কনস্টেবল টু অতিরিক্ত আইজিপির প্রশিক্ষণ, ‘মাইফলক’ মনে করেন আইজিপি
প্রকাশিতঃ 8:01 pm | September 05, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
প্রথাগত প্রশিক্ষণের বাইরে সম্পূর্ণ নতুন এক উদ্যোগ। নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ৪৮ সপ্তাহের ব্যতিক্রমী এক আয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় একেবারে কনস্টেবল থেকে সর্বোচ্চ পদে দায়িত্বরত অতিরিক্ত আইজিপিদের জন্য অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ। চলতি বছরের ১৪ সপ্তাহে ৬০ হাজার ৬৬৬ এবং আগামী বছর ২ লক্ষ ১২ হাজার পুলিশ সদস্যের প্রত্যেকেই আসবেন এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায়।
গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে ২০৪১ সালের উন্নত ও ধনী দেশের উপযোগী পুলিশ বাহিনী হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে আরও একধাপ এগিয়ে গেলো দেশপ্রেমী এই বাহিনীটি। মুজিবশতবর্ষে এই দিনটিকে স্বভাবতই ‘বিশেষ দিন’ হিসেবেই উল্লেখ করেছেন পুলিশপ্রধান ড.বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)।
নিজ বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের পেশাগত দক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধিতে এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিদের প্রথম প্রতিরোধ গড়া গর্বিত পুলিশ বাহিনী নতুন এক মাইফলকের সূচনা করেছে বলেও মনে করেন তিনি।
রোববার (০৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের হল অব ইন্টেগ্রিটিতে পুলিশের সব সদস্যের পদমর্যাদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি উদ্বোধনকালে নিজের এমন দৃঢ় বিশ্বাসের কথাই মোটা দাগে উপস্থাপন করেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ ড.বেনজীর আহমেদ।
আইজিপির উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে দেশের একমাত্র পুলিশ একাডেমি, ৪ টি পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, স্পেশালাইজড ট্রেনিং সেন্টার ও ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার মিলিয়ে ১০৫ টি প্রতিষ্ঠানে একযোগে এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশ সৃষ্টি করলো নতুন এক ইতিহাস
বৃত্তের বাইরের মানুষ হিসেবেই পরিচিত পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.বেনজীর আহমেদ। নতুন উদ্ভাবন, সৃষ্টিশীলতা ও মননশীলতায় আধুনিক পুলিশ বাহিনী গড়তে দিন-রাত একাকার করে কাজ করে যাচ্ছেন। নির্ধারিত কোর্সের বাইরে তিনি পুলিশের সব পদমর্যাদার সদস্যদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিরও নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
দক্ষতাভিত্তিক এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে পুলিশ বাহিনী নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করে পুলিশপ্রধান বলেন, ‘সাধারণত কনস্টেবল থেকে পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত আমরা রুটিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকি। কিছু কিছু প্রশিক্ষণ পদোন্নতির পূর্ব শর্ত। আবার কিছু কিছু প্রশিক্ষণ পদোন্নতির পরে হয়ে থাকে।
পরবর্তী পদোন্নতি না হওয়া পর্যন্ত সাধারণত আর প্রশিক্ষণ থাকে না। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, প্রতিটি পুলিশ সদস্য যেন বছরে একবার প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা ২ লক্ষ ১২ হাজার পুলিশ সদস্যের বিশাল বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে বছরে একবার প্রশিক্ষণে পাঠানোর কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। এর মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের যে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রশিক্ষণ দেয় তাঁরা ২ লাখ ১২ হাজার সদস্যের যে অ্যাডিশনাল প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে তাঁর জন্য কিন্তু তৈরি করা হয়নি। মূলত বেসিক ট্রেনিং বা রুটিন ট্রেনিংয়ের জন্য এসব প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছে।’
ট্রেনিং উইং ও সকল প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘চলতি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির পাশাপাশি তাঁরা ২ লক্ষ ১২ হাজার সদস্যকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছে। এটি একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ।

কারণ প্রতিটি র্যাঙ্কের জন্য প্রশিক্ষণ সিলেবাস তৈরি করা ও প্রশিক্ষকদের তৈরি করা। প্রতিটি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক সাধারণ কর্মসূচি রয়েছে তার মধ্যে স্লট খুঁজে বের করে এদের জন্য জায়গা বের করা একটি জায়গান্টিক টাস্ক। আমাদের প্রশিক্ষণ উইং সফলতার সঙ্গে এটি করতে পেরেছে।’
প্রতিটি কোর্সের ডিউরেশন হবে এক সপ্তাহের মতো, এমনটি জানিয়ে পুলিশের সর্বোচ্চ এই কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশের একমাত্র পুলিশ একাডেমি, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, স্পেশালাইজড ট্রেনিং সেন্টার, ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার ও ঢাকা মহানগর পুলিশের নিজস্ব ট্রেনিং সেন্টারে একযোগে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালিত হবে।
প্রতিটি ব্যাচে ৪ হাজার ৩১৯ জন সদস্য প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। আমরা এই বছরে ১৪ টি সপ্তাহ পাবো প্রশিক্ষণের জন্য। ৬০ হাজার ৬৬৬ জন সদস্যকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করাতে পারবো। আগামী বছর আমরা পুরো পুলিশ বাহিনীকে এই অতিরিক্ত প্রশিক্ষণে পাঠাতে পারবো। এজন্য আমাদের প্রয়োজন হবে ৪৮ সপ্তাহ।’
বাস্তবায়ন হবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা, সংযোজিত হবে মাইফলক
পুলিশের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়ন হবে বলেও মন্তব্য করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক। গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি পুলিশ সদস্য বছরে একবার প্রশিক্ষণের জন্য এসব ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে যাবে। আমরা মনে করি বছরে একবার বাধ্যমতামূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণের ফলে পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।

এর ফলে আধুনিক পুলিশ বাহিনী গঠনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখবে। ২০৪১ সালের আধুনিক ও ধনী বাংলাদেশের উপযোগী পুলিশ বাহিনী গড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিক পালন করবে। পুলিশ বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধিতে সংযোজিত হবে আরও একটি মাইলফলক।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (এইচআরএম) মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য আভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা তথা দেশের নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে যুগোপযোগী পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা অপরিসীম। প্রশিক্ষণ একটি বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং বাহিনীটিকে যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তুলে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশকে যুগোপযোগী করার নিমিত্তে বর্তমান সরকার পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তির সংযোজন, আধুনিক প্রশিক্ষণ, জনবল বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছে। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানে অধিকতর পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হচ্ছে। সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রী পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে নির্দিষ্ট সময় পর পর প্রশিক্ষণ প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করেছেন।’
অনুষ্ঠান মঞ্চে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি ড.মঈনুর রহমান চৌধুরী ও মো.নাজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার মো.শফিকুল ইসলাম, র্যাব ডিজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত আইজিপি
মোশাররফ হোসেন, এস এম রুহুল আমিন, ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান, ইব্রাহিম ফাতেমীসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সকল পুলিশ ইউনিটের প্রধানরা অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে সাথে যুক্ত ছিলেন।

গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে যা বলেছেন আইজিপি
ই-অরেঞ্জের কথিত পৃষ্ঠপোষক বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা দেশ ত্যাগে কারও গাফিলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা বলেন।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘সরকারি চাকরির নির্ধারিত বিধান-শর্ত রয়েছে। কেউ সেসব শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। তিনি কিছু করে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, ক্রিমিনাল অফেন্স হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার প্রক্রিয়া দেখে স্পষ্ট যে, সে অনিয়মিত পথে দেশ ত্যাগ করেছেন।
ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্দি বিনিময় চুক্তি রয়েছে। তাই সোহেল রানাকে ফিরিয়ে আনা সমস্যা হবে না। যেহেতু সোহেল ভারতে একটি মামলার আসামি, সেখানে ওই সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয় রয়েছে। সেই প্রক্রিয়া শেষ হলে তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা কষ্ট হবে না।’
পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে এক গণমাধ্যমকর্মীর প্রশ্নের উত্তরে আইজিপি বলেন, ‘আমরা যে কাজটি করার চেষ্টা করি কেউ কোন অপরাধ করলে কঠোর ব্যবস্থাা গ্রহণ করি। যেসব বিষয় মিডিয়ায় দেখছেন আমরা ইচ্ছা করলে বিভাগীয় ব্যবস্থার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে পারতাম। আমরা দগদগে ঘা-এ ব্যান্ডেজ না করে ঘা’কে চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি। এতে বাহিনী পরিস্কার হয়ে যাবে। ইচ্ছা করলে আমরা ব্যান্ডেজ করতে পারতাম। কিন্তু আমরা এই ব্যান্ডেজের মধ্যে নেই।’

কালের আলো/জিকেএম/এমএএএমকে