একাদশ সংসদ নির্বাচনকেই বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন আইজিপি
প্রকাশিতঃ 12:07 pm | October 01, 2018
অ্যাক্টিং এডিটর, কালের আলো:
প্রায় ৮ মাস আগে যখন নিজ কাঁধে বাংলাদেশ পুলিশের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন সেদিন জঙ্গিবাদ দমন ও মাদক নির্মূলকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার)। সময়ের গতিধারায় নানামুখী অ্যাকশন বা পদক্ষেপে জঙ্গিরা আর মাথা তুলতে পারেনি।
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে দক্ষতার সঙ্গে পুলিশ বাহিনী সফল ভূমিকা রেখেছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমন কৃতিত্ব দিয়েছেন একাধিকবার। এই সময়টাতে মাদক পুরোপুরি নির্মূল করতে না পারলেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থানেই ছিলেন এবং আছেন এই পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)।
তবে এবার সবকিছু ছাপিয়ে পুলিশ প্রধানের ভাবনা-চিন্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে এগিয়ে আসা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর এই নির্বাচনকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবেই মনে করছেন ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সব রকমের সহযোগিতা দিতেই জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ। সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরে নিজ কক্ষে কালের আলো’র সঙ্গে আলাপকালে এমন কথাই জানান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
কালের আলোকে তিনি বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই নির্বাচনে প্রায় ৪০ হাজারের মতো ভোট কেন্দ্র। সেখানে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চাহিদা মোতাবেক অফিসার-ফোর্স দেওয়া হবে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করতেই সব রকম সহযোগিতা দিতে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।’
বিষয়টি সুস্পষ্ট করে পুলিশের এই সর্বোচ্চ কর্তা বলেন, ‘নির্বাচন পরিচালনা করা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাজ। আর আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিধান করা। পেশাদারিত্বের সঙ্গেই জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের প্রতিটি সদস্য কাজ করবে।’
আন্দোলনের নামে নাশকতা কঠোরভাবে দমন করার ইঙ্গিত দেন আইজিপি। জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় অতীতের মতোই হার্ডলাইনে থাকারও ঘোষণা দেন তিনি। পুলিশ প্রধান বলেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আন্দোলনের নামে কোন অরাজকতা বা নাশকতা কঠোর হস্তেই দমন করা হবে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই পুলিশের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে।’
অন্তরে মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র ও বাংলাদেশকে ধারণ করেন ড.জাবেদ পাটোয়ারী। দায়িত্ব গ্রহণের এক সপ্তাহের মাথায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়কে ঘিরে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে চমক সৃষ্টি করেছিলেন আইজিপি। রায়ের আগের দিন বলেছিলেন, ‘গুজবে কান দেবেন না, ভীত হবেন না। আইন-শৃঙ্খলা এবং জননিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ পুলিশ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষম।’
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাঝপথে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র গুজবের মাধ্যমে সহিংসতাকে উস্কে দেওয়ার হীন প্রচেষ্টা চালায়। এক্ষেত্রেও পুলিশ দক্ষতার সঙ্গেই সাইবার ভাওলেন্স রুখে দেয়। ধৈর্য্য ও সহনশীলতার পরিচয় দেয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্বার্থান্বেষী মহলের প্রবেশের পর শান্তিপূর্ণভাবেই শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ।
সেই সময় পুলিশ প্রধান সোজা সাপ্টা বলেন, পুলিশ প্রধান সোজা সাপ্টা বলেন, ‘আমরা ততক্ষণ সহনশীল ছিলাম, যতক্ষণ শিক্ষার্থীরা আইন হাতে তুলে নেয়নি। শিক্ষার্থীদের বেশে তাদের আন্দোলন ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। প্রথম কয়েকদিন এটি ছাত্রদের আন্দোলন থাকলেও পরবর্তীতে একটি স্বার্থান্বেষী মহল প্রবেশ করে।’
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে অর্ধ বার্ষিকী অপরাধ পর্যালোচনা সভায় বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত অপরাধ তুলনামূলকভাবে কমেছে। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই সময়ে সারা দেশে ১ লাখ ১৪ হাজার ১২৪টি মামলা দায়ের হয়েছে।
ওই সময়ে সারাদেশে মাদক দ্রব্য এবং চোরাচালান দ্রব্য উদ্ধারের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মামলার সংখ্যা বেড়েছে। তবে এই সময়ে ডাকাতি, দস্যুতা, দ্রুত বিচার, দাঙ্গা, নারী ও শিশু নির্যাতন, অপহরণ, সিঁধেল চুরি, চুরি, সড়ক দুর্ঘটনা মামলা সংখ্যা কমেছে।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চলতি অক্টোবর মাসজুড়েই ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ বড় বড় মামলার রায়কে ঘিরে উত্তপ্ত হতে পারে রাজনৈতিক অঙ্গণ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের এই মাসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এবারো দক্ষ হাতেই সব রকমের পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হবেন পুলিশ প্রধান ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, এমনটি বিশ্বাস করেন সবাই। তাদের ভাষ্যে- গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত রেখে শান্তিময় বাংলাদেশ উপহার দিতে গভীর দেশপ্রেম ও সততার অধিকারী এই মানুষটি বিকল্পহীনও।
কালের আলো/এএ