সেনা প্রধানকে নিয়ে মিথ্যার বেসাতি করে আবারো ‘ধরা’ ডা: জাফরুল্লাহ!

প্রকাশিতঃ 8:45 am | October 16, 2018

অ্যাক্টিং এডিটর, কালের আলো :
দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে নিয়ে অসত্য ও ভিত্তিহীন বক্তব্য দেওয়ার পর ক্ষমা ও দু:খ প্রকাশ করে দেওয়া বক্তব্যে আবারো মিথ্যার বেসাতি করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী। শব্দ চয়নে ‘ভুল’ করে ‘কোর্ট অব ইনকোয়ারি’র জায়গায় ‘কোর্ট মার্শাল’ বলেছেন, তাঁর এমন বক্তব্যেরও কোন ভিত্তি নেই।

দেশের ঐক্য, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক সেনাবাহিনীর দীর্ঘ বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে আপন আলোয় উদ্ভাসিত জেনারেল আজিজ আহমদেকে নিয়ে নানা উদ্ভট, বিভ্রান্তিকর ও অবিশ্বাসযোগ্য কথা রটিয়ে জীবনের শেষ বেলায় ভগ্ন-স্বপ্নের অলিগলিতে মিথ্যাচারের বেসাতি করে রীতিমতো ‘ধরা’ খেয়েছেন বিএনপিপন্থী এই বুদ্ধিজীবী।

সেনা সদর দপ্তর মনে করছে, ইতোপূর্বে সময় টিভিতে ভুল, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বক্তব্যের জন্য ভুল স্বীকার ও দু:খ প্রকাশ করতে গিয়ে পুনরায় অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ও চতুরতার সাথে ডা: জাফরুল্লাহ মিথ্যা তথ্য দিয়ে জেনারেল আজিজ আহমেদ’র ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন।

সেনা সদর বলছে, ব্যক্তি আজিজের বিরুদ্ধে কখনো কোর্ট মার্শাল তো হয়ইনি বরং জেনারেল আজিজের সুদীর্ঘ বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে তাঁর বিরুদ্ধে কোন কোর্ট অব ইনকোয়ারিও হয়নি।

পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে অন্যতম ‘সেরা’ সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ নেতৃত্বে নিপুণ দক্ষতার জন্য বার বার প্রশংসা কুড়িয়েছেন। পুরো ক্যারিয়ারে তিনি নির্মল-নিষ্কলুষ। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কখনোই বিতর্কের পূতিগন্ধময় পানি লাগতে দেননি শরীরে। অথচ তাকে নিয়ে মনগড়া তথ্য দিয়ে ডা: জাফরুল্লাহ জনমনে ধিক্কৃত হয়েছেন।

আরো পড়ুন:
‘চৌকস’সেনা প্রধান আজিজ আহমেদকে নিয়ে কেন ডা: জাফরুল্লাহ’র ‘মিথ্যাচার’?

এর আগে গত মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) সময় টেলিভিশনে রাত ১০টায় প্রচারিত টকশো ‘সম্পাদকীয়’ চলাকালীন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ২০০৪ সালের ২১শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডের উৎস সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘…দেখেন, আর্জেস গ্রেনেড… আমি জানি না সময়টি মিলে কিনা, আমাদের বর্তমান চিফ অব আর্মি আজিজ সাহেব চট্টগ্রামের কমান্ডার ছিলেন, জিওসি ছিলেন, কমান্ড্যান্ট ছিলেন।

তার ওখান থেকে একটা ব্যাপক সংখ্যক সমরাস্ত্র, গোলাগুলি চুরি হয়েছিল, হারিয়ে গেছিল, বিক্রি হয়ে গেছিল এবং এ জন্য একটা কোর্ট মার্শালও হয়েছিল, আজিজের নামে, জেনারেল আজিজের নামে কোর্ট মার্শালও হয়েছিল। আজকে উনি…, কিন্তু উনার কেন এসেছে, উনি হলেন ওভার অল, উনি নিশ্চয়ই এখন তো ওখান থেকে এবং আমরা আরও দেখছি মিরপুরে সম্প্রতি কয়েক বাক্স পুকুরের মধ্যে পাওয়া গেছে, এ সবগুলি আমাদের ব্যর্থতা…।’

জাফরুল্লাহর এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সেনা সদরের প্রতিবাদপত্রে বলা হয় ‘বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সম্পর্কে জনাব ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্য ছিল একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন অসত্য বক্তব্য। কারণ, বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ চাকরি জীবনে কখনোই চট্টগ্রামের জিওসি বা কমান্ড্যান্ট হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন না। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ তার দীর্ঘ বর্ণাঢ্য সামরিক চাকরি জীবনে কখনোই কোর্ট মার্শালের সম্মুখীন হননি।’

 

সংবাদ সম্মেলনে ডা: জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী

আধুনিক, যুগোপযোগী, শক্তিশালী সেনাবাহিনীর ‘প্রাণভোমরা’ জেনারেল আজিজ আহমেদকে নিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের নব্য মদদদাতা, মুক্তিযোদ্ধা ডা: জাফরুল্লাহ’র এমন মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অসত্য ও বানোয়াট বক্তব্যের জন্য চারিদিকে তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জোরালো হয়।

এমন অবস্থায় শনিবার (১৩ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলন করে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নতুন করে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য ও দেশের সচেতন সাধারণ মানুষের মাঝে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি করেন ডা: জাফরুল্লাহ। এই যাত্রায় সেনা প্রধানকে উদ্দেশ্যে করে আবারো ভুল তথ্যে মিথ্যাচার করে বসেন।

বহুরূপী ডা: জাফরুল্লাহ’র এমন বক্তব্যের পর পুনরায় কড়া প্রতিবাদ বার্তা দেয় সেনা সদর। প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়, গত ৯ অক্টোবর টকশোতে ডা: জাফরুল্লাহ ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড’র উৎস হিসেবে সুকৌশলে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করার একটি চেষ্টা করেছিলেন যা ছিল দুরভিসন্ধিমূলক। ডা: জাফরুল্লাহ’র বক্তব্যটি চরম মিথ্যাচারের শামিল।

আরো পড়ুন:
সেনা প্রধানকে নিয়ে ‘অসত্য’ বক্তব্যে ‘তুলোধুনো’ জাফরুল্লাহ : বিচার দাবি

প্রতিবাদে বার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে কখনো কোন গ্রেনেড হারানো, চুরি বা বিক্রি হওয়ার কোন ঘটনা ঘটেনি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত মামলার রায় ঘোষণার আগের দিন টেলিভিশন টকশোতে এই ধরণের বক্তব্য প্রদান উদ্দেশ্য প্রণোদিত। সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অসত্য বক্তব্যকে সংশোধনের কোন চেষ্টা করেননি। তাঁর সামগ্রিক বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে তিনি সেনাবাহিনীতে কর্মরত সকল পদবীর সদস্যদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টার পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সেনাবাহিনী প্রধানের ভাবমূর্তি এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক দেশ প্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন।

‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ মামলা তদন্ত করতে ডিবি’র কর্মকর্তারা মাঠে
‘সময়’-এর টকশোতে সেনা প্রধানকে নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিরুদ্ধে দায়ের করা সাধারণ ডায়েরির (জিডি) তদন্ত শুরু করে মাঠে নেমেছেন ডিবির কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) বলছে, সেনা সদরের সাধারণ ডায়েরিটি (জিডি) গত রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে এটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হিসেবে গ্রহণ করে তদন্তের জন্য গোয়েন্দা(ডিবি) পুলিশকে স্থানান্তর করা হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান কালের আলোকে এই বিষয়ে জানিয়েছেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দক্ষিণের একটি টিম ইতোমধ্যেই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে।

গত শুক্রবার (১২ অক্টোবর) সেনা সদরের মেজর (বিএ ৮০০৬) মেজর এম রকিবুল আলম বাদী হয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি জিডি (নম্বর ৪৯৮) দায়ের করেন।

আরো পড়ুন:
ডা. জাফরুল্লাহ’র বিরুদ্ধে জিডি সেনা সদরের, তদন্ত দাবি

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ক্যান্টনমেন্ট থানায় দায়ের হওয়া জিডির সঙ্গে বাদী ডা. জাফরুল্লাহর বক্তব্যের যে সিডি সংযুক্ত করে দিয়েছেন তা তারা পর্যালোচনা করছেন। একইসঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহর ভুল স্বীকার করে দেওয়া বক্তব্য এবং উল্লেখ করা কারণগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি এসব বক্তব্য ইচ্ছে করেই দিয়েছেন নাকি মানসিক স্থিতি কমে যাওয়ায় ভুল করে বলেছেন, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে।

ডা. জাফরুল্লাহর এই বক্তব্যের উদ্দেশ্য এবং এর নেপথ্যে কারো প্ররোচনা রয়েছে কিনা তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

জাফরুল্লাহ’র বিরুদ্ধে এবার অভিযোগ জমি দখলের
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জমি দখলের চেষ্টা, ভাঙচুর ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সোমবার (১৫ অক্টোবর) রাতে আশুলিয়া থানায় এ মামলা দায়ের করেন মানিকগঞ্জ জেলার হরিরাম পুরের মোহাম্মদ আলী (৫৬) ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের আনিছুর রহমান (৫৫)।

এজহার অনুযায়ী, মামলায় জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছাড়াও আরো তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন-গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দেলোয়ার হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক সাইফুল ইসলাম শিশির (৫৫) ও নূর মোহাম্মদের ছেলে আওলাদ হোসেন (৪৮)। আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ জিয়াউল হক মামলাটি রেকর্ড করেন।

মামলার এজহারে বলা হয়, আশুলিয়া থানাধীন পাথালিয়া মৌজায় ৪.২৪ একর জমির ক্রয় সূত্রে মালিক মোহাম্মদ আলী, আনিছুর রহমান ও তাজুল ইসলাম। তাদের মালিকানাধীন জমিতে কাটা তারের বেষ্টনী দিয়ে টিনশেডের ঘর বানিয়ে গাছপালা রোপণ করেছেন। কিন্তু আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে এ জমি দখল করার চেষ্টা করছে।

সর্বশেষ গত ১৪ অক্টোবর আসামিরা ওই জমিতে হাজির হয়ে বলেন, জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নির্দেশে এ জমি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাছে হস্তান্তর করতে হবে অথবা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে এক কোটি টাকা জরিমানা দিতে হবে। বাদীরা এ টাকা দিতে অস্বীকার করলে আসামিরা জমিতে ভাঙচুর করেন।

কালের আলো/এএ