৩৮ বছর আগের আবেগময় স্মৃতিতে সেনাপ্রধান,ধমনীতে বহমান ইস্ট বেঙ্গল’র রক্ত

প্রকাশিতঃ 11:46 pm | November 03, 2021

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো :

‘সেই-যে আমার নানা রঙের দিনগুলি’-রবিঠাকুরের এই গানটিই সম্ভবত তাঁর কন্ঠে গুঞ্জরিত হচ্ছিল। আবেগ আর অকৃত্রিম ভালোবাসার পানসিতে চড়ে ফিরলেন ৩৮ বছর আগের স্মৃতিতে। সুখমাখা সেই স্বর্ণালী স্মৃতি আজও যেন জ্বলজ্বল। সময়ের অবিশ্রান্ত ধারায়, যাপিত জীবনের ব্যস্ততার ঘূর্ণিপাকের ভেতরেও নিজের বক্তব্যের শুরুতেই গভীর সেই অনুভবকেই মোটা দাগে নিজের জবানীতে উপস্থাপন করলেন সেনাপ্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

আরও পড়ুনঃ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ‘১৬তম কর্নেল অব দি রেজিমেন্ট’ হলেন সেনাপ্রধান

অবারিত আনন্দের ফল্গুধারায় উচ্ছ্বসিত কন্ঠেই উচ্চারণ করলেন-‘আজ থেকে ৩৮ বছর আগে, আমি সেনাবাহিনীর এই রেজিমেন্টে একজন গর্বিত সৈনিক হিসেবে জন্ম লাভ করি। আজকে আপনাদের ‘কর্নেল অব দি রেজিমেন্ট’ হওয়ার দূর্লভ সুযোগ পেলাম, যা আমার জন্য অত্যন্ত সম্মান ও সৌভাগ্যের বিষয়। আর তাই আমি আজ অত্যন্ত আনন্দিত ও বিমোহিত।’

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মূল চালিকাশক্তি এবং প্রাচীনতম, ঐতিহ্যবাহী ও গৌরবময় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১৬তম কর্নেল কমান্ড্যান্ট হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার পর বুধবার (০৩ নভেম্বর) চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের শহীদ এম আর চৌধুরী প্যারেড গ্রাউন্ডে এমনটিই বলছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

নজরকাড়া এই অভিষেক অনুষ্ঠানে নিজের সৈনিক জীবনের প্রারম্ভিক অনন্য মুহুর্তের কথা বলতে গিয়ে এমনই বর্ণিল এক মায়াজালেই নিজেকে যেন আচ্ছন্ন করলেন এই চারতারকা জেনারেল।

স্মৃতির পথ ধরেই খানিক সময়ের জন্য নিজেকে সমর্পণ করলেন হারানো সেই সময়ের সীমারেখায়। বাস্তবতার স্পর্শে অন্তরের গভীরে লুকিয়ে থাকা সেকালকে বেঁধে দিলেন একালের সঙ্গে; এক অসাধারণ মায়ার মিতালীতে।

বলতে থাকলেন- ‘আজকের অভিষেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আরো গভীরভাবে আমি এই রেজিমেন্টের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারলাম। আমার সেনাবাহিনীর চাকুরি জীবন শুরু হয় এই ঐতিহ্যবাহী রেজিমেন্টে, তাই ইস্ট বেঙ্গল এর রক্ত আমার ধমনীতে বহমান।

চাকুরী জীবনে আমি সর্বদাই আমার পল্টন, ব্রিগেড ও ডিভিশনের উন্নয়ন ও উন্নতির জন্য কাজ করে গিয়েছি।

আর এখন কর্নেল কমান্ড্যান্ট হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ায় আমার সার্বক্ষণিক ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা হবে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর সকল সদস্যকে নিয়ে রেজিমেন্টের উন্নয়ন ও নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য নিজেদেরকে   প্রস্তুত করা।’

বঙ্গবন্ধু ও ৩০ লক্ষ শহীদদের স্মরণ; প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহেই সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন
নিজের বক্তব্যের পরতে পরতে সেনাপ্রধান স্মরণ করলেন বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের অবিস্মরণীয় মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এবং মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী ৩০ লক্ষ শহীদদের।

গর্বভরে উচ্চারণ করলেন, আত্মোৎসর্গকারী সেই শহীদদের মধ্যে গৌরবময় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১২ হাজার ৮৩৩ জন সদস্যদের। যার মধ্যে  দু’জন বীরশ্রেষ্ঠসহ ২৩১ জন খেতাবপ্রাপ্ত শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন।

কৃতজ্ঞচিত্তে উপস্থাপন করলেন সতের কোটি বাঙালির আশার বাতিঘর, বিশ্বনেতা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। সরকারপ্রধানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত আগ্রহ এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তথা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অভূতপূর্ব আধুনিকায়ন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।’

স্মৃতির বাতায়নে বসে মুহুর্তেই ফিরে যান ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ঐশ্বর্যময় ৭৪ বছরের পথচলার ইতিহাসে। আবির মাখা সোনালী সময়ের স্বপ্নসারথীদের হৃদমাঝে তুলে এনে বলেন, ‘অভিষেক প্যারেডের মাধ্যমে আমাকে কর্নেল কমান্ড্যান্ট হিসেবে বরণ করার এই তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্তে আমি গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট’র প্রতিষ্ঠাতা মেজর এম এ গণি এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীকে।

আমি আরও স্মরণ করছি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ভূতপূর্ব সকল কর্নেল কমান্ড্যান্ট ও পাপা টাইগার্সসহ সকল প্রাক্তন সদস্যদের, যাদের দূরদর্শিতা, নিরলস পরিশ্রম ও অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এই রেজিমেন্ট আজ সুদৃঢ় ভিত্তির উপর অধিষ্ঠিত হয়েছে।’

‘এই রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠার ৭৪ বছরে কঠোর পরিশ্রম, সময়োপযোগী পরিকল্পনা এবং দেশপ্রেমের দৃঢ় অঙ্গীকারের মাধ্যমে আজকের এই মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে আসীন হয়েছে। সৌম্য, শক্তি, ক্ষিপ্রতা এই মূলমন্ত্রে দীক্ষিত এই রেজিমেন্ট উৎকর্ষতার স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৭৯ সালে ‘জাতীয় পতাকা’ লাভের দুর্লভ সম্মান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে’ যোগ করেন জেনারেল শফিউদ্দিন।

গড়তে চান উদ্যমী পদাতিক বাহিনী
সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পদাতিক রেজিমেন্ট আমাদের সেনাবাহিনীর মূল চালিকা শক্তি। সেনাবাহিনীর ইতিহাস যত সুদীর্ঘ, এই রেজিমেন্টের ইতিহাসও ততো পুরনো। যে কোন সেনাবাহিনীতে পদাতিক রেজিমেন্টই যুদ্ধের মূল বিজয় অর্জনকারী। আর তাই এই রেজিমেন্টের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের সাথে সেনাবাহিনীর উন্নয়নও সরাসরিভাবে সম্পৃক্ত।

তাই কর্ণেল অব দি রেজিমেন্ট হিসেবে আমার সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা থাকবে পদাতিক রেজিমেন্টের চলমান আধুনিকায়ন ব্যবস্থাকে আরো বেগবান করা এবং নতুন সামরিক সরঞ্জাম সংযোজিত করে আরো উদ্যমী পদাতিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা।

আমার উপর অর্পিত এই পবিত্র দায়িত্ব পালনকালে রেজিমেন্টের জন্য কল্যাণকর যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণে আমি সর্বদা সচেষ্ট থাকবো। সেজন্য রেজিমেন্টের অগ্রযাত্রাকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’

কালের আলো/জিকেএম/এমএএএমকে