সেনা প্রধানকে নিয়ে ‘অসত্য’ বক্তব্যে ‘তুলোধুনো’ জাফরুল্লাহ : বিচার দাবি

প্রকাশিতঃ 10:34 am | October 13, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :

সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে নিয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন, অসত্য ও বানোয়াট বক্তব্য দিয়ে রীতিমতো ‘তুলোধুনো’ হচ্ছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী। জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্রই তাকে নিয়ে গালির তুবড়ি ছোটাচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সাধারণ মানুষজন।

মূলত একটি বিশেষ মহলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অধিকারী সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদসহ সেনাবাহিনীর মতো রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে জনসম্মুখে হেয় করতে গিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য তাকে অচ্ছুতজনে পরিণত করেছে। এতে করে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যের মাঝেও।

দেশের বিশিষ্টজন থেকে শুরু করে রাজনীতিক, গণমাধ্যমের সম্পাদকসহ সবাই একই সুরে চীনপন্থী রাজনৈতিক বিশ্বাসের অধিকারী ও আওয়ামী লীগ বিরোধী এই বুদ্ধিজীবীর কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, ডা: জাফরুল্লাহ এমন গোয়েবলসীয় কায়দায় অপপ্রচার করে সীমা লঙ্ঘন করেছেন। এজন্যই তাকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।

জানা যায়, শান্তিতে নোবেলজয়ী ড.ইউনুসের ‘ঘনিষ্ঠ’ ডা: জাফরুল্লাহ বিএনপি’র সুশীল ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত গ্রুপটির মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন। মাঝে মধ্যেই তিনি ‘বেফাঁস’ বক্তব্য রাখেন। এক সময় এরশাদের সঙ্গেও মধুর সম্পর্ক ছিলো তাঁর। পরবর্তীতে এরশাদ জামানার পতনের পর খালেদার দিকে ‘মক্কা’ ঘুরিয়ে দেন। মূলত হাওয়া ভবনের পতিত ‘যুবরাজ’ ও যুক্তরাজ্যে পলাতক তারেকের ‘বুদ্ধিদাতা’ হিসেবেও এখন নতুন পরিচয় মিলছে ডা: জাফরুল্লাহ’র।

সময় টেলিভিশন এর টকশো’তে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

আরো জানা গেছে, ২০১৫ সালে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে ট্রাইব্যুনাল সাজা দেওয়ার পর এর বিরুদ্ধে বিবৃতি দেওয়ায় আদালত অবমাননার দায়ে ওই বছরের ১০ জুন জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে এক ঘণ্টা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকার দন্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল।

ওই দিন ট্রাইব্যুনালের দণ্ডাদেশের পর জাফরুল্লাহ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘আজকের আদালত অবমাননার রায়টা তিনজন বিচারকের মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ।’ ওই বক্তব্যের আলোকে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন আবেদনকারীরা।

আরো পড়ুন:
‘চৌকস’সেনা প্রধান আজিজ আহমেদকে নিয়ে কেন ডা: জাফরুল্লাহ’র ‘মিথ্যাচার’?

এরপরও নিজেকে শুধরাননি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে এক সময় সম্পৃক্ত এই মানুষটি। মঙ্গলবার (০৯ অক্টোবর)বেসরকারি নিউজ চ্যানেল সময় টিভিতে ‘সম্পাদকীয়’ টকশোতে সেনাবাহিনী’র প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে নিয়ে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ‘আজগুবি’ তথ্য উপস্থাপন করেন। তাঁর এই বক্তব্যে সারা দেশেই শুরু হয় তোলপাড়। তাঁর এমন ভিত্তিহীন ও বানোয়াট তথ্যের কড়া প্রতিবাদ জানায় সেনা সদর দপ্তর।

পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, বিভিন্ন সময়েই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির প্রচার প্রপাগান্ডার শিকার হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও চৌকস সেনা কর্মকর্তা জেনারেল আজিজ আহমেদ। ঝানু এই শীর্ষ সেনা কর্মকর্তার দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বে একটি সুশৃঙ্খল এবং শক্তিশালী সেনাবাহিনী দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং সুসংহতকরণে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

ফলে স্বভাবতই ‘মাথা নষ্ট’ কথিত সমালোচকদের। সবশেষ এই যাত্রায় মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ’র মতো দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও পা বাড়িয়েছেন। মহল বিশেষের ইন্ধনেই তিনি অসত্য ও বানোয়াট বক্তব্য উপস্থাপন করে দেশের সচেতন সাধারণ মানুষের তোপের মুখে পড়েছেন।

সেনা সদর দপ্তরের লিখিত প্রতিবাদ’র ছবিট সময় টিভি থেকে স্ক্রিণশট(তিনধাপে) নেয়া।

চারিদিকেই যখন তাঁর বিচারের দাবি ওঠছে ঠিক তখন ক্ষমা না চেয়ে ডা: জাফরুল্লাহ উল্টো দেশের শীর্ষ এক গণমাধ্যমকে শুক্রবার বলেছেন, ‘আমি দু:খিত, আমার শব্দ চয়নে ভুল ছিল।’ ক্ষমা না চেয়ে পুনরায় তাঁর এমন বক্তব্যের পর ক্ষোভের মাত্রা বাড়ে জনমনে।

অত:পর ডা. জাফরুল্লাহর দু:খপ্রকাশ

তবে শনিবার (১৩ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেনা প্রধানকে নিয়ে দেয়া বক্তব্যে দুঃখপ্রকাশ করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

তিনি বলেন, জেনারেল আজিজের সম্মানহানি করার কোনো চিন্তা বা উদ্দেশ্য আমার ছিল না। ভুল বক্তব্য ও শব্দ বিভ্রাটের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘সময় টেলিভিশনের টকশোতে আলোচনাকালে আমি দেশের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল এম এ আজিজ সম্পর্কে অসাবধানতাবশত একটি ভুল তথ্য উল্লেখ করেছিলাম। জেনারেল আজিজ একজন দক্ষ আর্টিলারি সেনা কর্মকর্তা।

সংবাদ সম্মেলন করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দু:খপ্রকাশ

তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ‘জিওসি’ ছিলেন না, ‘কমান্ডেন্ট’ ও ছিলেন না। তিনি তার কর্মজীবনের এক সময়ে চট্টগ্রাম সেনাছাউনিতে আর্টিলারি প্রশিক্ষক ছিলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে ‘কোর্ট মার্শাল’ হয়নি, একবার ‘কোর্ট অব এনকোয়ারি’ হয়েছিল। ভুল বক্তব্য ও শব্দ বিভ্রাটের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’

ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘সেনাবাহিনী বা জেনারেল আজিজের সম্মানহানি করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না এবং এরূপ কোনো অভিপ্রায়ও আমার নেই। আমাদের সেনাবাহিনীর গৌরবে আমি গর্বিত।

দুঃখপ্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘জেনারেল আজিজের সম্মানহানি করার কোনো চিন্তা বা উদ্দেশ্য আমার ছিল না। জেনারেল আজিজকে আমি অসাবধানতাবশত কোনো মনোকষ্ট দিয়ে থাকলে সেজন্য আমি পুনরায় আন্তরিক দুঃখপ্রকাশ করছি।’

কি বলছেন সেই দুই আলোচক

সেদিন সময় টিভি’র টকশোতে উপস্থিত দুই আলোচক আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মন্ডলীর সদস্য নূহ উল আলম লেলিন ও আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খানও সেনা প্রধান ও সেনাবাহিনীর মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে ডা: জাফরুল্লাহ গর্হিত অপরাধ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন।

আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, ‘আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য না জেনে এই ধরণের মন্তব্য করা একটা গর্হীত অপরাধ বলে আমি মনে করি। এতে কেবল সেনাবাহিনীরই নয়, আমাদের জাতীয় ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। এই বক্তব্যে মনে হতে পারে, আমরা কী সেনাবাহিনী রেখেছি, যে এভাবে গ্রেনেড চুরি হয়ে যায়?’

স্পর্শকাতর এমন বিষয়ে মিথ্যা তথ্য গণমাধ্যমে উপস্থাপন কোনোভাবেই কাম্য নয়। এর দায়িত্বও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকেই নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তারা।

দৈনিক আমাদের নতুন সময়-এর সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ‘উনি কিন্তু মন্তব্য না, উনি একটা তথ্য দিয়েছেন। ভুল তথ্যের উপরে করা যে কোনো বিশ্লেষণ ভুল হতে বাধ্য। এটা শুধু অনভিপ্রেত না, এটা একটা অফেন্স। এটা একটা ক্রিমিনাল অফেন্সের পর্যায়ে পড়বে- না জেনে কোনো তথ্য দেয়া।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহ যে তথ্যটি উপস্থাপন করেছিলেন তার একটা পজিশন এক্সপ্লেইন করার জন্য- এটা ছিলো ভুল। যেটা ভুল- সেটা ভুল। তিনি বলেছেন, এটার দায়িত্ব তাকে নিতে হবে।’

কালের আলো/এএ