করোনা : প্রতি ইউনিয়নে দৈনিক টিকা পাবেন ৬০০ জন
প্রকাশিতঃ 7:07 pm | July 30, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:
অতিমারী করোনার প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে ৭ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। এ সময় প্রতিটি ইউনিয়নে প্রতিদিন একটি কেন্দ্রে তিনটি বুথে ৬০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। এই হিসাবে দেশের ৪ হাজার ৫৭১ ইউনিয়নে প্রতিদিন ২৭ লাখ ৪২ হাজার ৬০০ মানুষ করোনার টিকা পাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রত্যেক ইউনিয়নে সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে ছয় দিনে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৫৫ হাজার ৬০০ মানুষ করোনার টিকা পাবেন। এছাড়া পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের ১৫ হাজার ২৮৭টি ওয়ার্ডেও টিকা দেওয়া হবে। সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫ লাখের বেশি ও পৌরসভা এলাকায় ৮ লাখের মতো কর্মী টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করবেন।
এ জন্য প্রত্যেক ইউনিয়নে একটি করে টিম এবং পৌরসভার প্রত্যেক ওয়ার্ডে দুটি ও সিটি করপোরেশনের প্রত্যেক ওয়ার্ডে তিনটি করে টিম টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করবে। এ সময় শহরাঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না টিকা ও ইউনিয়নে চীনের সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা নিতে মানুষকে আগেভাগেই নিবন্ধন করতে হবে না। টিকা নিতে ইচ্ছুক মানুষ টিকাকেন্দ্রে গেলে তার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখেই টিকা দেওয়া হবে। পরে কেন্দ্রেই টিকাগ্রহীতার নিবন্ধন করবেন টিকাকেন্দ্রের লোকজন।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ৭ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদান শুরু। জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে গেলেই হবে। আমরা সাধারণ টিকাদান কর্মসূচি যেভাবে করি, সেভাবে ব্লক হবে ও সে অনুযায়ী টিকা দেওয়া হবে। টিকার জন্য বয়সসীমা এখন ২৫ বছর করা হয়েছে। আস্তে আস্তে ১৮ বছর করা হবে।
এর আগে গত ২৭ জুলাই ইউনিয়ন পর্যায়ে করোনার টিকাদান শুরুর সিদ্ধান্তের কথা জানায় সরকার। সেদিন করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও লকডাউন নিয়ে সচিবালয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা কার্যক্রম জোরদার করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। এনআইডি কার্ড নিয়ে যে যাবেন, তাকেই টিকা দেওয়া হবে।
এদিকে যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তাদের ‘বিশেষ ব্যবস্থায়’ কোভিড টিকা দেওয়া হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান।
ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরুর প্রস্তুতির ব্যাপারে করোনার টিকা বিতরণ ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাতৃ, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামসুল হক বলেন, পুরো কর্মসূচি সাজানোর কাজ এখনো শেষ হয়নি।
আগামী রোববারের মধ্যে শেষ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন একটি কেন্দ্রের তিনটি বুথে ৬০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। তার মানে ৬০০ মানুষের নিবন্ধন হয়ে গেল। আবার পরের দিন। এক দিনে একেকটা ইউনিয়নে ৬০০ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। এর বেশি সম্ভব নয়। তারপর ওয়ার্ড, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনেও টিকা দেওয়া চলবে।
৮ আগস্ট থেকে ১৮ বছর বয়সীদের নিবন্ধন শুরু
এদিকে টিকার নিবন্ধনের জন্য সরকার বয়স কমিয়ে ২৫ বছর করেছে। আগামী ৮ আগস্ট থেকে ১৮ বছরের বেশি নাগরিকরাও নিবন্ধন করতে পারবেন।
সুরক্ষার ওয়েসাইট ও অ্যাপে গিয়ে দেখা গেছে, কোভিড নিবন্ধন ফরমে নাগরিক নিবন্ধনের ঘরটিতে ২৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের নিবন্ধনের সুযোগ রয়েছে।
এর আগে শুরুতে শুধু ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া হচ্ছিল। পরে এই বয়সসীমা কমিয়ে ৩০ বছরে আনা হয়। ২৯ জুলাই তা আরও কমিয়ে ২৫ বছর করা হয়।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, সবাইকে টিকার আওতায় আনতে ধারাবাহিকভাবে বয়সসীমা কমিয়ে আনা হচ্ছে। আমরা আইসিটি বিভাগকে বলেছি টিকার নিবন্ধনের জন্য বয়সসীমা ১৮ বছর পর্যন্ত করার জন্য। এটা তারা ধাপে ধাপে করছে। প্রথমে ৪০ থেকে ৩৫ করা হয়েছে, পরে ৩৫ থেকে ৩০ বছর।
‘এখন আবার ২৫ বছর পর্যন্ত করেছে। তারা বলছে, একবারে ১৮ বছর পর্যন্ত করে দিলে তাদের ওপর চাপ পড়বে। এজন্য ধীরে ধীরে বয়সসীমা কমাচ্ছে।’
তিনি জানান, ১৮ বছর ও তদূর্ধ্বরা আগামী ৮ আগস্ট থেকে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে স্থানীয় টিকাদান কেন্দ্রে গেলেই টিকা নিতে পারবেন।
গত ২৭ জানুয়ারি টিকার জন্য নিবন্ধন শুরু হয়। তখন শুধু ৪০ বছর বা এর বেশি বয়সীরা নিবন্ধনের সুযোগ পাচ্ছিলেন। মাঝে টিকার সংকট চললে বয়সসীমা আর বাড়ানো হয়নি। নতুন টিকা আসার পর গত ৫ জুলাই আগের চেয়ে আরও পাঁচ বছর কমিয়ে টিকার নিবন্ধনের জন্য যোগ্যদের বয়স ৩৫ বছর করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এরপর ১৯ জুলাই আরও ৫ বছর কমিয়ে ৩০ বছর করা হয়েছিল। গ্রাম পর্যায়ে টিকাদান শুরুর আগে এখন সেই বয়সসীমা আরও ৫ বছর কমিয়ে আনা হলো।
কালের আলো/এসবি/এমআরকে