প্রাণনাশের হুমকি, এমপি শিমুলের বিরুদ্ধে রাবি শিক্ষকের জিডি

প্রকাশিতঃ 2:26 pm | August 03, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

নাটোর-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুলের বিরুদ্ধে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সরকার সুজিত কুমার। তিনি রাজশাহী মহানগর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি পদেও দায়িত্ব পালন করছেন।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় জিডি করেন ওই শিক্ষক।

জানা গেছে, অধ্যাপক ড. সরকার সুজিতকুমার তার লেখা ‘নাটোর জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ’ গ্রন্থে নাটোর সদর আসনের (নাটোর-২) সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের পিতা হাসান আলী সরদার এর নাম রাজাকার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাই সংসদ সদস্য জনাব শফিকুল ইসলাম শিমুল ওই শিক্ষককে হুমকি দেন।

রাবি শিক্ষকের ভাষ্য, ‘নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য তার সন্ত্রাসীদের দিয়ে ফোনে হুমকি দিয়েছেন। এছাড়া আমাকে ছেঁটে দেবেন বলেও খবর দিচ্ছেন। এক সম্মেলনেও আমাকে ইঙ্গিত করে নানা হুমকি-ধামকি দিয়েছেন। তাই নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তাজনিত কারণে থানায় জিডি করেছি।’

হুমকির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নাটোর জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ’ নামে একটি বই লিখেছিলাম ২০০৭ সালে। তারপর প্রথম এডিশন হয় ২০১০ সালে। ২০২১ সালে দ্বিতীয় এডিশন হয়। প্রথম বই ও বাকি দুই এডিশনেই তার বাবার নাম হাসান আলী রাজাকার হিসেবে এসেছে। আমি ফিল্ডে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তিন বছর কাজ করেছি। স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে নিয়েছি রাজাকারের তালিকা। যাচাই-বাছাই ও পর্যবেক্ষণও করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি হাসান আলীকে রাজাকার হিসেবেই পেয়েছি। কিন্তু তিনি যে এমপি শিমুলের বাবা আমি সেটাও জানি না। এমনকি আমি তাকেও চিনতাম না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বই পড়ে স্থানীয় অন্যান্য এমপি ও রাজনৈতিক নেতা তার সঙ্গে মিটিং করে বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আপত্তি জানায়। তারা এমপি শিমুলকে জানায়, ‘নাটোর জেলার ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ’ বইটিতে আপনার বাবা রাজাকার, এটি লেখা রয়েছে। এই বিষয়টি জানতে পেরে তিনি আমার ওপর বিভিন্নভাবে চড়াও হন। তিনি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন আমাকে অর্থ দিয়ে বইটি হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য লেখানো হয়েছে। অথচ বইটি আমি নিজ খরচে লিখেছি ও প্রকাশ করেছি। এতে বাংলা একাডেমি কিংবা কোনো ব্যক্তি আমাকে অর্থায়ন করেননি।’

অধ্যাপক সুজিত কুমার বলেন, ‘নাটোরের এমপি শিমুলের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হুমকি দেয়ার কারণে আমি শুধু জিডি নয়, আমার স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিষয়টি জানিয়েছি। এমনকি স্পিকারের কাছে একটি চিঠি ও তার সঙ্গে জিডির কপি এবং বইটিও পাঠিয়েছি। সে কারণে এমপি শিমুল আমার ওপর প্রচণ্ড রাগান্বিত হয়ে এমন আচরণ করছেন।’

তিনি জিডিতে আরও উল্লেখ্য করেন, তারচেয়ে বড়ো কথা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রকে একটি শক্ত ভীতের ওপর দাড় করানোর জন্য দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করছেন, তখন কিছু ব্যক্তি সরকারি দলে অবস্থান নিয়ে তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে ব্যস্ত।

‘যখনই সে স্বার্থে কোনোভাবে আঘাত লাগছে, তখনই তারা তাদের আক্রমণাত্মক চেহারা অন্ধকার থেকে বের করে এমন অগণতান্ত্রিক ও সন্ত্রাসী আচরণ করছেন। মত প্রকাশের স্বাধীনতা নির্বিঘ্নে গবেষণাকর্ম পরিচালনা করা এবং সত্যের পক্ষে অবস্থানকারীদের বিরুদ্ধে এই জাতীয় স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ করে লেখক-গবেষকের ওপর হুমকি দিয়ে তার লেখালেখি ও মতপ্রকাশের ওপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা গণতান্ত্রিক আচরণসম্মত নয়। মাননীয় প্রধান দেশ গড়ার কাজে সর্বস্তরের মানুষকে গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছেন। তিনি জাতির পিতার স্বপ্নের `সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে পরিকল্পনা এ চলেছেন। আমরা তাকে সর্বভাবে সমর্থন জানাই এবং পড়ালেখাসহ গবেষণা কর্মে স্বচ্ছন্দভাবে ব্রতী ব্রতী হতে চাই।’

তার দাবি, বইটিতে সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাবাকে ‘রাজাকার’ বলায় তার সন্ত্রাসী বাহিনী ও কিছু অপরিচিত ব্যক্তি তাকে হুমকি দিচ্ছেন। এতে তিনি পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

এ বিষয়ে নাটোর-২ আসনের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, ‘রাবি অধ্যাপকের ওই বইটিতে আমার ও আমার বাবা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মূলত আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য একদল লোক এই কাজটি অর্থ দিয়ে করিয়েছে। কারণ, প্রথম প্রকাশনায় এমন ভুল তথ্য ছিল না। অথচ ২০১০ সালে আমার নমিনেশনে সমস্যা করার জন্য বাধা প্রদানে এমন ইস্যু তোলা হয়। ২০২১ সালে এসে আবারো একই চক্রান্ত করা হয়। এজন্য আমি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি মামলার প্রস্তুতি নিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি রাজশাহীর ডিআইজি ও পুলিশ কমিশনারকে অনুরোধ করেছি প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের জন্য। কেউ যদি হুমকি দিয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই সেই ফোনকল ট্র্যাকিং করা যাবে। আমি কিংবা আমার কোনো লোক তাকে হুমকি দেইনি। কেউ তাকে হুমকি দিয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেয়া হোক, আমি সমর্থর করব।’

জিডির তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) নাদিম উদ্দিন বলেন, গত ২৯ জুলাই জিডিটি বোয়ালিয়া থানায় করা হয়েছে। বাদী এবং বিবাদী উভয়ের সঙ্গেই কথাবার্তা চলছে। হুমকির সত্যতা যাচাই করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

কালের আলো/ডিএসকে/এমআরবি