টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর শেষ শয্যার সঙ্গীরা
প্রকাশিতঃ 9:50 am | August 15, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো :
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ইতিহাসে অভিশপ্ত একটি দিন। ওই কালরাতেই নৃশংস কায়দায় স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে থাকায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
আরও পড়ুন: বাঙালির স্বপ্নপুরুষকে নৃশংসতম হত্যার অশ্রুঝরা দিন
হত্যাকান্ডের পরদিন রাজধানী ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে টুঙ্গিপাড়ায় আনা হয় বঙ্গবন্ধুর লাশ। সেদিন কড়া নিরাপত্তার বেস্টনীর মধ্য দিয়ে হেলিকপ্টার থেকে কফিন নামানো হয়।
টুঙ্গিপাড়া সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার কাসেম ক্যাশিয়ার, আবদুল হাই মেম্বার, আকবর কাজী, ইলিয়াস হোসেন, জহর মুন্সি, সোনা মিয়া কবিরাজ, শেখ নুরুল হক গেদু মিয়াসহ কয়েকজন বঙ্গবন্ধুর লাশ বহন করে আনেন।
এরপর পরম মমতায় ৫৭০ সাবান দিয়ে মরদেহের গোসল এবং রেড ক্রিসেন্টের রিলিফের কাপড় দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাফন পরানো হয়। জানাজা শেষে বাবা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা শেখ সায়েরা খাতুনের কবরের পাশে সমাহিত করা হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এ বাঙালিকে।
আরও পড়ুনঃ নির্মম হত্যাকারীরা অপরিচিত ‘কেউ’ ছিল না
ওইদিন জানাজা ও দাফনের পর মোনাজাত পরিচালনা করেন মৌলভী আবদুল হালিম। দাফনে টুঙ্গিপাড়া, পাটগাতী ও পাঁচকাহনিয়া গ্রামের ৩০ থেকে ৩৫ জন অংশ নেন। সেনা ও পুলিশ হেফাজতে তড়িঘড়ি করে ওইদিন দাফন সম্পন্ন করা হয়। গ্রামবাসী জানাজায় অংশ নিতে চাইলেও তাদের সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়।
এ বিষয়ে ওই সময়কার স্মৃতিচারণা করে রজব আলী বলেন, ‘হাতে সময় খুব কম। বঙ্গবন্ধুকে জানাজা পড়িয়ে সমাহিত করতে হবে। এ জন্য আমি খুব তাড়াতাড়ি কল চেপে তিন বালতি পানি নিয়ে আসি। এই পানি আব্দুর রউফকে দিয়ে বলি, তুমি মিঞা ভাইকে গোসল করাও। আমি সাবান নিয়ে আসছি।
আরও পড়ুন: মৃত্যুঞ্জয়ী শেখ মুজিব : শোক অনির্বাণ আবেগমথিত উচ্চারণ
কিন্তু সাবান কোথায়? লাক্স, হাবিব এসব সাবান কি টুঙ্গিপাড়ায় বিক্রি হয়? আমি দৌড় দিয়ে তৈয়ব মাতব্বরের দোকানে যাই। সেখান থেকে আট আনা দিয়ে একটি কাপড়কাচা ৫৭০ সাবান কিনে এনে আব্দুর রউফের হাতে তুলে দিই। আল্লাহর ইশারায় আমি ৫৭০ সাবান নিয়ে এসেছি। জানাজা পড়ে বঙ্গবন্ধুকে কবরে শুইয়ে দিয়েছি।’
যে ধুতি শাড়ি কাফনের কাপড় হিসেবে ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধুকে সমাহিত করা হয়, যে শাড়িগুলো দরিদ্র মানুষকে ত্রাণ দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুই দিয়েছিলেন বলে জানান প্রতিবেশী আব্দুল হাই।
আরও পড়ুনঃ বঙ্গবন্ধুর ‘অধরা’ পাঁচ খুনি কোথায়?
তিনি বললেন, ‘আমি দাদা ভাইয়ের জন্যে কাফনের কাপড় সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রেড ক্রস অফিসে যাই। এখানকার ডাক্তার আকতারুজ্জামানের কাছ থেকে তিনটি রিলিফের শাড়ি নিয়ে আসি। সেই শাড়ি কেটে কাফন তৈরি করে বঙ্গবন্ধুকে পরানো হয়।
এরপর মাওলানা আব্দুল হালিম বঙ্গবন্ধুর জানাজা পড়ান। আব্দুর রউফ, রজব আলী, আব্দুল হাই, ইমান উদ্দিন, নুরুল হক, গেদু মিয়া, কেরামত হাজী, নাজির মোল্লা, আব্দুল হালিম মৌলভি, তোতা মিয়া, ইদ্রিস কাজী, কাশেম কাজী, জহুর মুন্সি, টুঙ্গিপাড়ার এই খেটে খাওয়া সাহসী মানুষরা কবর খুঁড়ে জানাজা পড়ে পরম মমতায় বঙ্গবন্ধুকে সমাহিত করি।’
কালের আলো/জিকেএম/এমকে