বিজিবি ডিজির উদারতায় ‘সাড়া’ সোশ্যাল মিডিয়ায়, চাঙ্গা জওয়ানরাও!

প্রকাশিতঃ 5:50 am | December 02, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো :

কেউ বলছেন উদার মনের মানুষ। অনেকেই তার সহানুভূতি প্রদর্শনের ভূমিকাকেই দেখছেন বড় করেই। কারো চোখে আবার ভালো মনের মানুষের উজ্জ্বল এক প্রতিচ্ছবি। তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম। তার বিষয়েই এসব মন্তব্য বা ভাষ্য খোদ সোশ্যাল মিডিয়ার নেটিজেনদের।

ইউপি নির্বাচনের সহিংসতায় প্রাণ হারানো বিজিবি সদস্য রুবেল মন্ডলের বাড়িতে বিজিবি ডিজির উপস্থিতিকে ঘিরেই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে এমন ইতিবাচক মন্তব্যই এখন উচ্চারিত হচ্ছে। ঘুরপাক খাচ্ছে ওয়ালে ওয়ালে।

শোকার্ত হৃদয় নিয়ে চারদিনের মাথায় স্বশরীরে নিহত সদস্য রুবেল মণ্ডলের গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বাইগুনি গ্রামের বাড়িতে বুধবার (০১ ডিসেম্বর) মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম উপস্থিত হয়ে স্থাপন করেছেন নতুন এক দৃষ্টান্ত।

গভীর মমত্ববোধে বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন নির্বাক কৃষক বাবা নজরুল ইসলামকে। দিয়েছেন সান্ত্বনা এবং আর্থিক সহায়তা। জিয়ারত করেন কবরও।

শোকাভিভূত হৃদয়ে কথা বলেছেন মা রুলি বেগম, স্ত্রী জেসমিন বেগম এবং দু’ সন্তান রাফিহুর রহমান ও রাফিয়া আকতার রিয়ার সঙ্গে

রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে আত্নত্যাগকারী রুবেলের অকাল প্রস্থানে শোকস্তব্ধ, মর্মাহত বিজিবি পরিবার। এই পরিবারের প্রধানের উপস্থিতিতেই বাইগুনি গ্রামের বুধবারের (০১ ডিসেম্বর) দুপুর হয়ে উঠেছিল কান্না, বেদনা আর বিষন্নতার এক উপকথা।

সর্বগ্রাসী শূণ্যতার ভেতরেও পরিবার তো বটেই, গ্রামের শোকাতুর বাসিন্দাদের মানসিক স্বস্তি ও শক্তি জুগিয়েছে ডিজি মেজর জেনারেল শাফিনুল ইসলামের মানবিক ও সজ্জন এমন মানসিকতা। নিজেও অঙ্গীকার করেছেন আপদে-বিপদে, দু:খ-সুখে রুবেলের পরিবারের পাশে থাকার।

নিহত রুবেলের পরিবারের সদস্যদের সামনে দাঁড়িয়ে বিনয়াবনত হয়েই নিজেকে একজন ‘বিজিবি সদস্য’ হিসেবেই তুলে ধরেছেন ডিজি সাফিনুল। বলেছেন, ‘আমি বাহিনী প্রধান হয়েও নায়েক রুবেলের মতো আমিও একজন বিজিবি সদস্য।

রুবেলের মৃত্যুতে পুরো বিজিবি শোকাহত ও মর্মাহত। ইউনিফর্মে কর্তব্যরত অবস্থায় মারা যাওয়া যেকোনো সৈনিকের জন্য গর্বের বিষয়।

এমন সৌভাগ্য সবার হয় না। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার সৈনিক নিহত হয়েছে, তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সবার কর্তব্য। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি বিজিবি রুবেলের পরিবারের পাশে সব সময় থাকবে’-যোগ করেন তিনি।

এই সফর শেষে নীলফামারীতে দরবার করেন ডিজি। এ সময় মনোবল না হারিয়ে নিজের সহকর্মীদের দায়িত্ব পালনে আরও সতর্ক হওয়ার মন্ত্রও গেঁথে দেন। এতে করে চাঙ্গা মেজাজে ফিরেছেন ত্রিমাত্রিক বাহিনীটির সব সদস্যরা।

এর আগে গত ২৮ নভেম্বর নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দিন দায়িত্ব পালনের সময় সহিংসতায় রুবেল মণ্ডল নিহত হন। তিনি নীলফামারী ৫৬ বিজিবির ল্যান্স নায়েক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে বিজিবিতে যোগ দেন।

বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাফিনুল ইসলাম গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সফরকালে আরও বলেন, ‘বিজিবির চাকরি করা মানে একটা দেশসেবা। দেশের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের শপথ নিয়েই আমরা বাহিনীতে যোগ দিয়েছি।

নায়েক রুবেল তার জীবন দিয়ে তার অনবদ্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। দেশের জন্য নায়েক রুবেলের এই আত্মত্যাগ বিজিবি’র জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

নায়েক রুবেলের মৃত্যুর শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে বিজিবি সদস্যরা তাদের ওপর অর্পিত যেকোনো দায়িত্ব আরও দৃঢ়তার সাথে পালন করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন ডিজি।

কালের আলো/জিকেএম/এমকে