শেয়ারবাজারে বড় দরপতন, প্রতিবাদে রাস্তায় বিনিয়োগকারীরা
প্রকাশিতঃ 4:36 pm | October 25, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:
শেয়ারবাজারে দরপতন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত কয়েকদিন বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারের দরবৃদ্ধি একা সূচকের পতন ঠেকিয়ে পরোক্ষে বাজারের পতনকে ঠেকানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু মাত্র দুই সপ্তাহে শেয়ারটির দর ১৪০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা হওয়ার পর সোমবার এ শেয়ারের কিছুটা দর সংশোধন পুরো বাজার পরিস্থিতিকে নাজুক করে তুলেছে।
সোমবার (২৫ অক্টোবর) লেনদেনের সাড়ে তিন ঘণ্টা পর দুপুর দেড়টায় প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে লেনদেন হচ্ছিল ৩৭৬ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে মাত্র ৩১টি দর বেড়ে কেনাবেচা হচ্ছিল। বিপরীতে দর হারিয়ে কেনাবেচা হচ্ছিল ৩৩০টি। দর অপরিবর্তিত অবস্থায় কেনাবেচা হতে দেখা যায় ১৫ শেয়ারকে। এ সময় পর্যন্ত এ বাজারে ৯২৭ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
ডিএসইতে অতিমাত্রায় সূচক পতনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। দুপুর দেড়টার দিকে মতিঝিলে ডিএসই’র পুরনো ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে বেশকিছু বিনিয়োগকারী প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
লেনদেনে আসা প্রায় ৯০ শতাংশ শেয়ার দর হারানোয় প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ১৩৭ পয়েন্ট হারিয়ে ৬৮৬৮ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। সূচক পতনের হার ছিল ১.৯৫ শতাংশ। সূচকের এ পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারের দরপতন। গতকালের তুলনায় ৯ টাকা দর হারিয়ে ১৫৮ টাকা ৫০ পয়সায় কেনাবেচা হওয়ায় শেয়ারটি সূচক কমিয়েছে ২২ পয়েন্টেরও বেশি।
এর বাইরে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর কারণে প্রায় ১৩ পয়েন্ট, বেক্সিমকো ফার্মার কারণে ৯ পয়েন্ট, সামিট পাওয়ারের কারণে ৭পয়েন্ট, স্কয়ার ফার্মার দরপতনে ৬ পয়েন্ট হারায় ডিএসইএক্স সূচক। দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে সূচকটির পতন ছিল আরো ভয়াবহ। ওই সময় সূচকটি গতকালের তুলনায় ১৬৪ পয়েন্ট হারিয়ে ৬৮৪১ পয়েন্টে নেমেছিল। সূচক পতনের হার ছিল ২.৩৪ শতাংশ।
এর আগে চলতি অক্টোবরে রোববার পর্যন্ত ১৫ কার্যদিবসে সূচক হারিয়েছিল ৩২৩ পয়েন্ট। এর মধ্যে ১০ কার্যদিবসে সূচকটি হারিয়েছিল ৪৫৪ পয়েন্ট। বিপরীতে বাকি ৫ কার্যদিবসে বেড়েছিল ১৩১ পয়েন্ট।
বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত কিছুদিন ধরে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি শ্রেণীর বড় বিনিয়োগকারীরা যতটা শেয়ার কিনছেন তার থেকে শেয়ার বিক্রি করছেন বেশি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের বিক্রি অনেক শেয়ারের দর পতনকে উস্কে দিয়েছে বলে জানায় ওই সূত্র। সক্রিয় বাজার কারসাজি চক্রগুলোও একই কাজ করছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির কারণ হিসেবে একটি বেসরকারি কোম্পানির বন্ডে বিনিয়োগের অযুহাত দিচ্ছে।
বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, চলতি এ দরপতনের কারণ বিষয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা অন্ধকারে। নানাজন নানা মত দিচ্ছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত। ক্রমাগত দরপতন থাকায় আরো দরপতনের ভয়ে তারা শেয়ার বিক্রি করছেন। এতে দরপতন ত্বরান্নিত হচ্ছে।
তবে একটি অংশের ভাষ্য, সূচক টানা প্রায় দেড় হাজার পয়েন্ট বৃদ্ধির পর এখন কিছু সংশোধন হচ্ছে। এটাকে স্বাভাবিক প্রবণতা বলছেন তারা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অস্বাভাবিক হারে দরবৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির শেয়ারগুলো থেকে মুনাফা তুলে নিতে বিক্রির ধারাই বাজারকে নিম্নমুখী করেছে বলে তাদের মত। কারণ ওই সব শেয়ারের দরবৃদ্ধি পাওয়ায় বাজার মূলধন এবং মূল্য সূচকে সেগুলোর দরের ওঠানামা সূচকে বেশ প্রভাব রাখছে। সূচক দেখে সাধারণ বিনিয়েগকারীরা শেয়ার কেনাবেচা করে সংকট আরো ঘনীভূত হচ্ছে বলেও জানান তারা।
এ বিষয়ে শীর্ষ এক ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা জানান, গত বৃহস্পতিবার দিনের লেনদেনের শুরুতে গুটিকয় শেয়ারের দরে ভর করে সকাল লেনদেন শুরুর মাত্র ১১ মিনিটের মধ্যে ডিএসইএক্স সূচক ৭৬ পয়েন্ট বেড়েছিল। কিন্তু পরের ২৫ মিনিটে ১১১ পয়েন্ট হারানোর নেপথ্যেও গুটিকয় শেয়ারের দরপতনই কারণ ছিল। কিন্তু দুপুর ১টার পর বেক্সিমকো লিমিটেড ও বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ারদর বাড়লে সূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়। এতে অন্য অনেক শেয়ার কিছুটা দর ফিরে পায়। ওইদিন সূচকও ৫৫ পয়েন্ট বেড়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়েছিল।
রোববার লভ্যাংশ ঘোষণার পর বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারদও ২৮ পয়েন্ট বাড়লেও ডিএসইএক্স ৭০ পয়েন্ট হারিয়েছিল। আজ বেক্সিমকোর শেয়ারদর সংশোধন সূচকের পতন ত্বরান্নিত করায় বাজার পরিস্থিতি নাজুক হয়েছে বলেও মত বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস কর্মকর্তাদের।
লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ১১ অক্টোবর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সূচকে ধারাবাহিক পতন হয়েছে। এর মধ্যে গত ২১ অক্টোবর সাত কার্যদিবস পর সূচক উত্থানে ফিরে। তবে পরের কার্যদিবস ২৪ অক্টোবর আবারো বড় পতন হয় দেশের উভয় শেয়ার বাজারে। সোমবার বেলা সোয়া ১১টার আগেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০০ পয়েন্টের উপরে পতন হয়েছে। এতে সূচক ৬ হাজার পয়েন্টের কোটায় নেমে গেছে। আলোচ্য সূচক বেলা ১২.৩৬ টায় ১৬৪ পয়েন্ট পতন হয়েছে। এ সময় অন্যান্য সূচকেও পতন হয়েছে। পরবর্তী সময়ে পতন থেকে একাধিকবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে বাজার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পতনের মধ্য দিয়েই লেনদেন শেষ হয়েছে।
এদিকে, বাজারে বড় ধরনের পতনের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে নিরাপদে অবস্থান করার চেষ্টা করে। বাজারে ব্যাপক পতন হওয়ার কারণে বেলা ১২টা থেকে মতিঝিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পুরাতন ভবনের সামনে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা জড়ো হতে থাকে এবং বেলা দেড়টার দিকে তারা বিক্ষোভ করেছে। এ সময় বিক্ষোভকারী সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদেরকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে বাজারে পতন রোধে দায়িত্বশীলদের প্রতি আহ্বান জানান।
কালের আলো/এসবি/এমএম