অনুগত-সহমর্মী হওয়ার নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর, সর্বোচ্চ ত্যাগের বার্তা সেনাপ্রধানের

প্রকাশিতঃ 8:52 pm | December 12, 2021

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো :

দেশের সতের কোটি মানুষের বিশ্বাস ও ভরসার প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জলপাই রাঙা ক্যাপ তাঁর মাথায়। নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে নির্ধারিত সময়েই ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমেই গ্রহণ করলেন প্যারেড অভিবাদন। এরপর উর্ধ্বতন নেতৃত্বের আদেশ, কর্তব্য পরায়ণতা ও দায়িত্ববোধ বজায় রাখার শপথ নিলেন নবীন সামরিক কর্মকর্তারা।

এই সময় স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলো ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নবীন সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে পেশাগতভাবে দক্ষ, নৈতিক গুণাবলি সম্পন্ন এবং দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গড়ে উঠার আহ্বানের কথা। ইতিহাসের মহান নেতার সেই আদেশ এখন গ্রোথিত-প্রোথিত নবীন সামরিক কর্মকর্তাদের হৃদয়ে।

সহজ, সাবলীল ও স্বাভাবিকভাবেই দূরদৃষ্টির পরিচয়বহ, নির্মোহ বস্তুনিষ্ঠ এবং দিক নির্দেশনামূলক দীর্ঘ এক বক্তব্য উপস্থাপন করলেন বাঙালির আশার বাতিঘর, হ্যাট্টিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাঙালি জাতির চির আরাধ্য পুরুষের প্রাজ্ঞ, কালজয়ী ও দূর দৃষ্টিসম্পন্ন দিক নির্দেশনায় অনুপ্রাণিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব এবং কর্মদক্ষতার সঙ্গে দেশের সীমানা ছাপিয়ে বিশ্বপরিমন্ডলে অবদানের কথাও উচ্চারণ করলেন অমিত দৃঢ়তায়।

এসব ঘটনাপ্রবাহ রবিবার (১২ ডিসেম্বর) চলতি বছরের চট্টগ্রামে রাষ্ট্রপতি প্যারেড’র। নিজের বক্তব্যে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের নবতর চেতনায় কোটি কোটি মানুষের হৃদয়কেই যেন প্লাবিত করলেন প্রধানমন্ত্রী। নিজের সুমিত ভাষায় জ্ঞানোদ্দীপক এই বক্তব্যে কালের বিবর্তনে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় শক্তিশালী ও সক্ষম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কথা যেমন উচ্চারণ করেছেন তেমনি বীর সেনাদের সৎ ও মঙ্গলময় জীবনেরও প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন।

সেনাবাহিনীকে দেশপ্রেম ও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করার আহ্বানও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন দেশ মাতৃকার সেবাই সব থেকে গৌরবের। বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্খার মূর্ত প্রতীক বঙ্গবন্ধুকন্যার অমূল্য-অনন্য এই ভাষণ আক্ষরিক অর্থেই তাৎপর্যপূর্ণ এবং অনুপ্রেরণা সঞ্চারী।

স্বত:স্ফূর্তভাবেই নিজের মনের কথাই তিনি বলেছেন সেনাবাহিনী তথা দেশবাসীর উদ্দেশ্যে। আর হবেই বা না কেন? সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর পরিবারের সম্পর্ক নিবিড়, অবিচ্ছেদ্য।

সেনাবাহিনীর সঙ্গে নিজের পারিবারিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশিক্ষণ সমাপ্তির এই মহতী লগ্নে আমি স্মরণ করছি আমার ভাই শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালকে। সিনিয়র টাইগার তথা প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন গর্বিত অফিসার হিসেবে সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে।

আমার আরেক ভাই শহীদ লেফট্যানেন্ট শেখ জামাল ব্রিটিশ রয়্যাল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্স্ট থেকে কমিশন লাভ করে সেনাবাহিনীর জুনিয়র টাইগার তথা দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দিয়েছিল। ১০ বছরের শেখ রাসেলও বড় হয়ে আর্মি অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখত। সেদিক থেকে আমিও সেনাপরিবারের একজন গর্বিত সদস্য।’

নিজের ছোট ভাইদের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ততার সারি সারি চিত্রপট উপস্থাপনে ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার হৃদয়। মুহুর্তেই বেদনায় ভারী হয়ে উঠে গণভবন থেকে অনুষ্ঠানস্থল চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিস্থ বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডের পরিবেশ।

অশ্রুতে ছলছল করে উঠে এই মাঠেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদসহ উপস্থিত সবার চোখ। কিন্তু সতের কোটির বাংলাদেশই তাঁর প্রাণশক্তি। দেশের মানুষের প্রতি তাঁর অগাধ আস্থা এবং বিশ্বাস। ফলে মানসিকভাবেই আবার নিজের ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তার কথাই জানান দেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। আশাবাদী উচ্চারণের মধ্যে দিয়ে সেনাবাহিনীকে নিয়ে নিজের স্বপ্ন-আকাঙ্খার কথাও জানান দেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা তার দূরদর্শী চিন্তার মাধ্যমে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের উপযোগী উন্নত ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনীর অপরিসীম গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন। এই কারণেই একটি প্রশিক্ষিত, শক্তিশালী ও দক্ষ সেনাবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কুমিল্লা সেনানিবাসে ‘বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি’ এর শুভ উদ্বোধন করেন; যা ছিল বাংলাদেশের জন্য এক ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ।’

নবীন অফিসারদের শপথ গ্রহণ, অকৃত্রিম বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যের অঙ্গীকার
নবীন কর্মকর্তাদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রথম বাংলাদেশ ব্যাটালিয়নের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার কর্নেল সৈয়দ আশিকুর রহমান। শপথটি ছিল এমন- ‘আমি সর্বশক্তিমান আল্লাহ’র নামে সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ করিতেছি যে, আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের সংবিধান এবং রাষ্ট্রপতির প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বস্ততা ও আনুগত্য পোষণ করিবো।

আমি আমার অপরিহার্য কর্তব্য মনে করিয়া, আমার ওপর ন্যস্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্তব্য আমি সততা ও বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিবো। এবং আমার প্রতি জল, স্থল ও আকাশ পথে যেখানেই যাইবার আদেশ করিয়া হইবে, সেখানেই যাইবো। আমি আমার জীবন বিপন্ন করিয়াও আমার ওপর নিয়োজিত কর্তব্যরত যে কোন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সকল আদেশ পালন এবং মান্য করিবো।’

দেশমাতৃকার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের এই শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়েই নবীন ক্যাডেটদের হাতে দায়িত্ব পড়ল, তোমরা দেশমাতৃকার মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে। এ দায়িত্ব পালনে সব সময় সজাগ থাকতে হবে, প্রস্তুত থাকতে হবে। সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাই হবে একমাত্র পেশাগত ব্রত।

তিনি বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। সেদিন বঙ্গবন্ধু নবীন সামরিক অফিসারদের পেশাগতভাবে দক্ষ, নৈতিক গুণাবলি সম্পন্ন এবং দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গড়ে উঠার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

সেনাবাহিনীর আধুনিক পথচলায় বঙ্গবন্ধু কন্যার যতো পদক্ষেপ
সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭৪ সালেই প্রণয়ন করেন আমাদের ‘প্রতিরক্ষা নীতি’। আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতা প্রণীত সুদূর প্রসারী প্রতিরক্ষা নীতির আলোকেই সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’প্রণয়ন করেছে। আমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নতুন নতুন পদাতিক ডিভিশন, ব্রিগেড, ইউনিট ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সার্বিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছি। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীতে ৩টি নতুন পদাতিক ডিভিশন ও প্রথম প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে অত্যাধুনিক সাঁজোয়া যান এবং গোলন্দাজ কোরে মাঝারি ও দূরপাল্লার এমএলআরএস রেজিমেন্ট। আকাশ বিধ্বংসী স্বয়ংক্রিয় সোরাড, ভিসোরাড ও সর্বাধুনিক অরলিকন মিসাইল রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আকাশ প্রতিরক্ষায় সূচিত হয়েছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। অত্যাধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও সিগন্যাল সরঞ্জামাদি ছাড়াও বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, হেলিকপ্টার, বিমান, মডার্ন ইনফ্যান্ট্রি গেজেট এবং আরও নানাবিধ অস্ত্র-সরঞ্জামাদি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সংযুক্ত হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এসকল অস্ত্র-সরঞ্জামাদির জন্য প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো সম্প্রসারণ ও বিপুল সংখ্যক নতুন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও আরও নানাবিধ অস্ত্র-সরঞ্জামাদি ও ভৌত কাঠামোর সংযোজন ও সম্প্রসারণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আজকের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যুদ্ধ সক্ষমতা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত, স্বয়ংসম্পূর্ণ, চৌকস এবং পেশাগতভাবে দক্ষ।’

সেনাবাহিনীতে বিভিন্ন নারীদের নিয়োগ ও পদোন্নতি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সরকার নারীর ক্ষমতায়ন এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও নারীর অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন নারীদের নিয়োগ ও পদোন্নতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারই ২০০০ সালে সর্বপ্রথম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে নারী অফিসার নিয়োগ এবং ২০১৩ সালে সর্বপ্রথম নারী সৈনিক ভর্তির যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

নেতৃত্ব ও যোগ্যতার ধারাবাহিকতায় আর্মি মেডিক্যাল কোরের একজন নারী অফিসারকে ‘মেজর জেনারেল’ পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি কোর্সের নারী কর্মকর্তাদেরও ‘লেফটেন্যান্ট কর্নেল’ পদে পদোন্নতি প্রদান, কমান্ডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব প্রদান এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়াও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তিন জন নারী অফিসার ‘কন্টিনজেন্ট কমান্ডার’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছেন।

বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি হবে অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন
বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিকে একটি অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একাডেমিতে পরিণত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা। তিনি বলেন, ‘এখানে ক্যাডেটদের অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণের সকল প্রকার অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’ নির্মাণ করা হয়েছে।’

নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
নবীন সেনা কর্মকর্তাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তোমাদের মনে রাখতে হবে, তোমরা এদেশের সন্তান; জনগণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই তোমাদের সকলকেই সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্নার সমান অংশীদার হতে হবে।

যে কোনও দুর্যোগ ও দুঃসময়ে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। তোমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি অনুগত এবং অধীনস্থদের প্রতি সহমর্মী হতে হবে। মনে রাখবে, অনেক রক্ত আর ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের এই স্বাধীনতা। কষ্টার্জিত এই স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করা তোমাদের পবিত্র দায়িত্ব।’

জাতির পিতার স্বপ্নপূরণের অঙ্গীকার
দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ। এই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ, ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব। জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা পূরণ করব।’

সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নতুন নতুন পদাতিক ডিভিশন, ব্রিগেড, ইউনিট ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সার্বিক উন্নয়নের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও গ্রহণ করেছি।’ আধুনিক সব সরঞ্জাম সেনাবাহিনীতে সংযোজন করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান।

সোনার বাংলা গড়তে সর্বোচ্চ ত্যাগের বার্তা সেনাপ্রধানের
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই বছরের রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ আমাদের কাছে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এ বছর আমরা একসঙ্গে উদযাপন করছি আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। এমন একটা শুভ সময়ে যারা কমিশন লাভ করল তারা সত্যি খুব ভাগ্যবান।

আপনি (প্রধানমন্ত্রী) শত কর্ম ব্যস্ততার মাঝেও আজকের প্যারেডের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তাদের মনোবল অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাদের আনন্দের শতভাগ পূর্ণতা দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত আপনার মূল্যবান দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য আজকের নবীন অফিসারদের দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ ও স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করবে। সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

‘আমি আরও দৃঢ়ভাবে বলতে চাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য সোনার বাংলা গড়ার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে সদা প্রস্তুত থাকবে। আমি আজকের প্যারেডে আপনার সদয় উপস্থিতি এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উন্নয়নে আপনার নিরলস ভূমিকা রাখার জন্য সেনাবাহিনীর সবার পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। পরিবেশে আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। বাংলাদেশ চিরজীবী হউক’- যোগ করেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

কমিশন পেলেন ১০৩ ক্যাডেট, পুরস্কার বিতরণ করলেন সেনাপ্রধান
বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির (বিএমএ) ৮১তম দীর্ঘমেয়াদী কোর্সের অফিসার ক্যাডেটদের কমিশনপ্রাপ্তি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ কৃতি ক্যাডেটদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।

এই কুচকাওয়াজের মাধ্যমে ৯৫ জন বাংলাদেশি, ৭ জন ফিলিস্তিনি এবং ১ জন শ্রীলংকান ক্যাডেটসহ সর্বমোট ১০৩ জন ক্যাডেট কমিশন লাভ করেছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের মধ্যে ৮৮ জন পুরুষ ও ৭ জন মহিলা ক্যাডেট রয়েছেন।

ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার আবদুল্লাহ আল ইসলাম ৮১তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদী কোর্সে সেরা চৌকস ক্যাডেট বিবেচিত হন এবং গৌরবমণ্ডিত ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন। কোম্পানি জুনিয়র আন্ডার অফিসার ইমরুল কায়েস সামরিক বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ‘সেনাবাহিনী প্রধান স্বর্ণপদক’ অর্জন করেন।

প্যারেডে ক্যাডেটরা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার লক্ষ্যে শপথ গ্রহণ করেন এবং প্যারেড শেষে তাদের মাতা-পিতা ও অভিভাবকরা নবীন অফিসারদের আনুষ্ঠানিকভাবে র‌্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন।

বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র মেক্সিকোর কমান্ডার অফ দ্যা মেক্সিকান আর্মি ইউফেমিও আলবার্তো ইবাররা ফ্লোরস, কয়েকটি বিদেশি দূতাবাসের কূটনীতিক, সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের পিতা-মাতা ও অভিভাবকরা উপস্থিত থেকে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন।

অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর চীফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, আর্মি ট্রেনিং এন্ড ডকট্রিন কমান্ডের (আর্টডক) জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম মতিউর রহমান, বিএমএ কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল কামরুল হাসানসহ উর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কালের আলো/জিকেএম/এমএএএমকে