ময়মনসিংহের ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্বাক্ষী সেই বাড়ি

প্রকাশিতঃ 12:34 pm | January 20, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক | কালের আলো:

সাদামাটা দু’তলা একটি বাড়ি। সাধারণ কিন্তু কী গভীর প্রশান্ত। চারিদিকে শুন্যতা। ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পেরিয়ে খানিক পথ এগুতেই এ বাড়ি। ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্বাক্ষী এ বাড়িটির ইট-ধূলিকনায় লেগে আছে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের স্মৃতিচিহ্ন।

এ কারণেই এ বাড়িটিকে ময়মনসিংহবাসীর সংগ্রামী রাজনৈতিক ঐতিহ্য এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

ময়মনসিংহ জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের স্মৃতির শহর। সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষায় শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হবার পর সরকারি চাকরি প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

এরপর তিনি এ বাড়িটিতেই থাকেন। ১৯৫৫ সালের দিকে তিনি আইন পেশায় আত্ননিয়োগ করেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ এ সহচর পরের স্থানটি অলংকৃত করেন।

জাতীয় রাজনীতির সুবাধে তাকে রাজধানীতেই অবস্থান করতে হয়। কিন্তু নগরীর কলেজ রোডের এ বাড়ি থেকেই শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম নিজ জেলা ময়মনসিংহকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ করেছিলেন এবং এ বাড়িটির সঙ্গেই জড়িয়ে আছে তার সংগ্রামী জীবনের স্মৃতি।

১৯৫৭ সালে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৭ আসন থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মুজিবনগরে প্রতিষ্ঠিত সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি।

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত এ বাড়িতেই বড় হয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ড.সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব:) সাফায়েতুল ইসলামসহ সন্তানেরা।

প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মজিবুর রহমান খান মিল্কী জানান, ১৯৬১ সালের দিকে ময়মনসিংহ শহরের গোলকীবাড়ি এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় স্বপরিবারে বসবাস করলেও ৬৪ সালের দিকে কলেজ রোড এলাকায় একটু জমি কিনে টিনশেড নির্মাণ করে নিয়মিত বসবাস শুরু করেন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম। পরবর্তীতে তিন রুমের টিনশেডের বাড়িটি পাকা করা হয়।

আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বলীয়ান এ মহান নেতার সহধর্মিনী নাফিসা ইসলাম স্বামীর হত্যাকান্ডের পর নগরীর কলেজ রোডের ঐতিহাসিক এ বাড়িটিতেই থাকেন।

এ বাড়িতেই তিনি স্বামীর স্মৃতি আকড়ে ছিলেন। এরপর ২০০১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনিও চলে যান না ফেরার দেশে। শুন্য হয়ে যায় এ বাড়িটি। এরপর থেকেই সারা বছরই এ শুন্যতা লেগে থাকে। এখানে এখন থাকেন একজন কেয়ারটেকার। তার নাম রজব আলী। তিনি জানান, ‘মাঝে মধ্যে এ বাড়িতে এসে রাতে থাকেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। আর সারা বছর কেউই কোন খোঁজ করে না।’

প্রতি বছর ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবসে নগরীর সব পথ এসে শেষ হয় কলেজ রোডের এ বাড়িটিতে। দলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু সাধারণ মানুষ তাদের মহান নেতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামকে শ্রদ্ধা জানাতে এখানে এসে জড়ো হন। এ বাড়িটিকে ঘিরেই দিনভর তাদের বিনম্র শোক-শ্রদ্ধা আর ভালবাসার মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠে।

নতুন প্রজন্মের কাছে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে তুলে ধরতে ময়মনসিংহ নগরীতে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। তবে বঙ্গবন্ধুর এ ঘনিষ্ঠ সহচর, মহান এ নেতার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ও মহানগর আ’লীগের শীর্ষ নেতা মো: ইকরামুল হক টিটু’র তত্ত্বাবধানে টাউন হল মোড়ে নির্মিত হয়েছে স্কয়ার। নাম শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্কয়ার।