সেনাপ্রধানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রসারিত হবে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত

প্রকাশিতঃ 12:48 am | September 19, 2021

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

নানাদিক থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ে তিনদিনব্যাপী ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সেনাবাহিনী প্রধানদের এবারের সম্মেলন পেয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। নিজেদের মধ্যকার সহযোগিতা সম্প্রসারণের মনোনিবেশ করেই ভবিষ্যৎমুখী সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার উচ্চারিত হয়েছে সম্মেলনটিতে।

পারস্পরিক সহযোগিতা আর সমৃদ্ধির নতুন দিগন্ত প্রসারিত করার ঐক্যমতে পৌঁছেই এক মঞ্চ ভাগাভাগি করেছেন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ১৭টি দেশের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা। এই অঞ্চলের ‘পাওয়ার হাউজ’ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদও বিশ্বমঞ্চে সহযোগিতার বিষয়গুলোতেই সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।

কৌশলগত অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে বাংলাদেশের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে নিজেদের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককেও যেন নতুন মাত্রায় উন্নীত করেছেন। পারস্পরিক বন্ধুত্ব আরও গভীর এবং টেকসই করতে একমত হয়েছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধানসহ এই অঞ্চলটির জ্যেষ্ঠ সামরিক নেতারা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড এবং পাপুয়া নিউগিনি ডিফেন্স ফোর্সের আয়োজনে চলতি বছরের ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সেনাবাহিনী প্রধানদের সম্মেলনে যোগ দিতে গত শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাত ১ টা ৪০ মিনিটে হাওয়াইয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

মার্কিন সেনাবাহিনীর আমন্ত্রণে তিনদিনের এই সম্মেলনে সিরিজ কর্মসূচিতে কাটিয়েছেন জেনারেল শফিউদ্দিন। মতবিনিময় করেছেন যুক্তরাজ্যের ফিল্ড আর্মি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল রালফ উডইসহ বিভিন্ন দেশের বাহিনী প্রধান ও বাহিনীর জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিদের সঙ্গে।

আন্তরিক পরিবেশে প্রতিটি বৈঠকই ছিল দ্বিপাক্ষিক। নিজেদের সম্পর্কের সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে নানা সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলোতে পারস্পরিক সহযোগিতার বৃদ্ধির বিষয়েও ‘ওয়ান টু ওয়ান বৈঠক’ এ জোর দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্মেলনে যোগদান শেষে এদিন দেশে ফিরেছেন জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। এর আগে তিনি কনফারেন্সের প্রথম দিনে মার্কিন সেনাবাহিনীর ২৫তম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের সক্ষমতা এবং মার্কিন আর্মি প্যাসিফিক কমান্ড পরিচালিত একটি লাইভ ফায়ার মহড়া অবলোকন করেন।

আর্মি চিফস কনফারেন্সের দ্বিতীয় দিনে সেনাবাহিনী প্রধান ‘দ্য চেঞ্জিংফিজিক্যাল এনভায়রনমেন্ট অব ল্যান্ড অপারেশনস’ এবং ‘দ্য ইনভলভিং হিউম্যান এনভায়রনমেন্ট অব ল্যান্ড অপারেশনস’ বিষয়বস্তু দু’টির ওপর অনুষ্ঠিত প্লেনারি সেশনে অংশ নেন। প্লেনারি সেশনে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল জেমস মেকনভিল স্বাগত ভাষণ দেন।

এর পাশাপাশি ওই কনফারেন্সে যোগদানকারী যুক্তরাজ্যের ফিল্ড আর্মি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল রালফ উডইসসহ বিভিন্ন দেশের বাহিনীপ্রধান এবং বাহিনীর জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিদের সঙ্গেও তিনি মতবিনিময় করেন।

কনফারেন্সের শেষ দিন সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ মার্কিন আর্মি প্যাসিফিক কমান্ডের কমান্ডিং জেনারেল, জেনারেল চার্লস এ ফ্লিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এছাড়া ইন্দোনেশিয়ার সেনাপ্রধান জেনারেল আন্দিকা পেরকাসা, দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাপ্রধান জেনারেল নাম ইয়ং শিন, রয়াল থাই আর্মির অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডার ইন চিফ জেনারেল পর্নসাক পুলসাওয়াদ, পাপুয়া নিউগিনির ডিফেন্স ফোর্স কমান্ডার মেজর জেনারেল গিলবার্ট টরোপো, মঙ্গোলিয়ান ল্যান্ড ফোর্স কমান্ডের কমান্ডার মেজর জেনারেল বুজিনভ আমগালানবাটার, সিঙ্গাপুর আর্মির চিফ অব স্টাফ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফ্রেডেরিক চো এবং মালদ্বীপ ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্সের সার্ভিস কোরের কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হামিদ শাফিকের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন।

আইএসপিআর বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে সেনাবাহিনী প্রধানের এই সফরের মধ্য দিয়ে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলো এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হবে বলে আশা করা যায়।

কালের আলো/এএএম/এনএন