২২ বছর পর র্যাবের জালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি
প্রকাশিতঃ 2:38 pm | December 15, 2021
নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলোঃ
ধারের দুই হাজার টাকা না পেয়ে শিশু সন্তানের সামনে মাকে হত্যার ২২ বছর পর অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তার নাম আদম খান রফিক।
গতকাল মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে ঢাকার অদূরে আশুলিয়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে এলিট ফোর্সটি। হত্যাকাণ্ডের ওই ঘটনায় অভিযুক্ত আদম খানের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছিল হবিগঞ্জের একটি আদালত।
এর আগে নিজের পরিচয় গোপন করতে আদম খান জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করেন। এরপর তিনি অবস্থান করেন আশুলিয়া এলাকায়। সেখানে কখনও রাজমিস্ত্রি আবার কখনও ফল বিক্রি করতেন তিনি।
বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে মাত্র দুই হাজার টাকার জন্য তিন বছরের শিশু সন্তান তাজউদ্দিনের সামনে ছুরি দিয়ে বিধবা মা নুরচান বেগমকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের ৭-৮ মাস আগে ভিকটিমের স্বামীর মৃত্যু হয়। মায়ের হত্যার ঘটনায় চুনারুঘাট থানায় মামলা করেন নিহতের আরেক ছেলে শফিক। সে সময় এলাকাবাসী হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে।
খন্দকার আল মঈন আরও জানান, এ ঘটনার ৭/৮ মাস পূর্বে ভিকটিমের স্বামী মৃত্যুবরণ করেন। বিধবার মৃত্যুতে তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে পিতামাতা হারা হয়ে গেলে ভিকটিমের নিকটাত্মীয় (ফুপা) এবং এলাকাবাসীর আর্থিক সহায়তায় মামলাটি পরিচালনা করেন।
মামলাটির তদন্ত শেষে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে গত ১৭ জুলাই ২০০২ সালে আদালত আসামি আদম খান’কে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ প্রদান করেন।
এ ঘটনায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আদম খান রফিক দীর্ঘ ২২ বছর ধরে পলাতক ছিলেন। র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৯ এর একটি দল প্রযুক্তির মাধ্যমে তার অবস্থান শনাক্ত করে। পরবর্তীতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে আদম খান জানায়, হত্যাকাণ্ডের ১ বছর পূর্বে সে ভিকটিম নুরচান বেগমের ছেলে শফিকের থেকে ২০০০ টাকা ধার নেন।
এর চার পাঁচ মাস পর শফিকের পিতা অর্থাৎ ভিকটিম নুরচান বেগমের স্বামী আব্দুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর নুরচান বেগমের পরিবার আর্থিক অনটনের কারনে গত ৩১ মে ১৯৯৯ সালে পাওনা টাকা চাইলে আদম খান টাকা না দেয়ার তালবাহানা করে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও অপমান করে।
এ সময় ভিকটিম প্রতিবেশী আছমত উল্লাহর নিকট তার তিন বছরের কোলের শিশু তাজউদ্দিনকে নিয়ে ঘটনার বিচার চাইতে গেলে আদম খান পুনরায় আছমত উল্লাহর বসতঘরে এসে নুরচান বেগমকে গালিগালাজ এবং তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে তার হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে বুকের বাম পার্শ্বে আঘাত করে। এতে ভিকটিম নুরচান বেগম ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন বলে জানান র্যাব।
গ্রেফতারকৃত রফিক আরও জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর তাৎক্ষণিক গ্রাম থেকে পালিয়ে সিলেট শহরে কিছুদিন অবস্থান করে। নিজেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে গোপন রাখার জন্য ঢাকার আশুলিয়ায় চলে আসে।
২০১২ সালের মার্চ মাসে আদম খান মিথ্যা তথ্য দিয়ে একটি ভূয়া জন্ম সনদ তৈরি করে এনআইডি’র জন্য আবেদন করে, যেখানে তার স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে মাদবপুর, হবিগঞ্জ উল্লেখ করে। গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ২২ বছর সে তার গ্রামের বাড়ীতে যায়নি বলে জানান র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
কালের আলো/টিআরকে/এসআইএল