যে কোন সময় নির্বাচনকালীন সরকার, জোর প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের
প্রকাশিতঃ 5:15 pm | October 04, 2018
বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:
যে কোন সময় গঠন করা হতে পারে নির্বাচনকালীন সরকার। এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে আলোচনা শুরু হয়েছে। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর সাথে আলোচনা করেই গঠন করা হবে সরকার।
চলতি মাসের যেকোনো সময় অথবা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ মুহূর্তেও আসতে পারে নির্বাচনকালীন সরকারের ঘোষণা। তবে এ সরকার খুব অল্প সময়ের জন্য হবে বলেও জানা গেছে।
নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার কী হবে, এটা কেবল প্রধানমন্ত্রীই জানেন। সময় হলেই জানা যাবে।’
জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব রুহুল আমি হাওলাদার এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের দলের চেয়ারম্যানের সঙ্গে এ বিষয় আলোচনা হচ্ছে। অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। তবে শিগগির আনুষ্ঠানিক আলোচনায় আমরা বসব।
আওয়ামী লীগসহ সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী ওয়ার্কাস পার্টি, জাসদ ও জাতীয় পার্টির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলেও জানা গেছে, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী চলতি মাসের যেকোনো সময় ১৪ দল ও সংসদের বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। সংসদে প্রতিনিধিত্ব নেই ১৪ দলের শরিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করবেন।
সরকারি দলের একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভার আকার কেমন হবে এবং এ মন্ত্রিসভায় কারা থাকতে পারেন, এর একটি পরিকল্পনা সরকারপ্রধানের কাছে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই মন্ত্রিসভায় ২০ থেকে ২৫ জনকে রাখার পরিকল্পনা আছে। পাশাপাশি আগামীতে মনোনয়ন পাচ্ছেন না— এমন নেতাদেরও এবারের নির্বাচনকালীন সরকারে রাখার পরিকল্পনা আছে।
এর আগে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী মিলে ২৯ জন ছিলেন। আরও ছিলেন ১০ জন উপদেষ্টা। ওই সময় মন্ত্রিসভার পুরানো কয়েকজন মন্ত্রীকে রেখে এবং নতুন কয়েকজনকে যোগ করে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। এবারও এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হতে পারে বলে জানান সরকার দলীয় কয়েকজন নেতা।
সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, জাতীয় সংসদে গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অনির্ধারিত বৈঠক করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। জাপা সূত্রে জানা গেছে, ওই বৈঠকে এরশাদ নতুন করে তার দলের তিন জনকে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় রাখার অনুরোধ করলে প্রধানমন্ত্রী সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের সঙ্গে আলোচনার করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান।
নেতারা জানান, নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকবে না। কারণ বিএনপির সংসদে কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। এমনকি নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংবিধানে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। তবে সংবিধানে মন্ত্রিসভা গঠনের একক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। এ জন্য নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা, এর আকার ও কাকে নেওয়া হবে আর কাকে বর্তমান মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হবে— তা এককভাবে প্রধানমন্ত্রীই ঠিক করবেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, ২০১৩ সালে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের আগে তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপিকে প্রয়োজনে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতারা। এবার এমন মনোভাব সরকারি দলের নেই।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে গণভবনে ৭৩তম জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানসহ সপ্তাহব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিভিন্ন অর্জন ও সফলতা তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত এক সাংবাদিকের নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুয়েএকটা দলের সঙ্গে কথা বলেছি। সবার সঙ্গে কথা বলব। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও কেবিনেটে এ বিষয়ে আলোচনা করব।
এর আগে, নিউইর্য়কে গত শনিবার (নিউইর্য়ক স্থানীয় সময় শুক্রবার) এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিরোধী দলীয় নেতার (রওশন এরশাদ) সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছি। তারা যদি চান, আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব রাজনৈতিক দল যদি চায়, তাহলে আমরা তাদের প্রতিনিধি নিয়ে সরকার গঠন করতে পারি। তারা ক্ষমতাসীন অথবা বিরোধী দল কিনা, সেটা কোনো বিষয় না। তবে নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে কোনো সংজ্ঞা নেই।
কালের আলো/এমএইচএ