পরিবহন ধর্মঘটে ভোগান্তি চরমে
প্রকাশিতঃ 11:06 am | October 28, 2018
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে বাস শূন্য হয়ে পড়েছে পুরো রাজধানী। আজ রোববার সকাল থেকে নগরীর কোনো সড়কে পাবলিক পরিবহনের দেখা মিলছে না। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন অফিসগামীসহ সাধারণ মানুষ।
বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ আট দফা দাবিতে সারাদেশে আজ রোববার সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার ‘কর্মবিরতি’ পালনের ডাক দিয়েছে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। তাদের প্রধান দুই দাবি, সড়ক দুর্ঘটনার মৃত্যুর সাজা কমানো ও সড়ক আইনের মামলা জামিনযোগ্য করা। এই কর্মবিরতির ফলে মূলত সারাদেশে বাস ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহন খাতেও ধর্মঘট পালিত হচ্ছে।
দাবির সপক্ষে গতকাল শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করে সংগঠনটি। সমাবেশ থেকে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এরপর ফেডারেশনের সভাপতি ওয়াজউদ্দিন খান ও সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে একই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
রাজধানীর রামপুরা এলাকার মুসলিম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার পরীক্ষা রয়েছে। খিলগাঁও যেতে হবে। সকালেই বাসা থেকে বের হয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বাস পাচ্ছি না। দূরের রাস্তা হওয়ায় রিকশাও যেতে চাচ্ছে না।’
অফিসগামী তোফায়েল বলেন, ‘বাস শ্রমিকরা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন সেটা অযৌক্তিক। কেননা তাদের দাবি দাওয়া থাকতে পারে এ বিষয়ে তারা সরকারের সঙ্গে বসে আলোচনা করতে পারে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে হয়রানির করার কোনো মানে হয় না। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক দাঁড়িয়ে থেকেও অফিসে যাওয়ার মতো বাস পাচ্ছি না।’
এ সময় তিনি পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের প্রতি ক্ষোভপ্রকাশ করেন তিনি।
শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা জানিয়েছেন, ‘ধর্মঘট ডেকে সরকারের সঙ্গেও বিরোধে যেতে চান না তারা। ভোটের সময় পরিবহন শ্রমিকদের পাশে পেতে কর্মবিরতির মতো নমনীয় কর্মসূচিতেই সরকার তাদের দাবি মেনে নেবে বলে মনে করছেন নেতারা। আট দফা দাবিতে গত ৬ অক্টোবর গুলিস্তানে সমাবেশ করেন শাজাহান খানপন্থি নেতারা। দাবি পূরণে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।
ফেডারেশনের সহসভাপতি সাদিকুর রহমান হিরু জানান, ‘ধর্মঘট নয় ‘কর্মবিরতি’ পালন করবেন পরিবহন শ্রমিকরা। তিনি দাবি করেন, গাড়ি বন্ধ রাখতে কাউকে জোর করা হবে না। বাস, ট্রাক, অটোরিকশাসহ সব ধরনের যানবাহন সারাদেশে বন্ধ রাখবেন শ্রমিকরা।’
শ্রমিকদের ৮ দফা দাবিগুলো হলো- সড়ক দুর্ঘটনায় সব মামলা জামিনযোগ্য করতে হবে। শ্রমিকদের অর্থদণ্ড ৫ লাখ টাকা প্রত্যাহার। সড়ক দুর্ঘটনার তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা ৫ম শ্রেণি করতে হবে। ওয়েস্কেলে জরিমানা কমানো ও শাস্তি বাতিল। সড়কে পুলিশি হয়রানি বন্ধ। গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের সময় শ্রমিকের নিয়োগপত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরের ব্যবস্থা রাখতে হবে ও সব জেলায় শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের পর লাইসেন্স ইস্যু এবং লাইসেন্স ইস্যুর সময় হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ ৭ দফা দাবিতে পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ধর্মঘট শুরু হয়েছিলো। সে সময় (৯ অক্টোবর) বিকাল ৪টায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছিলো ট্রাক পরিবহন শ্রমিকরা।
কালের আলো/এনএম