত কি আট। থাকে ময়মনসিংহের গাঙ্গিনারপাড়ের রমেশ সেন রোডে অবস্থিত যৌনপল্লীতে। অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে প্রায় সময়ই খেলাধুলায় মেতে থাকে। তবে সবকিছুই চলে তার একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির ভেতরে। কেননা তার জন্ম অন্ধকার গলিতে। মায়ের পেশার কারণে জন্ম সূত্রেই অন্ধকার গলির বাসিন্দা সে।
যৌনপল্লীর আরেক শিশু শান্তা। আলাপচারিতার সময় সে আক্ষেপ নিয়ে বলতে থাকে, ‘আমি স্কুলে যাইতে চাই, স্কুলে গিয়া পড়াশোনা করমু। এই জায়গায় আমার ভাল্লাগেনা। কিন্তু কেউ আমারে স্কুলে লইয়া যায় না, কেউ পড়া শিখায় না।’
বন্যা, শান্তার মতো একই অবস্থা এ পল্লীতে বেড়ে ওঠা প্রত্যেক শিশুরই।
জানা গেছে, যৌনকর্মীরা ছেলে সন্তানের চেয়ে কন্যা সন্তানেই খুশি হন বেশি। কেন তাদের কাছে কন্যা সন্তানের কদর এতো বেশি জানতে চাইলে একজন মা বলেন,‘ছেলে সন্তান যতই বড় হয় ততই বিপথগামী হতে থাকে। আমাদের অবাধ্য হয়ে পড়ে। নেশায় আসক্ত হয়ে মায়ের ওপরও হাত তুলে। অপরদিকে মেয়ে সন্তান আমাদের হাতের কবজায় থাকে। মায়ের কথার বিরুদ্ধে যায় না তারা।’
এদিকে বুঝতে শেখার পর যৌনপল্লীর পরিবেশ সম্পর্কে জানতে থাকে শিশুরা। অন্যের ইচ্ছায় অপ্রাপ্ত বয়সেই জড়িয়ে পড়ে আদিম এ পেশায়। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এমন পরিবেশে কতটা নিরাপদ কন্যা শিশুরা?
তবে মায়েরা বলছেন, আগের সেই অবস্থান এখন পাল্টেছে। তারা চান না তাদের সন্তান এ পেশায় আসুক।
শিশুদের অধিকার নিয়ে যারা ভাবেন, তারা যৌনপল্লীর কন্যা শিশুদের সুরক্ষায় শেল্টারহোমের ব্যবস্থার কথা বলছেন দীর্ঘদিন ধরে। শুকতারা কল্যাণ সংস্থার সভাপতি লাভলী বেগম বলেন,‘আমাদের যদি একটি শেল্টারহোম থাকত তাহলে যৌনকর্মীদের বাচ্চাদের পড়াশোনা করানো সম্ভব হতো। তাদের জীবনকে আলোকিত করাও সম্ভব হতো। শিশুরা সব সময় মায়েদের এসব কাজ দেখছে। তবে কোনো মা-ই চায়না সন্তান এ পেশায় আসুক। তারা সব সময় চায় তাদের মেয়েরা এ পেশা থেকে বাইরে থাকুক, বাইরের পরিবেশে বেড়ে উঠুক। এ বিষয়ে যদি কেউ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে যৌনকর্মীদের সন্তানদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে।’
জাতীয় কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম ময়মনসিংহ জেলার আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের বৃহত্তর ময়মনসিংহের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শিব্বির আহমেদ লিটন বলেন,‘আমরা এখনো দেখি পতিতালয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের দিয়ে যৌন ব্যবসা করানো হচ্ছে। এটিও দেখি যে, অনেক কন্যা শিশুকে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজের মেয়ে হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছে। এটি রুখতে রাষ্ট্রকেই এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।’
কন্যা শিশু হওয়ার কারণে শিক্ষা-বিনোদন তো দূরের কথা মানুষ হিসেবে তাদের যে অধিকার সেটিও তারা পাচ্ছে না উল্লেখ করে লিটন বলেন,‘আমরা চাই প্রতিটা কন্যা শিশু জন্মগ্রহণ করার পর থেকে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠবে এবং তাদের নাগরিক অধিকার রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে। যৌনপল্লীর কন্যা শিশুদের সুরক্ষার জন্য আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আনা হয়।’
কালের আলো/ওএইচ