বিখ্যাত তারকাদের যুদ্ধ জয়ের গল্প
প্রকাশিতঃ 4:23 pm | January 23, 2018
বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:
নদীর স্রোতের মতোই বহমান জীবন। জীবনে চলার পথে হতাশা বা মানসিক চাপ থাকেই। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে জগতখ্যাত তারকারাও এ থেকে বাইরে নয়। তারাও নিজের মনের শক্তিতে জয় করেন অন্ধকার সময়কে। এমন কয়েকজন বিখ্যাত তারকাদের নিয়ে আমাদের এ আয়োজন। যেখানে থাকছে যুদ্ধজয়ের মতো তাদের ট্র্যাকে ফিরে আসার গল্প।
প্রেরণার নাম ধোনি
২০০২ সাল। ভারতের বর্তমান কাপ্তান মাহেন্দ্র সিং ধোনি তখনো জাতীয় দলে ডাক পাননি। ওই সময়টাতেই প্রিয়াঙ্কা নামের এক তরুণীর সঙ্গে মন দেয়া নেয়া ছিল তার। প্রেমের পাশাপাশি ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়েই কী অসাধারণ পারফরম্যান্সই না করে যাচ্ছিলেন তিনি।
হঠাৎ এক সড়ক দুর্ঘটনায় অকালেই হারিয়ে ফেলেন প্রিয়তমাকে। খেলার মাঠ থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নেন। সেই সময়টাতে একাকিত্বই ছিল তার বড় বন্ধু। ধোনির সেই জীবন কাহিনী নিয়ে বলিউডে নির্মিত হয়েছে জনপ্রিয় মুভি ‘মাহেন্দ্র সিং ধোনি দ্যা আনটোল্ড স্টোরি।’ জীবনের কঠিন দু:সময়ে নিজেকে নিজেই ট্র্যাকে ফিরিয়ে এনেছেন ধোনি। নিজের অমর ভালবাসাকে হারানোর দুই বছরের মাথায় আবার ঘুরেও দাঁড়িয়েছেন। পাদপ্রদীপের আলোয় নিজেকে আবার ফিরিয়ে আনেন ২০০৪ সালে। ওই সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার ডেব্যু হয়।
হার মানেনি ম্যাশ
ইনজুরির কবলে পড়ে বার বার তাকে খাবি খেতে হয়েছে। কিন্তু সেই ইনজুরি কাটিয়েই নিজের লক্ষ্যপূরণের পথে অবিরাম হেঁটে চলেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সম্পদ মাশরাফি বিন মর্তুজা। তারকা এ ক্রিকেটার ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নও বাদ দিয়েছেন একবার। কিন্তু দমে যাননি।
অস্ত্রোপচারকক্ষ থেকে ক্রিকেট মাঠ, আর মাঠ থেকে অপারেশন থিয়েটার, এমন করেই খেলে যাচ্ছেন ক্রিকেট। শুধু নিজের জন্য নিজের অনুপ্রেরণাই নন তিনি, দলের অন্য সব ক্রিকেটারের কাছে অপার প্রেরণার উৎস। নিজের মনোবল শক্ত করেই এগিয়ে যান তিনি।
দুশ্চিন্তায় তামাকে আসক্ত হয়েছিলেন ব্র্যাড পিট
যেকোনো ভিলেনকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন ব্র্যাড পিট। সেই ব্র্যাড পিটের জীবনের অনেকটা সময় কেটেছিল হতাশা আর একাকিত্বের দুশ্চিন্তায়। নব্বইয়ের দশকে তখন সবে সিনেমার দুনিয়ায় কাজ শুরু করেছেন পিট। কাজ না পাওয়ার হতাশা আর ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় নিজেকে নিয়ে কী করবেন তা ভেবে পাচ্ছিলেন না তিনি। সেই হতাশায় কাজের মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে পার করেছিলেন তিনি।
এরপরও নানা সময়ে তারকা হওয়ার পরও দুশ্চিন্তা ভর করেছে তাঁর ওপর। দুশ্চিন্তায় তামাকে আসক্তও হয়ে পড়েছেন অনেকবার। তাঁর ভাষ্যে, ‘হতাশায় নিজেকে নিজের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি অনেকবার। নিজের কাছ থেকে পালানোর চেষ্টা অনেক কঠিন একটি কাজ।’ ব্র্যাড পিট নিজের মধ্যে দুশ্চিন্তা ভর করলে পরিবার নিয়ে দূরে কোথায় ঘুরতে চলে যান। প্রকৃতি আর নীল জলের সমুদ্রে নিজেকে ছেড়ে দেন, দিন কয়েকের এমন বিরতিই নাকি ব্র্যাড পিটকে আবারও শক্তি যোগায়, কাজে টেনে আনে।
হতাশা নিয়েই বেড়ে উঠেন জোলি
আর সব কিশোরের মতোই বেশ হতাশা নিয়ে বেড়ে ওঠেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। ওয়ালস্ট্রিটজার্নালকে জানিয়েছেন, ‘আমি এমন একটি পরিবেশে বড় হয়েছিলাম, যার প্রভাবে আমি সেই ছোটবেলা থেকেই ধ্বংসাত্মক প্রকৃতির। আমি তখন কোনোভাবেই নিজেকে বুঝতে পারতাম না। অনেকটা সময়জুড়ে শুধু কেমন জানি শূন্যতা ছিল আমার জীবনে।’ সেই হতাশার সময়টায় কান্নাকাটি ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না জোলির। জোলির মা মারশেলিন বার্ট্রান্ডের বন্ধু সিস রান্ডাল এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ছোটবেলায় জোলির ক্ষুধাহীনতার জন্য কয়েকবার হাসপাতালে নিতে হয়েছিল।
‘তেরো বছর বয়সের জোলিকে অনেকবার নিজের শরীরে নিজেই আঘাতের জন্য (সেলফ হার্মিং) হাসাপাতালে যেতে হয়েছিল বলে জানান সিস। কৈশোরেই মডেলিংয়ে নিজেকে যুক্ত করে কাজের চাপে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা ছিল এই তারকার। হলিউড কাঁপানো এই তারকা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর কিংবা সেলেব্রেটি হওয়ার পরও হতাশাগ্রস্ত হয়েছেন। নিজের শরীরে ক্যানসার রোগের অস্তিত্ব ধরা পড়লেও বেশ মানসিক চাপ অনুভব করেছিলেন এই তারকা।
২০০৮ সালে মা মারা যাওয়ার খবর শুনে বেশ বড় ধাক্কা খেয়েছিলেন এই তারকা। জোলির ভাষ্য, ‘সময়টা তখন খুব অন্ধকার মনে হচ্ছিল। নিজের মনের ওপর কোনোই নিয়ন্ত্রণ ছিল না সেই সময়টায়।’ জোলি নিজের হতাশা কাটানোর জন্য চিকিৎসা যেমন নিয়েছেন, তেমনি যুক্ত হয়েছেন সামাজিক কিছু কাজে। ২০০১ সালে জাতিসংঘের হাইকমিশনার ফর রিফিউজির (ইউএনএইচআর) শুভেচ্ছা দূত হয়ে শরণার্থীদের জন্য কাজ শুরু করেন জোলি। সেই থেকে ইরাক থেকে শুরু করে তুরস্কের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে প্রতিবছর পাঁচ-ছয়বার সফর করছেন তিনি।
‘নিজের হতাশা কাটানোর জন্য আমি সরাসরি এ কাজে নিজেকে যুক্ত করেছি। ঘর থেকে না বের হলে হতাশা কাটানো অনেক কঠিন একটি কাজ।’ এমনটাই ভাবেন জোলি। ব্র্যাড পিটের সঙ্গে বিচ্ছেদও জোলির জীবনে বড় একটা ধাক্কা। সেই ধাক্কা কাটানোর জন্য সন্তানদের সঙ্গে আগের চেয়ে বেশি সময় কাটানো শুরু করেন জোলি।
কুকুরকে বন্ধু করেছিলেন মাইল
প্রেমে বিরহ আর হতাশায় মাঝেমধ্যেই এখনো ছন্নছাড়া হয়ে যান ডিজনির হ্যানা মন্টানা খ্যাত মাইলি সাইরাস। হতাশার মাত্রা এতটাই প্রবল তাঁর মধ্যে যে কিশোর বয়সে একবার তাঁকে ঘরের দরজা ভেঙে বের করেছেন তাঁর বাবা। স্কুলে পড়ার সময় সহপাঠীদের কটু কথা হরহামেশাই শুনতেন মাইলি। আর এতে তাঁর ভাষ্য, ‘একটা জঘন্য আর বিষণ্ণ কৈশোর’ কাটিয়েছেন তিনি। শৈশব থেকে টেলিভিশনের কাজের চাপ আর ঘড়ি ধরা নিয়মের মধ্যে বেড়ে ওঠার জন্য ছোটবেলা থেকেই বেশ বিষণ্নতা ভর করেছে তাঁর ওপর।
নিজের হতাশার কথা তো নিয়মিত টুইটারে ভক্তদের সঙ্গে শেয়ার করেন এই তারকা। মাইলির নানান পাগলামির খবর সংবাদমাধ্যমে দৃষ্টি কাড়লেও মনোবিদদের ভাষ্যে নিজের হতাশা আর বিষণ্নতাকে কাটানোর জন্যই এমনটা করেন তিনি। গেল কয়েক বছর মনোবিদদের পরামর্শে হতাশা আর একাকিত্ব কাটানোর জন্য পোষা কুকুরকে নিজের বন্ধু হিসেবে বেছে নিয়েছেন মাইলি।
‘নিজের চারপাশের নকল মানুষ আর তাদের নকল হাসি দেখতে দেখতে আমি বিরক্ত। নকল এই দুনিয়ায় কেউ কারও আপনজন নয়।’ নিজের প্রেম ভেঙে গেলে এমনটাই টুইট করেন এই তারকা।
চাপ নিতে পারেন লেডি গাগার
কৈশোরের সময়টা বেশ কঠিন কেটেছিল লেডি গাগার। সেই চাপটা এখনো মাঝেমধ্যে ফিরে আসে। চারপাশের মানুষের কটু কথা আর পরিবারের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে একটা অন্ধকার কৈশোর কেটেছিল গাগার। তাঁর ভাষ্যে, ‘সেই সময়টার কথা ভাবলে আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। এখনো ভয় লাগে।’ নিজের হতাশার সময়টা এখনো ফিরে আসার ভয় পান তিনি।
কনসার্ট কিংবা শো চলাকালীন হাজারো মানুষের ভিড়ে একা বোধ করেন এই তারকা। হতাশার মধ্যে নিজেকে ছোট ভাবতে শুরু করেন তিনি। হুট করে সবার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে অনেকবার। তাঁর ভাষ্য, ‘হতাশা আমাকে চারপাশ থেকে আঁকড়ে ধরে। সবকিছু অসহ্য মনে হয় তখন।’ দিন কয়েক নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে আবারও মঞ্চে ফিরে আসেন তিনি।
কালের আলো/এমকে