কী বোঝাতে চাইছেন ‘অধ:পতিত’ জাফরুল্লাহ?

প্রকাশিতঃ 11:02 am | October 18, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :
মন চাইলেই কথা ঘুরিয়ে নিচ্ছেন। ‘বিস্ফোরক’ পরিস্থিতিতে দু:খপ্রকাশ করছেন। আবার ক্ষমাও চেয়েছেন। এরপরও থামছে না বেফাঁস কথাবার্তা। অসত্য আর মিথ্যাচারে ভরপুর বক্তব্যে ‘আঘাত’ করার অপচেষ্টা করেছেন দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে। বিনষ্ট করতে অপতৎপরতা চালাচ্ছেন বাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি। ফলশ্রুতিতে যা হবার কথা তাই হয়েছে। পড়েছেন রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার মুখে।

দীর্ঘ জীবনে বার বার ‘ইউটার্ন’নেওয়া বিএনপি’র প্রকাশ্য এই ‘উপদেষ্টা’ এখন নিজের পক্ষেই সাফাই গাইছেন। বলেছেন, ‘আমি ক্ষমাও চেয়েছি। কেউ যদি সমালোচনা করে সে কী রাষ্ট্রদ্রোহী? আমি একটা কথা বলেছিলাম কথাতে শব্দের ভুল ছিল। তাই বলে কি আমি রাষ্ট্রদ্রোহিতা করেছি?’

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার পর প্রথমবারের মতো নিজের অবস্থান জানাতে গিয়ে মূলত সরকার হটানোর ‘খোয়াব’ দেখা জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের বয়োবৃদ্ধ এই নেতা প্রকারান্তরে কী বোঝাতে চাইলেন এমনটি নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ও এরশাদের ‘ঘনিষ্ঠ’ অধ:পতিত এই ফ্রন্ট নেতা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত দেশের আস্থা ও গর্বের প্রতীক সেনাবাহিনীর ঐক্য ও সংহতি বিনষ্ট করার মিশন নিয়ে সক্রিয় রয়েছেন।

আরো পড়ুন:
সেনা প্রধানকে নিয়ে ‘অসত্য’ বক্তব্যে ‘তুলোধুনো’ জাফরুল্লাহ : বিচার দাবি

‘সুযোগ-সন্ধানী’ জাফরুল্লাহ’র কান্ডকীর্তি পুঞ্জিভূত ক্ষোভ নিয়ে বাঁকা চোখেই দেখছে সতের কোটির বাংলাদেশ। দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার প্রশ্নে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষের এমন সন্দেহ-সংশয় আরো বাড়িয়ে দিয়েছে ওয়ান ইলেভেনের সমালোচিত উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেনের ‘লম্ফঝম্ফ’।

বুধবার (১৭ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে একই আলোচনা সভায় ‘সাফাই সাক্ষী’ দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমার বন্ধু জাফরুল্লাহ সাহেব একটা ভুল করেছে, ক্ষমাও চেয়েছে। …এর পরে যা হলো, আমি নিশ্চই বিশ্বাস করি না এটা আর্মি চিফের চিন্তাভাবনা।’

এই মইনুল হোসেন মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) রাতে একাত্তর টেলিভিশনের একাত্তর জার্নালে আমাদের অর্থনীতির জ্যেষ্ঠ নির্বাহী সম্পাদক মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছেন। একজন নারী সংবাদকর্মীকে প্রকাশ্যে এমন শব্দ ব্যবহার করে ব্যক্তিগত আক্রমণ করার জেরে তোপের মুখে আবার ফোন করে ক্ষমাও চেয়েছেন।

অবশ্য সচেতন সাধারণ মানুষ মনে করছেন, ডা: জাফরুল্লাহ আর মইনুল একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। সেনাবাহিনীর মতো একটি পেশাদার, সুশৃঙ্খল, আধুনিক ও শক্তিশালী বাহিনীর ঐক্য ও সংহতিকে বিনষ্ট করতে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির ‘থিংকট্যাঙ্ক’ জাফরুল্লাহ। সেনা প্রধানের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে ক্ষমা চেয়ে একই সংবাদ সম্মেলনে পুনরায় মিথ্যাচার করেছেন।

আরো পড়ুন:
‘চৌকস’সেনা প্রধান আজিজ আহমেদকে নিয়ে কেন ডা: জাফরুল্লাহ’র ‘মিথ্যাচার’? 

আইন মোতাবেকই সেনা সদর দপ্তর থেকে কড়া প্রতিবাদ, জিডি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে। নির্বাচনের আগে মূলত সেনাবাহিনীকে উসকে দিয়ে ফায়দা হাসিলের অপতৎপরতা চালাচ্ছেন ‘জাফরুল্লাহ-মইনুল সিন্ডিকেট’।

বন্ধুকে রক্ষায় বিএনপিসহ গঠিত নতুন জোটের উদ্যোক্তা মইনুল নিজেও আবারো সেনা প্রধানকে টেনেছেন। বিরোধীতা করেছেন রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার। বলেছেন, ‘এটা একটা স্বাধীন দেশ। ঠিক আছে একটা ভুলভ্রান্তি তো হতেই পারে। সেই জন্য দেশদ্রোহী মামলা দিতে হবে, এটা কী কথা?’

একই সূত্রের ভাষ্যমতে, সব সময় দুর্যোগে আর্তমানবতার সেবা ও জানমাল রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর কর্তব্য ও দায়িত্বশীল ভূমিকা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত আসছে। পবিত্র সংবিধান, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীন ও বাহ্যিক যেকোন হুমকি মোকাবেলায় প্রস্তুত সেনাবাহিনীকে কায়দা করে কথার ফুলঝুরিতে ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলায় জড়ানোর চক্রান্ত করে জাফরুল্লাহ ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। এখনো তিনি বোঝাতে চাইছেন শব্দ বিভ্রাট করেছেন মাত্র কোন অপরাধ করেননি।

অথচ সময় টিভি’র সেই টকশো’র আলোচক আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘এটা শুধু অনভিপ্রেত না। এটা একটা অফেন্স। এটা একটা ক্রিমিন্যাল অফেন্সের পর্যায়ে পড়বে- না জেনে কোন তথ্য দেওয়া।’

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষজন বলছেন, একাগ্রতা, কর্মদক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠাবোধের জন্য গোটা বাহিনীতে অনন্য এক উচ্চতায় রয়েছেন সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। দেশের গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখতে তাঁর নেতৃত্বে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বাহিনীটি।

আরো পড়ুন:
সেনা প্রধানকে নিয়ে মিথ্যার বেসাতি করে আবারো ‘ধরা’ ডা: জাফরুল্লাহ!

সেনাবাহিনীর এক ‘ব্র্যান্ড নেম’ জেনারেল আজিজ আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত একটি আধুনিক, জ্ঞান সমৃদ্ধ সেনাবাহিনী উপহার দিতে কাজ করছেন নিরন্তর। ক্ষুব্ধ হয়েই তাকে আক্রমণ করে দেশের সম্পদ ও ঐক্যের প্রতীক এই বাহিনীর ‘চেইন অব কমান্ড’ ভাঙার অপচেষ্টা করছেন জাফরুল্লাহ।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, একটি অপশক্তির প্ররোচনা থেকেই এর আগে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের নেতৃত্বে থাকা এবং ডিগবাজির জন্য সেরা ড.কামাল হোসেনও সেনাবাহিনীকে নিয়ে কটুক্তি করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমরা কিসের ভয় করব? কার কাছে কত ট্যাংক, কত কামান আছে? কত গুলি আছে? আমি ভয়ে ভীত না।’

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে মূলত সেনাবাহিনীকে টার্গেট করেই ষড়যন্ত্রের বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে এই চক্রটি। তাদের একের পর এক ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ আচরণ নিজেদের দাঁড় করিয়েছে কাঠগড়ায়। রোষের শিকার হচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ধিক্কৃত হচ্ছেন জনমানসে। সাবধান জাফরুল্লাহ-কামাল-মইনুল।

কালের আলো/এএ