গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল স্থানে বোমা হামলার পরিকল্পনা করছিল জঙ্গিরা

প্রকাশিতঃ 9:31 pm | December 04, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে একটি খেলনা প্রস্তুতকারক কম্পানিতে কোয়ালিটি চেকারের চাকরি নেন আহিদুল ইসলাম আহিদ ওরফে পলাশ। ২০১৫ সালে জেএমবিতে যোগ দেন। চাকরির আড়ালে চলতে থাকে তার দাওয়াতি কার্যক্রম। এক পর্যায়ে আঞ্চলিক নেতা হতে বায়াত গ্রহণ করেন। পরে জেএমবি‘র রংপুর অঞ্চলের সামরিক শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।

তার মাধ্যমেই রংপুর অঞ্চলে জেএমবি’র সামরিক শাখার কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে আসছিল। আহিদুল তার সামরিক শাখার সদস্যদের সহযোগিতায় আইইডি তৈরি, আইইডি তৈরির প্রশিক্ষণ ও নাশকতামূলক হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল। জেলখানায় অন্তরীন থাকা শীর্ষ জঙ্গিদের আদালতের নিয়ে যাওয়া-আসার পথে হামলার মাধ্যমে মুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

নীলফামারীতে গ্রেফতারকৃত পাঁচ জঙ্গি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

শনিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে র‌্যাব-১৩ এর রংপুর সদর দপ্তরে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব তথ্য জানান।

আটক হওয়া ব্যক্তিরা হলো- সদর উপজেলার উত্তর মুশরত কুখাপাড়া গ্রামের মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে আহিদুল ইসলাম আহিদ ওরফে পলাশ (২৬), তার ভাই জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ওরফে জোবায়ের (২৭), একই উপজেলার পশ্চিম কুচিয়ামোড় পাঠানপাড়া গ্রামের ওয়াজ্জুউদ্দীন মাসুদের ছেলে ওয়াহেদ আলী ওরফে আব্দুর রহমান (৩০), দক্ষিণ বালাপাড়ার তছলিম উদ্দিনের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে ডা. সুজা (২৬) এবং সোনারায় কাচারীপাড়ার মৃত রজব আলীর ছেলে নূর আমিন ওরফে সবুজ (২৮)।

এদের মধ্যে আহিদ নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির রংপুর অঞ্চলের সামরিক শাখার প্রধান। অভিযানের সময় উদ্ধার হওয়া একটি শক্তিশালী বোমা নিষ্ক্রিয় করেছে র‍্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অভিযানে বোমা তৈরির সরঞ্জাম, বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্য, একটি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়েছে। আটক হওয়া জঙ্গিরা সামরিক শাখার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আইইডি তৈরি, আইইডি তৈরি করার প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন এবং নাশকতামূলক হামলার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। দুই-তিন মাস পূর্বে আহিদের বাড়িতে আইইডি বোমা তৈরির সময় গভীর রাতে বোমা বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জঙ্গিরা অনলাইনে রংপুর অঞ্চলের আমিরের নির্দেশনায় বেশ কয়েক দিন যাবত আইইডি তৈরি করে তাদের সহযোগী মাঝাপাড়া গ্রামের শরীফুল ইসলামের বাড়িতে রাখে। বোমা তৈরির পাশাপাশি তারা সাংগঠনিক কার্যক্রমে রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রায় ২০-২৫ জনকে জঙ্গি সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাব জানতে পেরেছে, জঙ্গি আহিদ দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে একটি খেলনা প্রস্তুতকারক কোম্পানির কোয়ালিটি চেকার পদে চাকরি করে। ২০১৫ সালে জেএমবিতে যোগ দিয়ে রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক নেতার কাছ থেকে বায়াত (শপথ) গ্রহণ করে। আহিদ রংপুর অঞ্চলে জেএমবির সামরিক শাখার কার্যক্রম পরিচালনা করত। অপর জঙ্গি সদস্যরাও বিভিন্ন পেশার আড়ালে জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা জঙ্গি আহিদের মাধ্যমে ২-৩ বছর আগে জেএমবির কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, র‍্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ২ হাজার ৬৫৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। যাদের মধ্যে ১ হাজার ৩৮৯ জন নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্য। র‍্যাবের অভিযানে জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, আব্দুর রহমানের ভাই, আতাউর রহমান সানি, জামাতা আবদুল আউয়ালসহ বেশ কয়েকজন জঙ্গি নেতা গ্রেফতার হন। ২০০৭ সালে তাদের ফাঁসি কার্যকর হয়। এছাড়া হলি আর্টিসান ঘটনার পর র‍্যাবের তৎপরতায় আরও ১ হাজার ৪৯৬ জঙ্গি সদস্য গ্রেফতার হয়। যার মধ্যে ৮১৬ জন জেএমবির সদস্য।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান, র‍্যাব-১৩ এর অধিনায়ক কমান্ডার রেজা আহমেদ ফেরদৌসসহ ব্যাটালিয়নের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/ডিএসবি/এমএম