সেনাপ্রধান শফিউদ্দিনের তুরস্ক সফর, উন্মোচিত হবে সহযোগিতার নতুন দ্বার

প্রকাশিতঃ 11:57 am | August 21, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

বিশ্বের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মেলা অনুষ্ঠিত হয় তুরস্কে। দেশটির জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে আন্তর্জাতিক এ মেলায় প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতি ও সাফল্য উপস্থাপিত হয়। তুরস্ক সরকারের আমন্ত্রণে এই মেলা পরিদর্শন করতে ইতোমধ্যেই দেশটিতে সফরে রয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেওয়া জেনারেল শফিউদ্দিন বুধবার (১৮ আগস্ট) সকালে তুরস্কের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। সফরের দ্বিতীয় দিনেই বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) তুরষ্কের ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট ইসমাইল দেমির এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী মুহসিন দেরে’র সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেন।

গত ২৪ জুন জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানের দায়িত্বভার গ্রহণের পর তুরস্ক সরকারের আমন্ত্রণে এটিই প্রথম তাঁর বিদেশ সফর। এ সফরের মধ্যে দিয়ে দুই দেশ এবং সেনাবাহিনীর মধ্যকার সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, তুরস্ক এবং বাংলাদেশের ভ্রাতৃপ্রতীম সম্পর্কের শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। ইতোপূর্বে মিয়ানমার থেকে বিতারিত রোহিঙ্গা ইস্যুতে এরদোগান সরকার বাংলাদেশের পক্ষে ব্যাপক সরব ভূমিকা পালন করে। গত বছর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.এ কে আবদুল মোমেন তুরস্ক এবং তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেবলুৎ সাবুসোলু বাংলাদেশ সফর করেন। ইতিহাস-ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে বদ্ধপরিকর ঢাকা-আঙ্কারা।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, তুরষ্কের ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট ইসমাইল দেমির এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী মুহসিন দেরে’র সঙ্গে সঙ্গে সাক্ষাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ দু’দেশ তথা সেনাবাহিনীর মধ্যকার সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে-এমন প্রত্যাশার কথা বলেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘তুরষ্ক এবং বাংলাদেশ তথা দু’দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে দীর্ঘ কৌশলগত বন্ধুত্ব এবং সাংস্কৃতিক বন্ধন রয়েছে। এই সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।’

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) আরও জানিয়েছে, এ বছর আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা মেলা পরিদর্শন উপলক্ষে তুরষ্কে বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের সরকারি সফরের মাধ্যমে দু’দেশের সামরিক বাহিনী এবং বিশেষ করে সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে বলে মন্তব্য করেন জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি তাঁকে এবং তাঁর প্রতিনিধি দলকে প্রতিরক্ষা মেলায় আমন্ত্রণ জানানোর জন্য তুর্কি ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী উভয়কেই ধন্যবাদ জানান।

আইএসপিআর আরও জানায়, তুরষ্কের জাতীয় প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী মুহসিন দেরে সামরিক সরঞ্জামাদির পাশাপাশি সেনাসদস্যদের প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি বিনিময়, ইত্যাদি ক্ষেত্রেও সেদেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে অধিকতর সহযোগিতা এবং সহায়তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

তুর্কি ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডন্ট ইসমাইল দেমির আশ্বাস দেন যে তিনি তাঁর সংস্থা এসএসবি এর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সাথে চলমান বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবেন এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবেন, যাতে করে ভবিষ্যতে উভয় দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও বন্ধুত্বপূর্ণ এবং কল্যাণকর হয়।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা মেলার দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার (২০ আগস্ট) সেনাবাহিনী প্রধান প্রদর্শনীর বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে দেখেন। বিভিন্ন সরঞ্জামাদির বিষয়ে অবহিত হন। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের সাথে তিনি আলোচনা ও মতবিনিময় করেন। এ মেলা শেষে সেনাপ্রধান তুরস্কের সেনাবাহিনী প্রধান এবং চিফ অব জেনারেল স্টাফ এর সাথে সাক্ষাৎ করবেন।

এর আগে বুধবার (১৮ আগস্ট) আইএসপিআর জানায়, জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী, তুরস্কের ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট, তুর্কি সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ, ল্যান্ড ফোর্স কমান্ডার ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

সাক্ষাৎকালে তিনি দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যকার সম্পর্ক আরও জোরদার ও পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করবেন। এ সময় তিনি তুরস্কের সামরিক জাদুঘর, ওয়ার কলেজ, অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ ও আর্মি এভিয়েশনসহ অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থানগুলো পরিদর্শন করবেন। এ ছাড়া সফরকালে তিনি তুরস্কে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনে মতবিনিময় করবেন।

কালের আলো/এমএএএমকে