‘খালেদা জিয়ার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসায় সময় লাগবে’
প্রকাশিতঃ 8:20 pm | October 08, 2018
কালের আলো ডেস্ক:
কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা শুরু হতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। তার শারীরিক সমস্যার সার্বিক দিক তুলে ধরে বোর্ডের সদস্যরা বলেছেন, তিনি গেঁটে বাতজনিত (আর্থ্রাইটিস) সমস্যায় ভুগছেন। ডায়াবেটিসসহ বেশকিছু রোগ তার অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রয়েছে। এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে আনার পর মূল চিকিৎসা শুরু হবে। এ অবস্থায় তার চিকিৎসা কতদিন চলবে সে সম্পর্কে এখনই নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাবে না।
সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
শনিবার বিকেলে তাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। রোববার মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা তার পুরনো মেডিকেল রিপোর্ট পর্যালোচনা করে আগের চিকিৎসা বহাল রাখেন।
সোমবার তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। পরে বোর্ডের সদস্যরা তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএসএমএইউর ইন্টারন্যাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ জলিল চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়া রিউমাটো আর্থ্রাইটিস রোগে আক্রান্ত। এ ধরনের রোগের চিকিৎসার আগে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। এসব বিষয়ে তারা পরামর্শ দেবেন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে কতদিন সময় লাগবে, মূলত তার ওপরই নির্ভর করছে চিকিৎসা শুরুর বিষয়টি। তিনি বলেন, বর্তমানে খালেদা জিয়ার ওষুধের ডোজে খানিকটা পরিবর্তন আনা হয়েছে।
ডা. এম এ জলিল বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে সার্বক্ষণিকভাবে দুইজন জুনিয়র চিকিৎসককে রাখা হয়েছে। তারা তার রোগের ইতিহাস সংগ্রহ করবেন। এটি চিকিৎসার অংশ।
মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের সম্পর্কে বিএনপির অভিযোগ-সংক্রান্ত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডা. জলিল বলেন, আদালতের নির্দেশনা মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা পড়েছেন। তার মতে, বোর্ড গঠনে আদালতের নির্দেশনার কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে রোববার রাত ১০টার দিকে দেখা করেন বোর্ডের অপর এক সদস্য অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক। তিনি জানান, খালেদা জিয়ার সমস্যা মূলত গেঁটে বাতজনিত। তার আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই। এ ধরনের রোগের চিকিৎসায় পূর্বপ্রস্তুতির প্রয়োজন। এজন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে প্রায় দুই সপ্তাহ লাগবে। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর তার চিকিৎসা শুরু হবে।
ইউনাইটেড বা বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর রিট করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত ৪ অক্টোবর তাকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার এবং এজন্য পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড পুনর্গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। এর পর থেকে তিনি নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। অসুস্থ খালেদা জিয়াকে কারা কর্তৃপক্ষ বিএসএমএমইউ বা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাইলেও তাতে রাজি হননি তিনি। সম্প্রতি খালেদা জিয়া আদালতে তার অসুস্থতার কথা বলার পর আবারও তার চিকিৎসার বিষয়টি আলোচনায় আসে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে। বিএনপি দাবি করে আসছে, দলটির চেয়ারপারসনকে সুচিকিৎসা দিতে চাইছে না সরকার। অপরদিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছেন সরকারি দলের নেতারা।
কালের আলো/এনপি