ভারতে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত ৫০
প্রকাশিতঃ 11:47 pm | October 19, 2018
বিশ্ব ডেস্ক, কালের আলো:
ভারতের অমৃতসরে ট্রেনে কাটা পড়ে কমপক্ষে ৫০ জন নিহত হয়েছেন।
অমৃতসরের যোধা ফটকের কাছে শুক্রবার সন্ধ্যায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ধারকাজ চলছে বলে দেশটির পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, রেল লাইনের ধারে রাবণ বধের অনুষ্ঠান চলছিল। ভিড় এতটাই বেশি ছিল যে, রেললাইনের উপর উঠে অনুষ্ঠান দেখতে শুরু করেন অনেকে। রাবণের কুশপুতুলে দাহের সময় বাজির শব্দে কোনো অন্য আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল না। ফলে ট্রেন আসার খবর কেউ টেরই পায়নি। ওই সময় ট্রেন চলে আসায় পিষে যান অনেকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মৃতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। সংবাদ সংস্থা আইএএসএস জানিয়েছে, ঘটনার সময় সেখানে ৭০০ মানুষ উপস্থিত ছিল। অমৃতসরের পুলিশ কমিশনার এস এস শ্রীবাস্তব বলেন, কম করে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আমরা উদ্ধারকাজ চালাচ্ছি। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী রেল লাইনের পাশে দশেরার রাবণের কুশপুতুল পোড়ানো হচ্ছিল। রেললাইনের পাশে সেই রাবণ পোড়ানো দেখতে দাঁড়িয়ে ছিলেন বহু মানুষ। রাবণ পোড়ানোর সময়ে বাজির আগুন ছিটকে আসতে থাকে। দর্শকদের একাংশ সরে লাইনের উপর উঠে আসেন। আর সেই সময়তেই ওই লাইন ধরে চলে আসে দ্রুত গতির একটি ট্রেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, আপ এবং ডাউন দুই লাইনেই এক সঙ্গে ট্রেন চলে আসে। তাই কোনও দিকেই সরতে পারেননি দর্শকরা। ট্রেনের চাকার তলায় পিষে যায় একের পর এক মানুষের দেহ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বাজির আওয়াজে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল ট্রেনের আওয়াজ। তাই কেউ শুনতে পাননি। তাঁদের অভিযোগ, রাবণ দাহ যারা করছিলেন সেই আয়োজকরা অন্তত মানুষকে সতর্ক করতে পারতেন।
উত্তর রেলের জনসংযোগ আধিকারিক বলেন,“ সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে অমৃতসর এবং মানেওয়ালার মাঝখানে ২৭ নম্বর গেটের সামনে। একটি ডিএমএউ ট্রেন চলে যায় ভিড়ের উপর দিয়ে।”
দুর্ঘটনার পরই পুলিশের বিশাল বাহিনী উদ্ধার কাজে নেমে পড়েন। সাহায্য করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। উদ্ধারকারীদের একজন বলেন, “ট্রেনটির গতি যথেষ্ট বেশি ছিল। অনেক দেহ লাইন থেকে প্রায় পঞ্চাশ মিটার দূরে ছিটকে গিয়েছে ট্রেনের ধাক্কায়।”
প্রথম দফায় অমৃতসর সিভিল হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজে আহতদের নিয়ে যাওয়া হয়। অমৃতসর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের। আরও অনেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশের অনুমান মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, কারণ এখনও উদ্ধার কাজ শেষ হয়নি।
আলোর অভাবে উদ্ধার কাজ প্রথম দিকে যথেষ্ট ব্যহত হয়। টর্চ এবং মোবাইলের আলোতে উদ্ধার কাজ চালাতে হয়। উদ্ধারকারীদের একজন বলেন, লাইনের পাশে প্রায় ১০০ মিটার জায়গা জুড়ে পড়ে ছিল ছিন্ন ভিন্ন মানুষের দেহ। দেহাংশ ছড়িয়ে রয়েছে লাইন জুড়ে।
পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দার সিংহ শনিবার সকালেই ঘটনাস্থলে যাবেন। তিনি গোটা ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, “আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব সরকারের।” ইতিমধ্যেই মৃতদের পরিবার পিছু পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছে পঞ্জাব সরকার।
তবে এলাকার মানুষ রেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ,“ ট্রেনটি এত মানুষের ভিড় দেখেও গতি কমায়নি। হর্ণও দেয়নি দর্শকদের সতর্ক করতে।” গোটা ঘটনা ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে রাজ্য প্রশাসন এবং রেল কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবকে নিয়ে, যার জেরে প্রাণ গেল এত মানুষের। কী ভাবে অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ের পাশে এই অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হল? আর হলেও রেল কর্তৃপক্ষকে কী জানানো হয়েছিল?
কালের আলো/ওএইচ