দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের উদার পদক্ষেপের প্রশংসা যুক্তরাষ্ট্রের
প্রকাশিতঃ 10:49 pm | October 04, 2017
দ্বিপাক্ষিক এক বৈঠকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশের উদার পদক্ষেপ আখ্যা দিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র সদর দফতর পেন্টাগনে অনুষ্ঠিত ওই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া মানবিক সহায়তা, ত্রাণ কর্মসূচি, শান্তিরক্ষী মিশন, প্রতিরক্ষা বাণিজ্য, সামরিক সহায়তা ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানসহ বিভিন্ন বিষয়ও ছিল আলোচ্যসূচিতে।
বৈঠকে বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুক্তরাষ্ট্র বিষয়ক মহাপরিচালক আবিদা ইসলাম। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে দেশটির রাজনৈতিক ও সামরিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি মিশেল মিলার বৈঠকে অংশ নেন। পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হেদার নরেট বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের চলমান সহিংসতা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই মানবিক বিপর্যয়ে আমরা বাংলাদেশের উদার পদক্ষেপের প্রশংসা জানাই। তারা অসহায়দের পাশে দাঁড়ানার যে চেষ্টা করছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়।’ চলতি বছর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে থাকা রোহিঙ্গার জন্য ৯৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নরেট বলেন, ‘বাংলাদেশে যেহেতু বিশাল সংখ্যক মানুষকে আশ্রয় দিয়েছেন। আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই।’
পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র দাবি করেন, ২০১২ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে এমন আলোচনা হয়ে আসছে। আলোচনার মধ্যে দুই দেশের মধ্যকার নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পর্ক আরও জোরদার হয়। এতে উন্নয়নের স্বার্থের প্রতিফলন ঘটেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দাবি অনুযায়ী, ২০০৬ থেকে ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সামরিক অর্থায়ন প্রকল্প থেকে বাংলাদেশে ১০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ১৭টি জাহাজের মাধ্যমে এটি পৌঁছেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের কাছে। কোস্টগার্ডও বিগত বছরগুলোতে সমুদ্রে তাদের নজরদারি বাড়িয়েছে। সমুদ্র রক্ষায় নিয়েছে নতুন সব পদক্ষেপ। ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত আগের বছরের তুলনায় ৬ শতাংশ উন্নতি করেছে তারা। ২০১০ সালে ৪৫ টি মাদক অভিযানকে থামিয়েছে, ২০১১ সালে ৬৩৬টি এবং ২০১২ সালে ৯৪৭টি মাদক বিষয়ক কর্মকাণ্ড ধরতে সফল অভিযান চালিয়েছ তারা।
ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরো ও রিজিওনাল কো-অপারেশনে এগ্রিমেন্ট অন কমব্যাটিং পাইরেসি এন্ড আর্মড রবারি চট্টগ্রামের আশপাশের এলাকাজুড়ে এই উন্নতির কথা উল্লেখ করেছে। চট্রগ্রামেই কোস্ট গার্ডের প্রধান ঘাঁটি। এছাড়া একসেস ডিফেন্স আর্টিকেলস (ইডিএ) মার্কিন কোস্টগার্ড কাটার জারভিস তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। এর মাধ্যম বাংলাদেশের নৌবাহিনী যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করতে পারছে।
হাইয়ান ঘূর্ণিঝড়ের পর বাংলাদেশে প্রথম যাত্রায় এটি গুয়ামে মার্কিন ঘাটিতে নোঙর করে। সেখানে ত্রাণ নিয়ে ফিলিপাইনে সরবরাহ করে। আর ফিলিপাইনের নৌবাহিনীর সঙ্গে যৌথ প্রশিক্ষণে অংশ নেয় তারা। এরপর মালয়েশিয়ার এয়ার ফ্লাইট এমএইচ ৩৭০ খুঁজতেও এই জাহাজ ব্যবহৃত হয়। এখন বাংলাদেশের এমন দুটি জাহাজ রয়েছে। এই জাহাজগুলোতে থাকা নাবিকরা যুক্তরাষ্ট্রে নৌবাহিনী ও কোস্টাগার্ডের স্কুল থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। পররাষ্ট্র দফতরের দাবি, এই সবকিছুই পারস্পরিক সামরিক সহায়তার দৃষ্টান্ত।