বাঙালির স্বপ্নপুরুষকে নৃশংসতম হত্যার অশ্রুঝরা দিন
প্রকাশিতঃ 12:01 am | August 15, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো :
তিনি ছিলেন বাঙালির মুক্তিদাতা এবং ইতিহাসের মহানায়ক। ছিলেন বাঙালির স্বপ্নপুরুষ। জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মহান স্বাধীনতার এই রূপকার ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬ দফা আন্দোলনসহ প্রতিটি লড়াই সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
আরও পড়ুনঃ নির্মম হত্যাকারীরা অপরিচিত ‘কেউ’ ছিল না
বিশ্বের বুকে একটি স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করেন। কিন্তু আজ থেকে ৪৬ বছর আগে ১৯৭৫ সালের এ কালো দিনটিতেই হত্যা করা হয় জাতির এ আরাধ্য পুরুষকে। আর এর মাধ্যমে বাঙালি জাতির ইতিহাসে কলঙ্ক লেপন করেছিল সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী উচ্ছৃঙ্খল সদস্য।
ঘাতকের নির্মম বুলেটে সেদিন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক ভবনে শাহাদাতবরণ করেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ফলে বিশ্ব মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণিত, বর্বর ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের একটি দিন এই ১৫ আগস্ট।
আরও পড়ুনঃ বঙ্গবন্ধুর ‘অধরা’ পাঁচ খুনি কোথায়?
আজ সেই শোকাবহ দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বিপথগামী কিছু সেনা সদস্যের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন জাতির পিতা। সেদিন দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
৭৫’র সেই কালো রাতে ঘাতকের নির্মম বুলেটে বঙ্গবন্ধু ছাড়াও প্রাণ হারান তার প্রিয় সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। জীবন প্রদীপ নিভে যায় তিন ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, সেনা কর্মকর্তা শেখ জামাল ও ১০ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল এবং নবপরিণীতা দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল।
আগস্টের মধ্যভাগের সেই নির্মম হত্যাযজ্ঞে আরও প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, শিশু পৌত্র সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, নিকটাত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টু এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
আরও পড়ুন: মৃত্যুঞ্জয়ী শেখ মুজিব : শোক অনির্বাণ আবেগমথিত উচ্চারণ
শোকসন্তপ্ত জাতি আজ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু ও সেই রাতের শহীদদের বিশেষভাবে স্মরণ করছে।
যাঁর গৌরবময় নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে সেই মহান নেতাকে সপরিবারে হত্যা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক ঘটনা। ঘাতক দল ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে তাঁর নাম ইতিহাস থেকে চিরতরে মুছে ফেলবে। কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন সফল হয়নি।
যে বাড়িতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহীদ হয়েছেন সেই ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি এখন জাতির অন্যতম আবেগময় স্মৃতিচিহ্নে পরিণত হয়েছে। আর তিনি বাঙালি জাতির প্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
আরও পড়ুন: শেখ রাসেল : কুড়িতেই শেষ হয়ে যাওয়া একটি ফুল
ঘাতকরা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার যে পথ সৃষ্টি হয়েছিল সেখান থেকে দেশকে সরিয়ে বিপরীতমুখী করার উদ্দেশ্য ছিল তাদের বড় একটি লক্ষ্য।
তাদের লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলিয়ে দেয়া। মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর অবদানকে খাটো করা এবং যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার মধ্যে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল সেটা নস্যাৎ করে দেয়া।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে শুরু হয় এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। একটা পর্যায় দেশে এসেছিল যখন বঙ্গবন্ধুর নামটাও জাতীয় প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হতে পারত না। ইতিহাস থেকে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়কের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর শেষ শয্যার সঙ্গীরা
তরুণদের দীর্ঘকাল জানতে দেয়া হয়নি মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুকে শুধু অস্বীকার করাই নয়, নানাভাবে তাঁর সম্পর্কে মিথ্যা বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। তাঁর অবদানকে নানাভাবে খাটো করা, এমনকি অস্বীকারও করা হয়েছে।
কিন্তু কুচক্রীদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে। এ দেশের ইতিহাসের সঙ্গে যাঁর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত- দেশের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় যাঁর স্থান, কোন হুকুম বা ফরমান দিয়ে তাঁর নাম মুছে ফেলা যায় না।
আরও পড়ুন: মাত্র ১৫ মিনিটে দাফন হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর লাশ!
তাঁর অবদানকে খাটো করা যায় না। দেশকে তিনি ভালবেসেছেন অকৃত্রিমভাবে, দেশের মানুষও তাঁকে দিয়েছে হৃদয় উজাড় করা ভালবাসা। তাই খুনী, ঘাতকচক্র ও তাদের পৃষ্ঠপোষকের সব চক্রান্ত, চেষ্টা, তৎপরতা ব্যর্থ হয়ে গেছে।
বঙ্গবন্ধু শারীরিকভাবে আজ না থাকলেও মানুষের হৃদয়জুড়ে তাঁর অবস্থান। তাঁর হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। ঘাতকদের দন্ডাদেশ কার্যকর হয়েছে। তবে এখনও কয়েক ঘাতক পালিয়ে রয়েছে নানা দেশে। তাদের অতিদ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে দন্ডাদেশ কার্যকরের ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা সবার দাবি।
বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে তাঁর বয়স হতো শতবর্ষ। বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়ে জাতি ও দেশকে আগলে রাখতেন তিনি। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, তাকে রক্ষা করতে পারিনি।
আরও পড়ুন: খুনিদের প্রতি তীব্র ঘৃণা, শোকস্তব্ধ বিশ্ব নেতারা
বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন সোনার বাংলা গড়ার। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার মাধ্যমেই তাঁর প্রতি সর্বোৎকৃষ্ট শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব। সে কাজটাই এখন করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের উচিত দল মত নির্বিশেষে তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করা।
কালের আলো/এসআইএল/এমএএএমকে