শীতে বৃদ্ধা মাকে রাস্তায় ফেলে পালালো ছেলে

প্রকাশিতঃ 1:55 pm | January 20, 2018

বিশ্ব ডেস্ক | কালের আলো: নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসারে অনেক কষ্ট করে ছেলেকে বড় করেন মা। নিজের হাতে সন্তানের বিয়ে দিয়ে ঘরে বউ নিয়ে আসেন। এখন সেই নিজের বাড়িতেই ঠাঁই হচ্ছে না তার। বৃদ্ধা মাকে শহর দেখানোর নাম করে বাড়ি থেকে নিয়ে এসে রাস্তায় রেখে চলে যান ছেলে।

ঘটনাটি ভারতের বারাকপুরের।

বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি জানাজানি হতেই হৈচৈ পড়ে যায়। শীতের রাতে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে স্থানীয় তৃণমূলের কর্মীরা রিকশা ইউনিয়ন অফিসে রাখেন। শুক্রবার সকাল থেকেই রিকশওয়ালাদের মাধ্যমে গুণধর ছেলের খোঁজে চারদিকে খোঁজ শুরু হয়। ছেলেকে পাকড়াও করে মায়ের কাছে আনা হয়। লোকজনের চাপে পড়ে তিনি বাধ্য হয়ে বৃদ্ধা মাকে বাড়ি নিয়ে যান।

ওই বৃদ্ধার নাম বাসন্তী মণ্ডল। তার বাড়ি দেবপুকুরের গণেশপুর এলাকায়। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তিনি ছেলের কাছেই থাকতেন। বৃহস্পতিবার ছেলে গণেশ ওরফে গৌরাঙ্গ মণ্ডল রিকশায় উঠিয়ে মাকে বারাকপুর নিয়ে যান। আনন্দপুরীর কাছে রাস্তায় বন্ধ দোকানের সামনে বৃদ্ধা মাকে নামিয়ে রেখে দেন। কিছুক্ষণ পর আসছি বলে তিনি চম্পট দেন।

সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হতেই অশীতিপর বৃদ্ধা ঠাণ্ডায় কাঁপতে থাকেন। কয়েক ঘণ্টা ধরে পাড়ার মধ্যে বৃদ্ধাকে বসে থাকতে দেখে এলাকার লোকজনের সন্দেহ হয়। এলাকার লোকজন কোথায় বাড়ি জানতে চান? তখন তিনি ছেলের বিষয়টি জানান।

স্থানীয় লোকজন সাবেক কাউন্সিলর মিলনকৃষ্ণ আশকে বিষয়টি জানান। মিলন শহর তৃণমূলের সভাপতি গোপাল পালকে জানান। শহর তৃণমূলের সভাপতি বলেন, “রাতে বিষয়টি পুলিশে জানাই। ওই বৃদ্ধা সঠিকভাবে ছেলের ঠিকানা বলতে পারছিলেন না। ফলে, অত রাতে বারাকপুর স্টেশনের ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের কাছে রিকশা ইউনিয়ন অফিসে তার থাকার ব্যবস্থা করা হয়। বৃদ্ধা মায়ের কাছে থেকে জানতে পারি, ছেলে রিকশা চালায়। এরপর শুক্রবার রিকশাওয়ালাদের মাধ্যমেই ওই ছেলের খোঁজে নেমে পড়া হয়। পরে, ছেলে এসে মাকে বাড়ি নিয়ে যায়।”

জানা গেছে, ছেলে যখন রিকশা নিয়ে মাকে নিতে আসেন, তখন আশপাশে ওই বৃদ্ধার হয়ে বহু লোকজন জড়ো হয়ে যান। সকলেই ছেলের প্রতি ক্ষোভে ফুঁসতে থাকেন। অবশ্য ছেলেকে দেখেই মায়ের সব অভিমান গলে জল। অনেকে ছেলেকে সামনে পেয়ে দু-এক কথা শুনিয়ে দেন। কিন্তু, তাতেও বৃদ্ধা মা আপত্তি জানান। তিনি বলেন, ছেলের কোনও দোষ নেই। আসলে ও রিকশ চালায়। কাল আমাকে নিয়ে এসে কাজের চাপে নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিল। এখন আবার নিতে চলে এসেছে। সাত রাজার ধন এক মানিক ছেলের এরকম অমানবিক আচরণের পরও মায়ের ক্ষমা দেখে স্থানীয় লোকজনও হতবাক।

 

কালের আলো/ওএইচ