অমূল্য সেই দলিলের রূপকার বঙ্গমাতাই

প্রকাশিতঃ 9:35 am | August 08, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো :

বিশ্বের খ্যাতিমান নারী এলিনর রুজেভেল্টের অনেক সাদৃশ্য রয়েছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের। দু’জনেই শৈশবে বাবা-মাকে হারিয়েছেন এবং চাচাতো ভাইকে বিয়ে করেছিলেন। নিজেদের স্বামীর রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। তবে একটি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে বঙ্গমাতা সরাসরি ভূমিকা রাখলেও রুজেভেল্ট সেটি পারেননি।

আরও পড়ুনঃ রেণু থেকে বঙ্গমাতা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র পাতায় পাতায় রয়েছেন মহিয়সী বঙ্গমাতা। অর্থাৎ, দেশ ও রাষ্ট্রের স্বাধিকার আন্দোলনের অমূল্য এক দলিলেরও নেপথ্য রূপকার বঙ্গমাতাই। ঐতিহাসিক এই গ্রন্থের শুরুটিও তাকে ঘিরেই।

নিজের অর্ধাঙ্গীর প্রতি অসামান্য ভালোবাসা প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু লিখেছিলেন- ‘আমার স্ত্রী আমাকে কয়েকটা খাতাও কিনে জেলগেটে জমা দিয়ে গিয়েছিল। জেল কর্তৃপক্ষ যথারীতি পরীক্ষা করে খাতা-কয়টা আমাকে দিয়েছেন। রেণু আরও একদিন জেলগেটে বসে আমাকে অনুরোধ করেছিল। “বসেই তো আছ, লেখ তোমার জীবনের কাহিনী”।

আরও পড়ুনঃ বঙ্গমাতার দূরদর্শী সিদ্ধান্তই খুলে দেয় স্বাধীনতার পথ

একজন গ্রামীণ বধূ থেকে নিজের দূরদর্শীতা ও বিচক্ষণতার মাধ্যমে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব সব কাজেই হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধুর প্রেরণার স্তম্ভ।

নিজের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচায় ইতিহাসের ধন্য সেই পুরুষ-বঙ্গবন্ধু রেণুর কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘আব্বা ছাড়াও মায়ের কাছ থেকেও আমি টাকা নিতে পারতাম। আর সময় সময় রেণুও আমাকে কিছু টাকা দিতে পারত। রেণু যা কিছু জোগাড় করত বাড়ি গেলে এবং দরকার হলে আমাকেই দিত। কোনো দিন আপত্তি করে নাই, নিজে মোটেই খরচ করত না।

আরও পড়ুনঃ শেখ হাসিনার চোখে ‘আসল গেরিলা’ বঙ্গমাতা

গ্রামের বাড়িতে থাকত, আমার জন্যই রাখত।’বঙ্গবন্ধুর ও তাঁর স্ত্রীর সংসার জীবনে বেগম মুজিব ব্যক্তিগত-পারিবারিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে বিসজর্ন দিয়ে স্বামীর রাজনীতিকে, মানুষের স্বাধিকার আন্দোলনকেই বেছে নিয়ে অন্যরকম এক আধুনিক নারীর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।

গত বছরের ৭ অক্টোবর একটি অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতাকে নিজের জীবন নিয়ে লিখতে তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কীভাবে উৎসাহ দিতেন। সেই থেকেই তিনি লিখতে শুরু করেন এবং যতবার কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পেতেন, তখন মা জেলগেইটে উপস্থিত থেকে আর কিছু না হোক লেখার খাতাগুলো তিনি সংগ্রহ করে রাখতেন।’

ধীরস্থির, বুদ্ধিদীপ্ত, দূরদর্শী, নারীর সাহসী, বলিষ্ঠ, নির্লোভ ও নিষ্ঠাবান এক নারী ছিলেন বঙ্গমাতা। যেকোন সঙ্কটে বা দু:সময়ে প্রেরণা ও সাহস জুগিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শেখ হাসিনা, শেখ কামাল, শেখ জামালসহ ৫ সন্তানকে যোগ্য করে গড়ে তুলেছিলেন।

তিনি কেবল একজন রাষ্ট্রনায়কের সহধর্মিণী নন, বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের নেপথ্যের অন্যতম অনুপ্রেরণা-দানকারী মহিয়সী। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেছেন। ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ডের সময়ও জীবনের মতো মরণের সহযাত্রী হয়েছিলেন। তার দেশপ্রেম ও আদর্শ অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে যুগ থেকে যুগান্তরে।

কালের আলো/এমএএএমকে