৫০ বছরে উন্নত-আধুনিক বিজিবি, সরকারের সহযোগিতায় লক্ষ্য পূরণের অঙ্গীকার ডিজির

প্রকাশিতঃ 6:08 am | December 17, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো :

২০২০ সালের রোববার (০৮ নভেম্বর) রাশিয়ার তৈরি দুটি অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার এমআই ১৭১ ই হেলিকপ্টার ‘বীর শ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ’ এবং ‘বীর শ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফ’ এর উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের ঐতিহ্যবাহী সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নদীমাতৃক দেশটির সীমান্ত প্রহরায় বাহিনীটিতে যোগ হয়েছে নৌযান। জলে, স্থলে এবং আকাশপথে সর্বত্রই বিজিবির সমান বিচরণ রয়েছে। স্মার্ট বর্ডার ম্যানেজমেন্ট বাস্তবায়নে সীমান্তে নতুন বিওপি, বিএসপি নির্মাণসহ অত্যাধুনিক সার্ভিল্যান্স ইক্যুপমেন্ট স্থাপন, এটিভি ও অত্যাধুনিক এপিসি, ভেহিকেল স্ক্যানার ও দ্রুতগামী জলযান সংযোজন বিজিবির অগ্রগতিরই ধারাবাহিকতা।

বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় আধুনিক ও শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে বিজিবি নিজেদের পথচলা অব্যাহত রেখেছে, সব সময়ই কৃতজ্ঞচিত্তেই উচ্চারণ করেন বাহিনীটির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মো.সাফিনুল ইসলাম। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের দিনেও বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) তিনি বলেছেন, ‘মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার ইপিআর আর এখনকার বিজিবি এক নয় মোটেও।

স্বাধীনতার ৫০ বছরের সময়কার বিজিবি গুণগতমান ও সরঞ্জামের দিক থেকে অনেক উন্নত এক বাহিনী। সামনের দিনগুলোতেও আমাদের আরও অনেক কিছুই অর্জনের রয়েছে। সরকারের সহযোগিতায় আমরা সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারবো, ইনশাআল্লাহ।’

এদিন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপে আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানে অভ্যস্ত বিজিবির বর্তমান সরকারের সময়ে অভূতপূর্ব উন্নতি ও অগ্রযাত্রার নানা দিক উপস্থাপন করেন ডিজি মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম। ধারাবাহিক কার্যক্রমের মাধ্যমেই বিজিবির সাফল্য এসেছে বলেও মনে করেন তিনি।

এই সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন, ‘বিজিবির সাফল্য একদিনের নয়। ধারাবাহিকভাবে বিজিবি বর্তমান অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। ২০০৯ সালের পরের বিজিবি আর এখনকার বিজিবির মধ্যে অনেক পার্থক্য।

২০০৯ সালের পর বর্তমান সরকার বিজিবি পুনর্গঠন করেছে। নতুন জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি আমাদের সঙ্গে সংযোজিত হয়েছে। আকাশপথে চলার জন্য হেলিকপ্টার সংযুক্ত হয়েছে। নৌ পথে আধুনিক নৌযান সংগ্রহ করেছি। দুর্গম অঞ্চলে চলাচলের জন্য বিশেষায়িত যানবাহন সংগ্রহ করেছি, কিনেছি এবং আমরা ব্যবহার করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালে বিজিবি দিবস প্যারেডের পর একটি অনুষ্ঠানে এই বাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে ঘোষণা করেছেন।’

‘মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতায়’ উদ্বুদ্ধ হয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ডিজি মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলামের দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বে সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন বাহিনীটির সদস্যরা। দেশের দীর্ঘ সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি চোরাচালান, নারী-শিশু পাচার বন্ধেও নিয়মিত কাজ করে চলেছেন তাঁরা।

এক প্রশ্নের উত্তরে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘বাংলাদেশের সীমান্ত ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। একেক জায়গায় একেক রকম সীমান্তের প্রকৃতি। আগে সীমান্তে বিওপি’র সংখ্যা কম ছিল। এখন ৭০৫ টি বিওপি’র মাধ্যমে সীমান্ত সুরক্ষা করছি। আমাদের এখন আরও বিওপি প্রয়োজন।

২০০ কিলোমিটারের মতো সীমান্ত বিশেষ পার্বত্য চট্টগ্রামে অরক্ষিত রয়ে গেছে। নতুন নতুন বিওপি সৃষ্টির মাধ্যমে এগুলোকে সুরক্ষিত করতে চাই। সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। সীমান্ত সড়ক হয়ে গেলে নতুন বিওপির মাধ্যমে আমরা আমাদের অরক্ষিত সীমান্তগুলো আর সুরক্ষিত করতে পারবো।

তখন পার্বত্য চট্টগ্রাম সীমান্তে আমাদের কার্যক্রমে অনেক সুবিধা হবে। সমতল অঞ্চলেও আমাদের একটি বিওপির বিপরীতে প্রতিপক্ষের দু’টি বা তার চেয়েও বেশি বিওপি বিদ্যমান। সমতল ভূমিতে আমরা যদি বিওপির’ ঘনত্ব আরও বাড়াতে পারি তাহলে সীমান্ত রক্ষার কাজ আরও ভালো হবে। আমরা আরও সুন্দরভাবে করতে পারবো’-যোগ করেন ডিজি।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিজিবির দিনব্যাপী কর্মসূচি
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্যে দিয়ে উদযাপন করেছে বিজয়ের ৫০ বছর। বিজিবি সদর দপ্তরসহ সকল রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটসমূহে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।

সকাল ০৬ টা ১০ মিনিটে বিজিবি সদর দপ্তরসহ অন্যান্য সকল ইউনিটে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে যখন সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করছেন তখন সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম।

সকাল ০৮ টা ৪৫ মিনিটে বিজিবি মহাপরিচালক মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের শ্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পিলখানাস্থ ‘সীমান্ত গৌরব’-এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বিজিবি’র একটি সুসজ্জিত দল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গার্ড অব অনার প্রদান করে।

এছাড়া পিলখানাস্থ সকল মসজিদে এবং অন্যান্য সকল ইউনিটের মসজিদসমূহে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের আত্মার মাগফেরাত, জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি এবং বিজিবি’র উত্তরোত্তর অগ্রগতি ও একাত্মতা কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

দিবসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে বিজিবি সদর দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ ভবন/স্থাপনা ও গেইটসমূহে এবং সারাদেশে বিজিবি’র সকল ইউনিটের স্থাপনা ও গেইটসমূহে আলোকসজ্জা করা হয়।

এছাড়া সারাদেশে বিজিবি’র সকল ইউনিটে প্রীতিভোজের আয়োজন এবং বিজিবি সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গ এবং বিজিবি স্কুল ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় বিজিবি বাদক দল বাদ্য পরিবেশন করে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ভাতৃত্ববোধ সম্প্রসারণের পাশাপাশি দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিরাজমান পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ও আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিকেলে বেনাপোল-পেট্রাপোল, আখাউড়া-আগরতলা এবং বাংলাবান্ধা ফুলবাড়ী সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফের যৌথ রিট্রিট সেরেমনি ড্রিল অনুষ্ঠিত হয়।

‘বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ’ উপলক্ষ্যে বিকেল সাড়ে ৪ টায় জাতীয় সংসদ ভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর পরিচালনায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে পিলখানায় বিজিবি মহাপরিচালক, সদর দপ্তর বিজিবি’র সকল কর্মকর্তা, জুনিয়র কর্মকর্তা, অন্যান্য পদবীর বিজিবি সদস্য ও অসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবং সারাদেশে বিজিবি’র সকল রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর, ব্যাটালিয়ন ও বিওপি পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা, জুনিয়র কর্মকর্তা, অন্যান্য পদবীর বিজিবি সদস্য ও অসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।

বিজিবি সদর দপ্তর সূত্র জানায়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের এই শপথ আগামীতে দেশগঠনে বিজিবি’র প্রতি সদস্যকে আরও অনুপ্রেরণা জোগাবে। এই শপথ গ্রহণের মাধ্যমে বিজিবির প্রতিটি সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নতুন করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন।

কালের আলো/এসআর/এসএইচএল